চকরিয়া উপজেলার পহরচাঁদা গ্রামের সবুজপাড়ার মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে মো. আবদুল আজিজ। ছোটবেলা থেকেই বখাটে স্বভাবের এই ছেলে গ্রামে ‘মদদী আজিজ’ নামে পরিচিত। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পহরচাঁদায় আওয়ামী লীগ নেতা সিআইপি সালাহউদ্দিনের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় হামলা হয়েছিল সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এপিএস সালাহউদ্দিন আহমেদের ওপর। সেই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিল এই আজিজ।
শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে নেতৃত্ব দিয়েছে মো.
প্রসঙ্গত, এর আগেও সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও হামলার ঘটনায় মো. আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সে একাধিকবার জেলে ছিল সে। ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর পহরচাঁদার সবুজপাড়ার বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিনের পরিবারের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসী আজিজ ও তার বাহিনী। এ সময় জসিমের ভাই ইসমাইলকে ধারালো কিরিচ দিয়ে আঘাত করে জসিম। এতে ইসমাইলের হাত কেটে যায়। এই ঘটনায় জসিম উদ্দিন চকরিয়া থানায় আজিজসহ ৪ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ২০২২ সালে স্থানীয় বাতাসী বেগম নামে এক নারীকে হত্যার চেষ্টা করে আজিজ। এ ঘটনায়ও মামলা হয়।
বর্তমানে আজিজের স্ত্রী ইয়াবা ব্যবসায়ী জুলেখা বেগম ও তাদের বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষক ছাবের মাহমুদের পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এ ঘটনায় গত ৪ এপ্রিল শিক্ষক ছাবেরের ছেলে মো. তুশিন চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর ১৭০) দায়ের করে।
ছাবের মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, ‘এই আজিজ আসলে কেমন মানুষ সেটা আমার বলার দরকার নেই, পহরচাঁদা গ্রামের যে কোনো মানুষকে জিজ্ঞাসা করলে সেটা জানা যাবে। আজিজ যে নিজের বাড়িতে মাদক ব্যবসা করে, কথায় কথায় পাড়া-প্রতিবেশীর ওপর হামলা করে সেটা গ্রামের সবাই জানে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামলার শিকার হলাম আমরা, এ ঘটনায় আমি থানায় মামলা করেছি, পুলিশ আজিজকে গ্রেপ্তার করেছে। আজিজের স্ত্রী জুলেখা বেগম উল্টো থানায় আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার চেষ্টা করলেও অভিযোগের সত্যতা না থাকায় থানা তা গ্রহণ করেনি। অথচ ঘটনার এক সপ্তাহ পর গত ২৩ মার্চ আজিজের স্ত্রী আদালতে আমার ও আমার সন্তানদের নামে একটি মিথ্যা ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছে। আমার মেয়ে আনিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্রী। মেজো ছেলে মো. আকিব চট্টগ্রাম কলেজে ইংরেজিতে অনার্স করছে। ঘটনার সময় আকিব চট্টগ্রামে অবস্থান করলেও তাকেও আসামি করা হয়েছে। আমার ভাইপো সোনা মিয়ার বাড়ি আমার থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। তাকেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করা হয়েছে। এখন আজিজের স্ত্রী জুলেখা বেগম টাকা দিয়ে মানুষ ভাড়া করে পুলিশের কাছে নিয়ে যাচ্ছে, আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী সাজাচ্ছে।’ এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘আসামি আজিজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার স্ত্রী আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। আজিজের স্ত্রী জুলেখা বেগমের আদালতে দায়ের করা ফৌজদারি অভিযোগ তদন্ত করে মিথ্যা প্রমাণিত হলে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া
হবে।’ স্থানীয় একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আজিজ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মদ খেয়ে সলিডারিটি মাদ্রাসার ছাত্রীদের সঙ্গে প্রায় অশোভন আচরণ করে। সন্ধ্যার পর গাঁজার দুর্গন্ধে আজিজের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। সন্ধ্যার পর তার বাড়িতে মাদক সেবন করে স্থানীয় বখাটেরা।’
গত ২ এপ্রিল দুপুর ১২টায় সন্ত্রাসী আজিজের স্ত্রী জুলেখা বেগমের করা অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়েছিলেন হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মাহবুবুল আলম। তখন আজিজের প্রতিবেশী মো. বাবুল হারবাং ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মাহবুবুল আলমের উদ্দেশে অনুনয় করে বলেন, ‘স্যার, শুধু শিক্ষক ছাবের আহমেদের পরিবার নয়, আজিজের অত্যাচারে আমরাও অতিষ্ঠ। তার অত্যাচার থেকে আমাদের বাঁচান। সে মদ খেয়ে দিনরাত পাড়াপ্রতিবেশীকে গালি দেয়, কেউ কিছু বললে দা–কিরিচ ও অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। অনেক সময় অকারণে মানুষের ঘরে ঢুকে পড়ে, নারীদের সাথেও অশোভন আচরণ করে, ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।’
শিক্ষক ছাবের মাহমুদ চিশতীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আজিজের স্ত্রী জুলেখা বেগমের ফৌজদারি অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় ৮ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) শওকত ওসমান লিখিত জবানবন্দীতে বলনে, ‘গত ১৬ মার্চ মো. আব্দুল আজিজ মদ পান করে মাতাল হয়ে নিজেই তার স্ত্রী জুলেখা বেগমকে শারীরিকভাবে মারধর করে, স্ত্রীর পিঠে, হাতে ও মুখে আঘাত করে। ওই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে আজিজের স্ত্রীকে মাস্টার ছাবের আহমদ মারধর করেছে বলে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শিক্ষক ছাবের আহমেদের পরিবারকে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে মো. আজিজই মদ খেয়ে তার স্ত্রীকে আঘাত করেছে।’
এ ব্যাপারে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান বলেন, ‘পহরচাঁদার মো. আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে পাড়াপ্রতিবেশী ও শিক্ষক ছাবের মাহমুদ চিশতীর পরিবারের উপর হামলার অভিযোগের বিচার আমি আগেও করেছি, আমার মেম্বার শওকতও করেছে। আজিজ বিচারের সময় হাতেপায়ে ধরে আর অপরাধ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু পরে সে একই অপরাধ করে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আজ জ র স ত র আজ জ ও ত র র পর ব র আজ জ র ব মদ খ য় ব গম র সদস য র ওপর ঘটন য় চকর য়
এছাড়াও পড়ুন:
আসাদকে উদ্ধারে ইরানের পাঠানো বিমান রুখে দিয়েছিল ইসরায়েল: নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উদ্ধার করতে যাওয়া ইরানি বিমানগুলোকে বাধা দেয় ইসরায়েল। ফলে ইরানি উড়োজাহাজ আর দামেস্কে পৌঁছাতে পারেনি। আসাদকে সহায়তা করার জন্য সৈন্য পাঠাতে পারেনি ইরান।
গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের রাজধানী দামেস্ক দখলের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ফলে টানা ২৪ বছর ক্ষমতায় থাকা বাশার আল-আসাদ শাসনের অবসান হয়। এর আগে তার বাবা হাফিজ আল-আসাদ টানা ২৯ বছর সিরিয়া শাসন করেন। বাশার আল-আসাদের পালানোর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় ৫৩ বছরের আল-আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান হয়। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের
বাশার আল-আসাদ ও ইরান প্রসঙ্গে গতকাল রোববার রাতে কথা বলেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, তারা (ইরান) বাশার আল-আসাদকে উদ্ধার করতে চেয়েছিল। সিরিয়ার এই নেতাকে সহায়তার জন্য উড়োজাহাজ পাঠিয়েছিল ইরান। কিন্তু ইসরায়েল তা রুখে দেয়। সেদিন দামেস্কমুখী ইরানের কিছু উড়োজাহাজের দিকে বেশ কয়েকটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠায় ইসরায়েল। পরে ইরানি উড়োজাহাজগুলো ফিরে যায়।
এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য দেননি নেতানিয়াহু। ইরানের দিক থেকেও বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
আসাদকে নিরাপদে সিরিয়া থেকে সরিয়ে নিতে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর উড়োজাহাজ পাঠিয়েছিল আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। পরে সেই উড়োজাহাজে করেই তিনি মস্কোয় পালিয়ে যান।
পরবর্তী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, দামেস্ক ছেড়ে বাশার আল-আসাদ প্রথমে সিরিয়ার উপকূলীয় শহর লাতাকিয়ায় রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে যান। সেখান থেকে তাকে মস্কোয় উড়িয়ে নেওয়া হয়। আর মস্কোয় আগে থেকেই ছিলেন তার স্ত্রী আসমা আসাদ ও তাদের তিন সন্তান।