Samakal:
2025-04-26@14:04:17 GMT

বাড়তি সুদের চাপে কৃষিঋণে পতন

Published: 5th, April 2025 GMT

বাড়তি সুদের চাপে কৃষিঋণে পতন

দেশীয় উৎপাদন উৎসাহিত করতে অনেক আগে থেকেই কৃষি এবং রপ্তানির জন্য ঋণের সুদহার কম ছিল। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার বেঁধে দিত। তবে গত বছরের মে মাস থেকে সব ধরনের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে কৃষিঋণের সুদ অনেক বেড়েছে। বাড়তি সুদের চাপে কৃষিঋণ বিতরণে পতন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কৃষিতে ব্যাংকগুলোর ২২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ কম। কৃষিঋণে এখন সুদহার ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। 
গত মে মাসের আগ পর্যন্ত সব সময়ই কৃষিঋণের সুদহার কম ছিল। এমনকি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ আরোপের সময়ও কৃষিতে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদহার ছিল। এখন পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হয়েছে। 

সাধারণভাবে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি কম হলেও আগের চেয়ে কমতে দেখা যায় না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বড় শিল্পসহ সব খাতে সামান্য হলেও ঋণ বেড়েছে। তবে দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার অন্যতম উপাদান কৃষিতে ঋণ বিতরণ কমে গেছে। অবশ্য তারল্য সংকটের কারণে বর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি কম। গত জানুয়ারি পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশে নেমেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে যা সর্বনিম্ন। কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। কৃষিঋণ বিতরণে এগিয়ে থাকা সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে ঈদের আগে বৈঠক হয়েছে। শিগগিরই বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, কৃষিঋণ বিতরণ কমার কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। এর অন্যতম হলো– বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের ঋণের বড় একটি অংশ ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠান ও এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। তবে গত মে মাসের সব ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষমতা ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে তাদের মার্জিন কমায় আগ্রহ কমেছে। তিনি বলেন, অবশ্য চলতি অর্থবছর প্রতিটি ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার অন্তত অর্ধেক নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করতে বলা হয়েছে। বাকি অর্ধেক এনজিও লিংকেজে বিতরণ করতে পারবে। বাস্তবতা হলো অনেক বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের কোনো সুযোগই নেই। আবার এনজিওগুলোও আগের মতো আগ্রহ না থাকায় কমে থাকতে পারে। এ ছাড়া আগের মতো যেনতেন কৃষিঋণ বিতরণের সুযোগ বন্ধ হয়েছে। আবার বেশির ভাগ ব্যাংকে তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ঋণ বিতরণ কমে থাকতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে ৩৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বছর শেষে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। গত অর্থবছর ৩৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩৭ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা বিতরণ হয়। কোনো ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে অনর্জিত অংশ এক বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ডে (বিবিএডিসিএফ) জমা রাখতে হয়। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো মাত্র ২ শতাংশ সুদ পায়। মূলত শাস্তি হিসেবেই ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনেক কম সুদে এ অর্থ রাখা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কৃষিতে ঋণ বিতরণ কমলেও চলতি অর্থবছর আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মোট ২৪ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদায় বেড়েছে ১ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত ফেব্রুয়ারি শেষে কৃষিঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই মাস শেষে যা ছিল ৫৫ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা।

আইএমএফের পরামর্শে ১৯৮৯ সালে সুদহার নির্ধারণের ক্ষমতা প্রথম ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে খাত ধরে ধরে সুদহার ঠিক করা হতো। বৈশ্বিক মন্দা পরবর্তী ২০০৯ সালে সুদহারের সীমা আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মন্দা-পরবর্তী ২০১১ সালের মার্চে তিনটি খাত ছাড়া সব ক্ষেত্রে সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়া হয়। এরপর সুদহার বাড়তে বাড়তে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশে উঠেছিল। ওই সময়ও প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণে সর্বোচ্চ সুদহারের সীমা ছিল ৭ শতাংশ। কৃষি ও মেয়াদি শিল্পঋণে ১৩ শতাংশ এবং চাল, গম, ভোজ্যতেল, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর ও চিনি আমদানি অর্থায়নে সর্বোচ্চ সীমা ছিল ১২ শতাংশ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঋণ ক ষ ঋণ ব তরণ ঋণ ব তরণ র ঋণ র স দ ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশে ভোটের সময় নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে পারে

সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতানৈক্য; তাতে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। পুলিশ বাহিনী পুরোপুরি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাবে। এসব কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও ব্যাহত হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে নির্বাচন এবং রাজনীতি নিয়ে শঙ্কার কথা বলা হয়েছে। 

গত বুধবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। নীতিগত অনিশ্চয়তা ও উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগে তেমন গতি আসার সম্ভাবনা নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে রাজনীতি প্রসঙ্গে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর্থিক খাতের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ধীরগতি ও মূল্যস্ফীতির চাপ অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে। এতে আরও বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফেরানোসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অনেকগুলো কমিশন, কমিটি ও টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। প্রস্তাবিত অনেক সংস্কার এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনও তেমন উন্নতি হয়নি। এ বছরের ডিসেম্বর এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের ঘোষণার পরও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। 

বিশ্বব্যাংক মনে করে, কিছু কিছু খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে। সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, সরকারি ও করপোরেট খাতে সুশাসন আরও সুসংহত করা। তৃতীয়ত, দেশে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের যে চাহিদা, তা মেটাতে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বিকল্প নেই। 
তারা মনে করছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ছিল মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এই রাজস্ব দিয়ে দেশের প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। চতুর্থত, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা নিয়ে কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক। তারা বলেছে, দেশে আর্থিক খাত যেভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে, তাতে জরুরি ভিত্তিতে এই খাতের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা দরকার। 
ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর এই বাণিজ্যনীতির প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তেমন একটা পড়বে না। আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পুরোপুরি অনুভূত হবে। সংস্থাটি বলেছে, প্রভাব ঠিক কতটা পড়বে, তা এখনই সুনির্দিষ্ট হয়ে বলা যাবে না। কারণ, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ও নীতি ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। সেই অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেও তাদের হিসাব, বৈশ্বিক এই বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১ দশমিক ৭ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে কমবে। 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের কোন ফুলের মধুর কত দাম
  • দেশি বিনিয়োগেই বেশি কর্মসংস্থান, তবু কেন বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে বেশি উৎসাহ
  • জায়গাসংকটে পাশে নয়, উচ্চতায় বড় হচ্ছে সিইপিজেড
  • বাংলাদেশে ভোটের সময় নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে পারে
  • চলতি বছর বাংলাদেশে আরো ৩০ লাখ মানুষ দরিদ্র হতে পারে: বিশ্বব্যাংক
  • নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলের মতের অমিল হলে উত্তেজনা বাড়বে: বিশ্বব্যাংক
  • দেশে ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হতে পারে
  • বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশ হতে পারে: বিশ্বব্যাংক
  • রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে
  • বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৩ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক