এবারের ঈদে টানা ৯ দিনের ছুটি ছিল। তাই বেড়ানোতেই ছিল ঈদের মূল আনন্দ। তবে সেই আনন্দে ছিল আক্ষেপ আর হতাশাও। নির্দিষ্ট কিছু বিনোদন কেন্দ্র লোকে-লোকারণ্য থাকলেও, শিশু-কিশোরদের বিনোদনে ছিল ঘাটতি। শিশু-কিশোরদের মূল আকর্ষণ থাকে শিশু-পার্ক ও থিম পার্কে। কিন্তু এবার চট্টগ্রামের শিশুদের আনন্দের প্রধান তিন পার্কই বন্ধ। কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক ভেঙে ফেলা হয়েছে, আগ্রাবাদ শিশুপার্ক ও ‘মিনি বাংলাদেশ’খ্যাত স্বাধীনতা কমপ্লেক্সেও ঝুলছে তালা। যেখানে রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর অবিকল ডামি। স্বাধীনতা কমপ্লেক্স বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজনকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।
তবে মানুষের ভিড় ছিল পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ড, জাতিসংঘ পার্ক, পতেঙ্গা প্রজাপতি পার্ক, আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠ, কর্ণফুলী নদীর অভয়মিত্র ঘাট, বায়েজিদ লিংক রোড, হালিশহর সাগর পাড় ছাড়াও সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সাগরপাড়, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, আনোয়ারায় পারকি সমুদ্রসৈকত, ফটিকছড়ির বিভিন্ন চা বাগানে।
দেখা হচ্ছে না ‘মিনি বাংলাদেশ’ : স্বাধীনতা কমপ্লেক্স পার্ককে বলা হয় ‘মিনি বাংলাদেশ’। কারণ এই পার্কে রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন, আহসান মঞ্জিল, সুপ্রিম কোর্ট, কৃত্রিম জলরাশি, কার্জন হল, কান্তজীর মন্দির, দরবার হল, বড়কুঠি, ছোটকুঠি, ছোট সোনামসজিদ, লালবাগ কেল্লা, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহিদ মিনার, সেন্ট নিকোলাস চার্চ, চিরন্তন পল্লীর হুবহু ডামি স্থাপনা। রয়েছে ট্রেনের নিচে সেতু, ছয়টি কিউচ (বসার স্টল), পাঁচটি পানির ফোয়ারা ও তিনটি কিডস জোন।
এ ছাড়া রয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে মিল রেখে ৭১ মিটার বা ২৩০ ফুট উচ্চতার স্বাধীনতা টাওয়ার। এই টাওয়ারে রয়েছে একটি রিভলভিং রেস্টুরেন্ট (ঘূর্ণায়মান রেস্তোরাঁ)। ২৩ তলা উচ্চতার এই রেস্তোরাঁ থেকে একনজরে পুরো চট্টগ্রাম শহর, কর্ণফুলী নদী এমনকি বঙ্গোপসাগরও দেখা যায়। ২০০৬ সালে এই পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন স্বাধীনতা কমপ্লেক্সে একসঙ্গে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো দেখতে ভিড় করেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে সেটা বন্ধ থাকায় এই ঈদে মিনি বাংলাদেশ দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন দর্শনার্থীরা।
ভেঙে ফেলা হয়েছে কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক : চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় ছিল একটি শিশুপার্ক। নগরীর মাঝামাঝিতে অবস্থিত এই পার্কে দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই থাকত। বেশ কিছুদিন আগে এটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। যে জায়গায় পার্কটি গড়ে তুলেছিল সিটি করপোরেশন, সেটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি। শর্তভঙ্গের কারণে ২০২৩ সালের অক্টোবরে পার্কটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে এটি উচ্ছেদ করে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হয়। এরপর জায়গাটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
বন্ধ আগ্রাবাদ শিশুপার্ক: নগরীর আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশুপার্কের জন্য ১৯৯১ সালে ৯ একর জমি ইজারা দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ২০০০ সালে পার্ক নির্মাণ করে আনন্দমেলা লিমিটেড। পার্কটির ব্যবস্থাপনায়ও ছিল প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৫ সালে শেষ হওয়ার কথা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ইজারা চুক্তি। তার আগেই গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এই পার্কেও তালা ঝুলছে। ভেতরের খালি জায়গায় ঘাস-আগাছা জন্মেছে। বিভিন্ন স্থানে চেয়ার-টেবিল বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পার্কে কর্মরত এক দারোয়ান জানিয়েছেন পরিচালনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
সাগর-সৈকতে মানুষের মিতালি : এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে। শিশু থেকে বৃদ্ধ– সব বয়সী মানুষ পানিতে গা ভাসিয়ে মেতেছেন ঈদের আনন্দ-উৎসবে। দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি আড্ডায় মেতে উঠেছেন তারা। কেউ সাগরপাড়ে হেঁটে বেড়িয়েছেন। কেউবা সাগরের নোনা জলে নেমে পড়েছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা-সময় বয়ে গেলেও ভিড় শেষ হয়নি।
বোয়ালখালী থেকে নতুন বউকে সঙ্গে নিয়ে সাগরপাড়ে আসেন সম্রাট। তিনি বলেন, ‘চাকরির কারণে খুব একটা বেড়ানোর সুযোগ হয় না। তবে এবার ঈদে লম্বা ছুটি পাওয়া গেছে। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যাচ্ছি। হাতের কাছে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। অথচ খুব একটা আসা হয় না। তাই এবার ঈদের ছুটিতে স্ত্রীকে নিয়ে সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে এলাম। হাজারো মানুষের ভিড়ে দারুণ আনন্দে সময়টাকে উপভোগ করছি।’
এদিকে বড় পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় মোতায়েন করা হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। দর্শনার্থীরা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন সে জন্য টহলও বাড়ানো হয়েছে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে দায়িত্বরত একজন ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার সৈকতে মানুষ ভিড় করছেন বেশি। দর্শনার্থীরা যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়েন সে জন্য বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে।
লোকারণ্য ফয়’স লেক ও চিড়িয়াখানা : চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ও ফয়’স লেকের অবস্থান পাশাপাশি। লোকজন ছুটিতে চিড়িয়াখানায় ঢু মারার পাশাপাশি ফয়’স লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। চিড়িয়াখানায় বাঘ থেকে শুরু করে সিংহ, বানর, হনুমান ও হরিণসহ বিভিন্ন পশুপাখি রয়েছে। এগুলোর প্রতি শিশু-কিশোরদের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি শিশুপার্কের পাহাড়ের মাঝখানে থাকা খেলনায় চড়ে আনন্দ উপভোগ করেছে শিশুরা।
কনকর্ড ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ডেও ভিড় জমে দর্শনার্থীদের। এখানে আসা দর্শনার্থীদের প্রথম পছন্দ মনোরম লেক ভ্রমণ। তরুণ প্রজন্মের পছন্দ ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ড। এখানে জল উৎসবে মেতে ওঠেন দর্শনার্থীরা। বেস ক্যাম্পে আর্চারি, ক্লাইম্বিং ওয়াল, ট্রি টপ অ্যাকটিভিটিতে মেতেছেন সবাই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কমপ ল ক স স ব ধ নত এই প র ক আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
চিত্রা নদীর পাড়ে রংতুলির উৎসবে ছবি আঁকল শিশুরা, দিনভর প্রদর্শনী
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের স্মৃতিবিজড়িত চিত্রা নদীর পাড়ে বসে একদল শিশু রংতুলি হাতে ফুটিয়ে তুলছে তাদের কল্পনার জগৎ। কারও তুলির টানে উদিত হচ্ছে লাল-কমলা সূর্য, কেউ আঁকছে নদীর বুকে পালতোলা নৌকা। আবার কেউ তুলে ধরছে সোনালি ধানের খেত, কৃষকের ঘামঝরা পরিশ্রম কিংবা গাঁয়ের সরল নিসর্গ। গ্রামবাংলার প্রকৃতির যেন কোনো রূপই বাদ পড়ছে না এই ছোট্ট শিল্পীদের ক্যানভাসে।
আজ শুক্রবার সকালে এই দৃশ্যের দেখা মেলে নড়াইল শহরের চিত্রা নদী পাড়ে অবস্থিত বাঁধাঘাটে। সেখানে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে তৈরি করা হয় একটি গ্যালারি, তাতে প্রদর্শিত হয় শিশুদের আঁকা নানা ছবি। ‘বৈশাখে রাঙিয়ে দাও বাংলাদেশ’ স্লোগানে এই আয়োজন করে স্থানীয় শিল্প সংগঠন চারুনীড়।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় অর্ধশতাধিক শিশু। মুক্ত পরিবেশে বসে আপনমনে ছবি আঁকেন তাঁরা। নিজের আঁকা ছবি প্রদর্শনীতে দেখে শিশুদের চোখেমুখে ফুটে ওঠে আনন্দের ঝিলিক।
ছবি আঁকা শেষে অনন্যা নামে এক শিশু প্রথম আলোকে বলে, ‘গাঁয়ের বধূরা ঘাট থেকে জল আনছে, ছোট ছেলেমেয়েরা নদীতে সাঁতার কাটছে, পাশ দিয়ে পালতোলা নৌকা যাচ্ছে, এমন একটি ছবি আমি এঁকেছি। প্রদর্শনীতে আমার আঁকা একটি ছবি আছে।’
আরেক শিশু প্রতিযোগী বলে, ‘আমার মতো অনেকে ছবি আঁকতে এসেছে। দেখে খুব ভালো লাগছে। সবাই সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকেছে, আমিও এঁকেছি।’
শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও প্রদর্শনী দেখতে আসেন অভিভাবক ও দর্শনার্থীরা। শিশুদের আঁকা ছবি দেখে উচ্ছ্বসিত তাঁরা। কিছু অভিভাবক ও দর্শনার্থী ছবিগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন, যেন প্রতিটি ছবির মধ্যে খুঁজে পাচ্ছিলেন একাত্মতা ও নতুন দৃষ্টি। একে অপরকে ছবির ভিন্নতা নিয়ে আলোচনা করছিলেন তাঁরা, যা প্রদর্শনীর এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।
শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে নড়াইল শহরের বাঁধাঘাট চত্বরে