ভারত ওয়াক্‌ফ সংশোধনী বিল পাসের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ওপর রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে বলে মনে করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপকে তারা অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং মানবতার সর্বজনীন অঙ্গীকারের লঙ্ঘন বলেও মনে করছে।

সংগঠনটি আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এই বিল পাসের প্রতিবাদ জানিয়ে এ কথা বলে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিগত ১০ বছর যাবৎ ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার নানাভাবে সংখ্যালঘু মুসলিম জাতিগোষ্ঠীকে দমন-পীড়ন করছে। ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে ভারতে বিজেপি এমন এক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে, যেখানে সংখ্যালঘু মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর পাশাপাশি অধিবাসী ও দলিত শ্রেণিগোষ্ঠীর মানুষকেও জাতিগত নিপীড়নের শিকার হতে হয়। এর মাধ্যমে বহু বৈচিত্র্যের ভারতকে একটি এককেন্দ্রিক বিমানবিকীকরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা একই সঙ্গে অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক ও মানবতার সর্বজনীন অঙ্গীকারসমূহকে লঙ্ঘন করে।’

ওয়াক্‌ফ বিল ভারতের অসংখ্য মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের আওতায় নিয়ে আসবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে ওয়াক্‌ফ বিল পাস হওয়ার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

সরকারসহ বাংলাদেশের সব সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনকে ভারতের মজলুম জাতিগোষ্ঠীর পক্ষে এবং এমন বিতর্কিত আইনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জৌলুস হারাচ্ছে ঐতিহাসিক ‘ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ’ 

প্রায় চারশ বছর আগে মুঘল আমলে নির্মিত হয় কুষ্টিয়ার ‘ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ’। অপূর্ব কারুকাজ থাকা ঐতিহাসিক এই নিদর্শন দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থী ছুটে আসেন। স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় দিনদিন সৌন্দর্য ও জৌলুস হারাতে বসেছে মসজিদটি।

ঐতিহাসিক এই মসজিদটি কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার মধ্যবর্তী ঝাউদিয়া গ্রামে অবস্থিত।

নির্মাণকালের সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও মসজিদটি ঘিরে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ আছে। ইতিহাস ঘেঁটে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে ইরাকের জমিদার শাহ সুফি আদানী ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আসেন। প্রায় চারশ বছর আগে ঝাউদিয়া গ্রামে তিনিই নির্মাণ করেন মসজিদটি। 

আরো পড়ুন:

আড়াইশ বছরের পুরোনো ১৩ গম্বুজ মসজিদ

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিরকুট, ‘পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়’

জনশ্রুতি আছে, অলৌকিকভাবে এক রাতেই মসজিদটি দৃশ্যমান হয়। মুঘল শিল্পকলার অপূর্ব নিদর্শন রয়েছে মসজিদটিতে। দেয়াল জুড়ে নিপুণ আল্পনা, কারুকার্যময় অপূর্ব শিল্পের ছোঁয়া আর পাথরের খোদাই বলে দেয় এটি মুঘল আমলের স্থাপত্য নিদর্শন।

সুদৃশ্য পাঁচটি গম্বুজ আছে ঝাউদিয়া শাহী মসজিদে। চার কোনায় আছে চারটি নান্দনিক মিনার। প্রবেশ দরজায় দুইটি মিনার আছে। যা সহজেই মানুষকে মুগ্ধ করে। ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ১৯৬৯ সালে মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত করা হয়। 

দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মসজিদ তার সৌন্দর্য ও জৌলুস হারাতে বসেছে। এ ছাড়া, ঝাউদিয়া গ্রামে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল বা আবাসন সুবিধা না থাকায় নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হয় দর্শনার্থীদের। 

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না হওয়ায় মসজিদটির এখন বেহাল দশা। দেখলে মনে হয় জরাজীর্ণ অবস্থা। তাছাড়া তিন কাতারের বেশি নামাজ পড়ার জায়গা নেই। অথচ মসজিদের সামনে-পেছনে অনেক জায়গা আছে। নতুন করে রংসহ মসজিদটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তারা।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “এই মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত হয়েছে। কারণ মোগল আমলে নির্মিত অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে এই মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে অনেক সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়। মুঘল স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করে ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ নির্মিত।”

তিনি আরো বলেন, “দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন। শুক্রবারগুলোতে এই মসজিদে প্রায় ৪-৫ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে আসেন।”

সেলিম উদ্দিন চৌধুরী নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “মসজিদের বাইরের সৌন্দর্য রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে কিছুটা ম্লান হলেও ভেতরে চোখ ধাঁধানো নকশার তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। বর্তমানে এ মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সম্পত্তি। সর্বশেষ ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে একবার মসজিদটির সংস্কার করা হয়।”

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থ প্রতীম শীল মসজিদটি সংস্কার না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এ ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত। তাই এর সংস্কার বা দেখভাল স্থানীয়ভাবে করা সম্ভব নয়। যে কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যাচ্ছে না।”

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ