তাসমিত আফিয়াত আর্নি। ২২ মার্চ উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্লগ আনোকি মিডিয়া প্রভাবশালী চার মার্কিন-দক্ষিণ এশীয় ফ্যাশন ডিজাইনারের নাম প্রকাশ করে। তাতে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে উঠে আসে তরুণ এই ফ্যাশন ডিজাইনারের নাম। গত ২৫ মার্চ এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে নতুন জার্সি পরে ভারতের বিপক্ষে লড়ে বাংলাদেশ ফুটবল দল। এর নকশাকারও আর্নি। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘মিস ইউনিভার্স’-এ রিকশা, বর্ণমালা, মঙ্গল শোভাযাত্রার মুখোশ, জামদানিসহ দেশীয় নানা উপাদানে পোশাকের নকশা করে প্রশংসায় ভাসা এই তরুণ এসেছেন সমকালে। শুনিয়েছেন তাঁর স্বপ্নের কথা। লিখেছেন আশিক মুস্তাফা
২২ মার্চ উত্তর আমেরিকার একটি ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল প্ল্যাটফর্ম আনোকি মিডিয়া আমেরিকান-সাউথ এশিয়ান প্রভাবশালী ফ্যাশন ডিজাইনারদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। তাদের লক্ষ্য ছিল, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিভাবান নারী ডিজাইনার, যারা বিশ্ব ফ্যাশনে প্রভাব ফেলছেন, তাদের খুঁজে বের করা এবং তাদের সংগ্রামের গল্প তুলে ধরা। সেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন আর্নি। অন্যদের মধ্যে দু’জন ভারতের ও একজন শ্রীলঙ্কার। ২০২৪ সালে তরুণ এই ডিজাইনার অংশ নিয়েছিলেন সাংঘাই ফ্যাশন উইকে। এবার আমন্ত্রণ পেয়েছেন মায়ামি ফ্যাশন উইকে। আনোকি মিডিয়ার প্রভাবশালী ডিজাইনার হওয়া ছাড়াও তাঁর সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে আরেকটি বিশেষ পালক। তিনি এবার বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি ডিজাইন করেছেন। এই জার্সি পরে গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ দল ভারতের শিলংয়ে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে অংশ নেয়।
নতুন জার্সি ও বাফুফের অফিশিয়াল ডিজাইনার
বাংলাদেশ ফুটবল দলের অফিশিয়াল নতুন জার্সিতে মুগ্ধ দেশ। এই জার্সির নকশা করেছেন তাসমিত আফিয়াত আর্নি; তাতে উজ্জ্বল লালে জলের গল্প ছড়ানো। জার্সি সম্পর্কে জানতে চাইলে আর্নি বলেন, ‘লাল আর সবুজে বেশ কয়েকটি দেশের জার্সি ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। এর কারণ, কয়েকটি দেশের পতাকাতে বিশেষভাবে স্পষ্ট হয়েছে এই দুই রং। বিশাল মাঠে যখন খেলা হয়, তখন দূর থেকে সবার পক্ষে পার্থক্য করা সম্ভব হয় না। খেলা উপভোগ তখন খানিকটা কঠিন হয়ে পড়ে। এ বিষয় মাথায় রেখেছি পরিকল্পনার সময়ে। পতাকার লাল সূর্য থেকেই প্রাণিত লাল রং। আবার একই সঙ্গে আমাদের মানচিত্রে চোখ রাখলে নদীতে চোখ আটকে যায় মুহূর্তেই। নদীমাতৃক দেশের পরিচয় পাওয়া যায় এখানেই। বাংলাদেশের মানচিত্র দেখে সেই অনুযায়ী মোটিফেই আমি তুলে এনেছি জার্সির ক্যানভাসে। আর দুই হাতায় আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা থেকে মোটিফ খুঁজে এনেছি। শাপলার কলি আর পাপড়ি থেকে খুঁজে নিয়েছি ডায়মন্ড শেইপ নকশা। জ্যামিতিক মোটিফের প্রতি ছেলেদের জোর আগ্রহ আছে বলে আমার মনে হয়েছে। সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এটি এ দেশের ছেলেদের ফুটবল দলের জন্যে তৈরি।’
এই জার্সির হাত ধরে আর্নি এখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বা বাফুফের অফিশিয়াল ডিজাইনার। তিনি বাংলাদেশের নারী ও পুরুষের জাতীয় দলের জন্য জার্সি ডিজাইন করছেন।
যেসব উপাদানে ভর করে এগিয়ে চলা
জামদানি, নকশিকাঁথা, গামছা, খাদি, রাজশাহী সিল্কের মতো স্থানীয় উপাদান দিয়ে আর্নি তৈরি করেন তাঁর টেকসই ফ্যাশনের সংগ্রহ, যেখানে রিকশা পেইন্ট, মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো মোটিফও থাকে। কয়েক বছর আগে ‘স্ট্রাইড ফ্যাশন ওয়ার’ নামে একটি ফ্যাশন হাউস প্রতিষ্ঠা করেছেন আর্নি। সেই সূত্রে অনেকক’টি বিয়ের পোশাকের অর্ডার তিনি পান। বেশির ভাগ গ্রাহক ভারত কিংবা পাকিস্তানি পোশাকের আদলে নকশাকে গুরুত্ব দিত বলে জানালেন আর্নি। অনেকটা বাধ্য হয়ে সেই ডিজাইনে পোশাক বানিয়ে দিতেন। মনে মনে ভাবতেন, দেশীয় উপাদান দিয়ে আধুনিক এবং আকর্ষণীয় অনেক পোশাকের নকশা করা যায়, কিন্তু এই ঝুঁকিটা কেউ নিতে চাচ্ছিল না। শেষমেশ নিজে প্রচলিত সেই ধারণায় ধাক্কা দেবেন বলে ঠিক করলেন। ২০২২ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। বর আমেরিকান। সেখানে নিজের বিয়ে, গায়ে হলুদ আর সংবর্ধনার সব পোশাকের নকশা নিজেই করেছেন রিকশা, জামদানির মতো দেশীয় মোটিফে। বাহবাও পেয়েছিলেন। পরে অনেকে দেশীয় মোটিফে বিয়ের পোশাকের নকশা করিয়েছেন তাঁকে দিয়ে। আর্নি বললেন, ‘সুন্দর ডিজাইন করে পোশাক বিক্রি করা অনেক সহজ, কিন্তু তরুণ-তরুণীরা পোশাক পরতে গিয়ে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়, সেগুলোর সমাধান করে পোশাকের নকশা করা একটু কঠিন। সে কাজটি করি আমি। স্ট্রাইড মূলত লাক্সারিয়াস সাসটেইনেবল ফ্যাশনে মনোযোগী।’
মায়ামি ফ্যাশন উইকের রানওয়েতে…
দেশের উদীয়মান এই ফ্যাশন ডিজাইনারের পোশাক রানওয়ে মাতাতে যাচ্ছে মায়ামি ফ্যাশন উইকে। মায়ামি ফ্যাশন উইক সম্পর্কে জানতে চাইলে আর্নি বলেন, ‘মূলত এই ফ্যাশন উইকের দুটি কিউতে থাকছে আমার কালকেশন। এসব পোশাক পরে রানওয়েতে হাঁটবেন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মডেলরা। দুই দেশ থেকে দুটি দল যাবে মায়ামিতে। একটি কিউতে থাকবে সমাজের সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নকশা করা পোশাক। দ্বিতীয় কিউতে থাকছে জামদানি দিয়ে তৈরি ওয়েডিং কালেকশন। আমাদের দেশে ধর্ষণের শিকার কেবল নারী একা হন না। অন্য লিঙ্গের মানুষেরাও ভুক্তভোগী। আমার সংগ্রহে এ বিষয়টি তুলে ধরা হবে পোশাকে সচেতনতামূলক বার্তার মাধ্যমে।
ডিজাইনে প্রতিবাদের ভাষা
গত জানুয়ারির আর্কা ফ্যাশন উইকেও দেখা গেছে আর্নির দুই থিমের সংগ্রহ। সেখানে নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের পাশাপাশি জায়গা করে নেয় জুলাই বিপ্লবের স্লোগান ও হ্যাশট্যাগ প্রাণিত পোশাক। আর্কা ফ্যাশন উইকে থিম ছিল ‘সোসাইটাল সাইলেন্সিং’। আর্নি বলেন, ‘কেবল মায়ামি ফ্যাশন উইকেই নয়; পোশাককে প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তুলে ধরেছি। এই কাজ আমি একা করি যে তা কিন্তু না; বিশ্বের অনেক আলোচিত ডিজাইনার এর ব্যবহার করেছেন। আমিও আছি সেই মিছিলে। আসলে আমি সব সময় চেয়েছি, আমার ডিজাইন হয়ে উঠবে প্রতিবাদের ভাষা। সমাজের যেসব নেতিবাচক বিষয় নিয়ে সচরাচর মানুষ কথা বলে না কিংবা বলতে ভয় পায়, আমি সেসব বিষয়কেই আমার নকশায় তুলে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার পোশাকে উঠে এসেছে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।’
আগামীর স্বপ্ন
আগামীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তরুণ এই ডিজাইনার বলেন, ‘রিকশা পেইন্ট, জামদানি, মঙ্গল শোভাযাত্রার মুখোশ–এগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে আরও ব্যাপকভাবে কাজ করতে চাই। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় অনুষ্ঠিত মিস ইউনিভার্সের আসরে শিরিন শিলা দেখা দিয়েছিলেন আমার নকশা করা শাড়ি, রিকশার হুড আর বর্ণমালার গহনায়। ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনালসহ অনেক দেশেই প্রশংসিত হয় আমার নকশা করা লাল জামদানিতে তৈরি গাউনশাড়ি, তালপাতা থেকে অনুপ্রাণিত সোনালি মুকুট, মঙ্গল শোভাযাত্রার নানা উপকরণের আঙ্গিকে তৈরি বেল্ট আর গহনা। ছিল সবুজ পাখা আর সবুজ রেশমি চুড়ি। মাস কয়েক আগে বিখ্যাত ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন উইক-সাংহাই-এ অংশ নিয়েছি। সেখানে ৯০টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র নারী ডিজাইনার ছিলাম আমি। সাংহাইয়ে উপস্থাপিত আমার সংগ্রহের একটি বড় অংশের উপজীব্য ছিল জুলাই আন্দোলন। পরে অংশ নিয়েছি কাতার ফ্যাশন উইকে। আসলে আমি সবসময় বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। এখনও করছি এবং আগামীতেও করে যেতে চাই। এটিই আমার স্বপ্ন।’ আমরাও তার সেই স্বপ্নের প্রত্যাশায়!
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প শ ক র নকশ ফ টবল দল কর ছ ন জ মদ ন উপ দ ন আম র ক
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরি, পদ সংখ্যা ৩৩
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাজস্বখাতভুক্ত শূন্য পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ছয়টি শূন্য পদে বিভিন্ন গ্রেডে ৩৩ জনকে নিয়োগের লক্ষ্যে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ১৬ এপ্রিল থেকে আবেদন শুরু হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
পদের নাম ও বিবরণ—
১. পদের নাম: সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর
পদসংখ্যা: ৩টি
গ্রেড: ১৩
বেতনস্কেল: ১১,০০০-২৬,৫৯০ টাকা
শিক্ষাগত যোগ্যতা: যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি
২. পদের নাম: ক্যাশিয়ার
পদসংখ্যা: ১টি
গ্রেড: ১৪
বেতনস্কেল: ১০,২০০-২৪,৬৮০ টাকা
শিক্ষাগত যোগ্যতা: যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি
৩. পদের নাম: লাইব্রেরি অ্যাসিস্ট্যান্ট
পদসংখ্যা: ১টি
গ্রেড: ১৫
বেতনস্কেল: ৯,৭০০-২৩,৪৯০ টাকা
শিক্ষাগত যোগ্যতা: যেকোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে অন্যূন দ্বিতীয় বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
৪. পদের নাম: অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক
পদসংখ্যা: ৫টি
গ্রেড: ১৬
বেতনস্কেল: ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা
শিক্ষাগত যোগ্যতা: যেকোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
৫. পদের নাম: অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক (হিসাবকোষের জন্য)
পদসংখ্যা: ১টি
গ্রেড: ১৬
বেতনস্কেল: ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা
শিক্ষাগত যোগ্যতা: যেকোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
৬. পদের নাম: অফিস সহায়ক
পদসংখ্যা: ২২টি
গ্রেড: ১৬
বেতনস্কেল: ৮,২৫০-২০,০১০ টাকা
শিক্ষাগত যোগ্যতা: যেকোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এসএসসি) বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
আবেদন ফি
১–৫ নম্বর পদের জন্য আবেদন ফি ১১২ টাকা এবং ৬ নম্বর পদের জন্য আবেদন ফি ৫৬ টাকা।
আবেদন যেভাবে
আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদন করতে ও আবেদনের বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আবেদনের শেষ সময়
আগামী ৩০ এপ্রিল ২০২৫, বিকেল ৫টা