ঈদের ছুটির চার দিনে দেশের ১০টি বড় সরকারি হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আহত হন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের করা গত বছরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ঈদুল আজহায় সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল মোটরসাইকেল; ৫১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এবার মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা প্রায় সমান।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গত কোরবানির ঈদের প্রতিবেদনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কোনো হিসাব ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবার ঈদে কয়েকটি হাসপাতাল তাদের রোগী নিবন্ধন খাতায় দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে অটোরিকশার তথ্যও সংরক্ষণ করে।
ঈদের ছুটির চার দিনে (৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল) রাজধানীর দুটি এবং ঢাকার বাইরে আট বিভাগীয় শহরের বিশেষায়িত আটটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে সমকাল। তাতে এই পরিসংখ্যান উঠে আসে। এতে দেখা যায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ, অটোরিকশায় ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ, চার চাকার যানে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। হাসপাতালে আসা ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ আহত রোগীর দুর্ঘটনার কারণ নিবন্ধন খাতায় উল্লেখ করা হয়নি। 

এই ১০টি হাসপাতাল হলো– জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সমকালের প্রতিনিধিরা এসব হাসপাতাল থেকে চার দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করেন। 

প্রাপ্ত তথ্য জানিয়ে মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো.

হাদিউজ্জামান বলেন, ঈদের ছুটিতে নয়, এখন মূল সড়কগুলোতে অধিকাংশ সময়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে দেখা যায়। এতে সড়কে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব বাহন নিয়ন্ত্রণে না আনলে দুর্ঘটনার হার আরও বাড়বে।
সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালের রোগী নিবন্ধন খাতার তথ্য বলছে, দেশের ১০ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঈদের আগের দিন থেকে টানা চার দিনে মোট ১ হাজার ১৩৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন (৩২ দশমিক ২৭), ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজি দুর্ঘটনায় ৩৬৫ (৩২ দশমিক ১০ শতাংশ) জন আহত হন। বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মতো চার চাকার যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হন ১১৫ জন। তবে চিকিৎসা নেওয়া ২৯০ জনের আহত হওয়ার কারণ লেখেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সরওয়ার সমকালকে বলেন, এবার ঈদে ঢাকা মহানগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বেশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মামলা করার সুযোগ না থাকায় একটু বেগ পেতে হচ্ছে। প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়ন হলে সড়কে রিকশা কমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

এবার ঈদের পর এখনও কোনো সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রাথমিক তথ্য বলছে, এবার ঈদে দুই শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, ঈদের ছুটিতে নগরীর মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছুটে চলায় অন্য যানবাহনের জন্যও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এসব রিকশার কাঠামো এর গতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে রাস্তায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনা বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে তা আসে না। এমনকি জেলা পর্যায়ে সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুর তথ্যও গণমাধ্যমে আসে না। সড়ক দুর্ঘটনার সব তথ্য গণমাধ্যমে এলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যেত। 

পঙ্গু হাসপাতালে আহতের ভিড়, ৮০ ভাগ ঢাকার বাইরের
ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনা আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪১২ জন। নিবন্ধন খাতার তথ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় ২৭১ এবং মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪১ জন আহত হয়ে হাসপাতালে আসেন। 

গত বৃহস্পতিবার পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনের ভিড়। বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও হামলায় আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে আসছেন স্বজনরা। তাদেরই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। 
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন ২৩ বছরের রিমন হোসেন। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ভূলতা এলাকায় অটোরিকশা দিয়ে যাচ্ছিলাম। উল্টোদিক থেকে আসা প্রাইভেটকার ধাক্কা দিলে অটোরিকশা উল্টে গুরুতর আহত হই। এক পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। শরীরের নানা জায়গায় জখম হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওপরওয়ালা রক্ষা করেছেন। নইলে বাঁচার কথা না। এখনও ঘোরের মধ্যে আছি।’ 

ক্যাজুয়ালটি ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিছানায় কাতরাচ্ছেন আরিফ হোসেন। তাঁর ডান পাজুড়ে ব্যান্ডেজ। পাশে বসা স্ত্রী মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আরিফ হোসেন জানান, সাভার এলাকায় গার্মেন্টে চাকরি করেন। মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি বরিশালের পাথরঘাটা গিয়েছিলেন। সেখানেই ঈদের দিন সোমবার সন্ধ্যায় ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনা ঘটে। পায়ে আঘাত নিয়ে ওই দিনই তাঁকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন দিন হয়ে গেছে অস্ত্রোপচার করা হয়নি।
আরিফ হোসেন বলেন, ‘এরই মধ্যে ১০ হাজার টাকা ধার করেছি। কবে কাজে ফিরব, আদৌ ফিরতে পারব কিনা, জানি না। চিকিৎসা কীভাবে চলবে, পরিবার কীভাবে চলবে, সে চিন্তায় অস্থির লাগছে।’
পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান বলেন, এবার অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে বেশি আহত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এখানে আসা সেবাপ্রার্থীদের ৮০ শতাংশ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। গত চার দিনে ২৫১টি অস্ত্রোপচার হয়েছে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৩ আহত চিকিৎসাধীন 
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসা নেওয়া রোগীর তথ্য আলাদাভাবে লেখা হয় না। যারা ভর্তি হন, তাদের তথ্য নিবন্ধন খাতায় লিখে রাখা হয়। ওই তথ্য বলছে, হাসপাতালটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ওই চার দিনে ভর্তি হয়েছেন ৫৩ জন। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশায় আহত ২৪, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত ১৯ ও বাস দুর্ঘটনায় আহত ১০ জন। হাসপাতালের তিনটি বিভাগে এদের চিকিৎসা চলছে। নিউরোসার্জারি বিভাগে ২৬, অর্থোপেডিক্সে ১৯ ও নাক কান গলা বিভাগে ৮ জন। 
হাসপাতালের পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, চিকিৎসাধীন সবাই ঢাকার বাইরের। অধিকাংশের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। রোগীর জটিলতা বিবেচনা করে অস্ত্রোপচারে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: ঈদের আগের দিনে সর্বোচ্চ আহত
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৬ জন চিকিৎসা নিতে আসেন ঈদের আগের দিনে। ঈদের দিন আসেন ১৬ জন। ঈদের পরের দিন আসেন ২২ জন। আহতের মধ্যে বেশির ভাগ মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, বাস ও ব্যাটারিচালিত রিকশার যাত্রী ছিলেন। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের যাত্রীও আছেন।
জরুরি বিভাগে কর্মরত একজন চিকিৎসক জানান, আহতের বড় অংশ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। গুরুতর আহতরা চিকিৎসাধীন। চট্টগ্রাম উত্তরের উপজেলাগুলোর তুলনায় দক্ষিণের উপজেলাগুলোয় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। আহতদের বেশির ভাগ মাথা, হাত, পা ও বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এই হাসপাতালে মোট ৭৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে আহত হওয়ার কারণ নিবন্ধন খাতায় লেখা হয়নি। শুধু সড়ক দুর্ঘটনা লেখা আছে। 

রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আটজনের মৃত্যু 
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঈদের চার দিনে কমপক্ষে ২০০ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। 
রামেক সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫০ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। ৩০ জন ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং ২০ জন চার চাকার যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হন। 
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আলভি সাদাত জানান, রাজশাহী শহর ছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ছিল। তিনি বলেন, ঈদের দিন অনেকেই আনন্দ করতে গিয়ে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালান।

খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ৫৭ জন অটোরিকশায় আহত
খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলা থেকে ৭৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৭ জন ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় আহত হন। এদের মধ্যে ৩ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। 
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন ১৭ জন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটি থাকলেও রোগীদের চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হয়নি।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: ৫৯ শতাংশ আহত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চার দিনে ৪৯ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নেন। এদের মধ্যে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহতদের সংখ্যা বেশি। কর্তব্যরত নার্সরা জানিয়েছেন, ২৯ জন মোটরসাইকেল ও ১৭ জন অটোরিকশায় আহত হয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হন। 
হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, এবার মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহত রোগীর সংখ্যা বেশি।

শেবাচিমে চিকিৎসাধীন ৮৬ জন 
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৮৬ জন চিকিৎসাধীন। এদের বড় একটি অংশ তিন চাকার বাহনে আহত হন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কীভাবে এরা আহত হয়েছে সে তথ্য নিবন্ধন না থাকায় উল্লেখ করেননি। 
শেবাচিমের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন দশম শ্রেণির ছাত্র সিয়ামের স্বজনরা জানান, তাদের বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরমাদ্দিতে। ঈদের পরদিন তিন বন্ধু মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হয়। গ্রামীণ সড়কে ইজিবাইকের সঙ্গে ধাক্কায় মোটরসাইকেল উল্টে সিয়ামের পা ভেঙে যায়।

ময়মনসিংহ মেডিকেলের ১৭ রোগী ঢাকায় 
ঈদের ছুটির চার দিনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে একটি অংশ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে। ১৭ রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে রোগীদের আহত হওয়ার কারণ উল্লেখ নেই নিবন্ধন খাতায়। 

শজিমেক হাসপাতাল: চিকিৎসাধীন ৫ জনের মৃত্যু
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে ৫ জন মারা যান। আহতদের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় ২৩ জন, মোটরসাইকেলে সাতজন ও চারজন বাস দুর্ঘটনায় আহত হন। 
শিবগঞ্জ উপজেলার লালদহ গ্রামের জিহাদুল ইসলাম জিহাদ বলেন, ঈদের আগের দিন বিকেলে একটি ইজিবাইকে করে তারা ৫ জন বগুড়া-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে কিচক যাচ্ছিলেন। পিরব এলাকায় পৌঁছার পর সামনের দিক থেকে আসা আলুবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিনিসহ চারজন গুরুতর আহত হন। 

রংপুর মেডিকেলে আহত রোগীর তথ্য অসম্পূর্ণ
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪০ জন। দুর্ঘটনার ধরন সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই নিবন্ধন খাতায়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক আদনান বলেন, আহতদের ক্ষেত্রে ভর্তি রেজিস্টারে শুধু ‘আরটিএ (রোড ট্রাফিক ইনজুরি বা সড়ক দুর্ঘটনা)’ লেখা হয়। 
এতে ভর্তিকৃতদের চিহ্নিত করা গেলেও দুর্ঘটনার ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, গত তিন মাসে ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজনের প্রাণহানিসহ আহত হয়েছেন ১৫ জন। মহাসড়কের ধারে হাট থাকায় এখানে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সমকালের প্রতিনিধিরা)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন সড়ক দ র ঘটন র জন র ম ত য ঈদ র ছ ট ত ন দ র ঘটন ঈদ র দ ন ত হয় ছ ন র রহম ন ও স এনজ চ ক ৎসক আহত র গ আহতদ র ন বন ধ এল ক য় ঈদ র প ন বল ন সমক ল র আহত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তায় বরাদ্দ আগামী অর্থবছরে আড়াই গুণ বেড়ে ৫৯৩ কোটি টাকা হচ্ছে। অর্থবছরের শুরু থেকেই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি এককালীন অর্থ এবং চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ খাতে বরাদ্দের বিষয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে শহীদ পরিবারের জন্য এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে মোট ২৪৮ কোটি টাকা, আহত ব্যক্তিদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা, অনুদান ও পুনর্বাসনে ৩৯০ কোটি টাকাসহ মোট ৬৩৯ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হয়। অর্থ বিভাগ জানায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাকি ৪০৫ কোটি টাকা আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেওয়া হবে। তবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় পরে জানায়, এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আগামী অর্থবছরে সর্বমোট ৫৯৩ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাড়তি বরাদ্দের এ প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমানে এককালীন কিছু নগদ অর্থ এবং চিকিৎসায় অনুদান দেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজেটে এর পাশাপাশি মাসিক সম্মানী ভাতা দেওয়া হবে। এসব কারণেই বাড়তি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কাজ এখনও শুরু হয়নি। তাদের চাকরি দেওয়ার পরিবর্তে অন্য কর্মসংস্থানের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ছাড়াও বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার আহত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে। পুনর্বাসনের কাজে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহতদের মাসিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাসিক সম্মানী ভাতা, এককালীন নগদ সহায়তা-সংক্রান্ত হওয়ায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার নীতিগত অনুমোদন প্রয়োজন। 

এতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত ও শহীদদের বিষয়ে সব ধরনের কাজ পরিচালনার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ অধিদপ্তর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করবে। 

অর্থ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গেজেটভুক্ত জুলাই শহীদ পরিবার ৮৩৪টি। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর ৮২৬ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে এককালীন সহায়তা দেওয়ার জন্য বাজেটে ৮২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আট পরিবারকে সমান হারে সহায়তা দিতে আরও ৮০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এসব পরিবারকে এককালীন আরও ২০ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এ জন্য নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ থাকছে ১৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। 

চলতি বাজেটে প্রায় ২০ হাজার আহত ছাত্র ও গণমানুষের এককালীন চিকিৎসা সহায়তা বাবদ অনুদান খাতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। নতুন বাজেটে এ খাতে আরও প্রায় ১৪০ কোটি টাকা রাখা হবে। চলতি বাজেটে শহীদ পরিবারের জন্য মাসিক সম্মানী ভাতা বাবদ কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ জন্য ৮৩৪ পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২০ কোটি টাকা। প্রতি পরিবারকে মাসিক দেওয়া হবে ২০ হাজার টাকা করে।

আহতদের জন্য মাসিক সম্মানী বাবদ কোনো অর্থ চলতি বাজেটে রাখা হয়নি। তবে আগামী বাজেটে এ খাতে মোট ১৫৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ৪৯৩ জনকে মাসিক সম্মানী দেওয়া হবে ২০ হাজার টাকা করে। যারা পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বা শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন, তাদের অতি গুরুতর বা ‘এ’ ক্যাটেগারি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ‘বি’ ক্যাটেগরির ৯০৮ জনকে দেওয়া হবে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে। একই সঙ্গে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে পাবেন ‘সি’ ক্যাটেগরির ১০ হাজার ৬৪৮ জন। 

এ ছাড়া ২ হাজার ৪১৬ জন আহতের ক্যাটেগরিভিত্তিক তালিকা না পাওয়ায় তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশকে এ ক্যাটেগরি বিবেচনায় এককালীন ৩ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে ৩৬ কোটি টাকা। বাকি অর্ধেক ‘বি’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় এককালীন ২ লাখ টাকা করে দেওয়ার জন্য ব্যয় হবে ২৪ কোটি টাকা। একইভাবে ‘এ’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা এবং ‘বি’ ক্যাটেগরি বিবেচনায় ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে ক্যাটেগরিবিহীন ২ হাজার ৪১৬ আহত যোদ্ধার জন্য আগামী বাজেটে ব্যয় হবে ১১১ কোটি টাকার কিছু বেশি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দরে অটো গাড়ি ও মিশুকের মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ আহত ৪ 
  • জুলাই শহীদের মেয়ের আত্মহত্যার দায় কার
  • শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে
  • মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়েছিল তিন বন্ধু, হারিয়ে গেল একজন 
  • সাতক্ষীরায় বাসচাপায় মা-ছেলে নিহত
  • আজমিরীগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক
  • আহতদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা সাজ্জাদ বললেন ‘ধর্মের আগে মানবতা’