হবিগঞ্জের তীব্র খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে চা বাগানে চা পাতা পুড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় চা গাছে মশা ও পোকা-মাকড় বাসা বাধছে। গাছগুলো রোদে পুড়ে মরে যাচ্ছে। এতে করে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন চা বাগানের মালিকপক্ষ। বাগানের এমন করুণ দশায় শ্রমিকরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন।

জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় ফাঁড়িসহ ৪১টি চা বাগান রয়েছে। এ সব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দুই লাখ। এরমধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৩২ হাজার শ্রমিক চা পাতা উত্তোলনে জড়িত। বাগানে কাজ না পেয়ে বাকিদের জীবিকার জন্য বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে হচ্ছে। বছরের মার্চ থেকে চা পাতার উৎপাদন শুরু হয়। চলে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। এখানে নতুন কুঁড়ি না আসায় গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চলতি বছর চায়ের উৎপাদন কমেছে। 

ভরা মৌসুমে গাছে নতুন কুঁড়ি না থাকায় কমে গেছে শ্রমিকের কাজ। শ্রমিকরা পাহাড়ের নিচু এলাকা থেকে কলসি দিয়ে পানি এনে গাছে নতুন কুঁড়ি গজানোর চেষ্টা করছেন। চোখে-মুখে স্বপ্ন নিয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছে বৃষ্টির আর নতুন কুঁড়ির আশায়।

আরো পড়ুন:

বৈরী আবহাওয়ায় চা শিল্পে সংকটের শঙ্কা

পাবনায় আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থীদের চাল বিতরণ

চলতি বছরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখনো চা বাগানে চা-পাতার কুঁড়ি বের হচ্ছে না। তীব্র রোদের কারণে চা বাগানে আশঙ্কাজনক হারে চা পাতার উৎপাদন কমেছে। প্রতিটি চা বাগানের ভেতরে থাকা ছোট-বড় লেক ও ছড়াগুলো শুকিয়ে গেছে। যে কারণে চা বাগানে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলায় মোট ৪১টি চা বাগানের আয়তন ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৩২৪ হেক্টর। প্রতি হেক্টর জমিতে ২০০ থেকে ২৫০ কেজি চা-পাতা উৎপাদন হয়। প্রতি বছর মার্চ মাস থেকে শুরু হয় চা-পাতা উত্তোলন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না। পানির জন্য অনেক শ্রমিক দূর-দূরান্ত থেকে পানি এনে খাচ্ছেন। এমনকি গোসল করতে তাদের যেতে হচ্ছে দূরের বস্তিতে। বাংলো ও স্টাফ কোয়ার্টারেও নেই পানি।

চুনারুঘাটে দেউন্দি চা বাগানের নারী চা শ্রমিক রঞ্জনা মাল বলেন, ‘‘প্রতি বছরে মার্চ মাস আসলে আমরা দিনভর চা-পাতার কুঁড়ি উত্তোলন করি কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়াতে চা-পাতার কুঁড়ি বের হচ্ছে না। যার কারণে আমাদের কাজ ও মজুরি কমে গেছে। আমরা গোসল ও খাওয়ার পানি পাচ্ছি না। চা-পাতা না তুললে বাগান কর্তৃপক্ষও মজুরি দিবে না।’’ 

মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগানের পার্বতী বাউরী বলেন, ‘‘বাগানে কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। এখন কেউ বাগানে কাজ না করে বাইরে বস্তি ও শহরে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু চা গাছে পাতা না আসলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে।’’ 

চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের ডেপুটি সহকারী ম্যানেজার দেবাশীষ রায় জানান,  দেউন্দি টি কোম্পানিসহ জেলার প্রতিটি চা বাগানে অনাবৃষ্টির কারণে চা উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারী হবে।

মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ আহমেদ জানান, গত ২০২৪ সালে তীব্র খরা ও শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে বাগানগুলোতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চা-পাতা উৎপাদন কম হয়। চলতি বছর বৃষ্টি না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। বিশাল বাগান কৃত্রিম পানি দিয়ে পোষানো সম্ভব নয়।

ঢাকা/মামুন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র নত ন ক

এছাড়াও পড়ুন:

আড়িয়াল বিলের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় চেষ্টা চলছে: উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি  উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘‘আড়িয়াল বিলের প্রাণবৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে খালখনন করা হবে এবং বিলের মাটিলুট বন্ধে আলমপুর সেতু পয়েন্টে সার্বক্ষণিক পুলিশ চেকপোস্ট থাকবে। সার্বক্ষণিক চেক পোস্টের জন্য ১২ জন অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যকে শ্রীনগর থানায় পদায়ন করা হবে।’’

শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়াল বিলে ধান কাটা ও মাড়াই কার্যক্রম পরিদর্শন ও বাড়ৈখালীর শ্রীধরপুর ধানখেতে মাড়াই কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, এটা আমার মায়ের জন্মস্থান। এটা আমার নানির বাড়ির এলাকা। এই এলাকার প্রতি আমার আলাদা একটা নাড়ির টান রয়ে গেছে। আর আদিলুর রহমান খান (উপদেষ্টা) ভাইয়ের বাড়ি তো এই শ্রীনগরে। এ জন্য আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব, ততটা করবো। আড়িয়াল বিলের একটা বৈচিত্র্য আছে। এটা যেন কোনো অবস্থায় নষ্ট না হয়, সেদিকে আমরা চেষ্টা করবে। এখানে ছোটখাট যত সমস্যা আছে, এটা আমার অবশ্যই সমাধান করবো।’’ 

আরো পড়ুন:

শীতে গরম পানিতে গোসল, অজান্তেই ডেকে আনছেন ক্ষতি

ভাত খেয়ে ওজন কমানোর উপায়

আড়িয়ল বিলের ভেকু ও অবৈধ মাটি কাটা বন্ধ করতে আলমপুর খালের প্রবেশমুখে পুলিশ পোস্ট স্থাপনসহ দুটি কৃষি হিমাগার চালু করা হবে বলে তিনি এ সময়ে সাংবাদিকদের জানান।

এ সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, বিল সুরক্ষায় ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিলের প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় সকলকে সচেতন থাকতে হবে। 

এই দুই উপদেষ্টা স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তারা স্থানীয় কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগের কথা শোনেন এবং সেগুলো দূরীকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

ধান মাড়াই কার্যক্রম ও কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আরো অংশ নেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম, কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া, জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত প্রমুখ।

ঢাকা/রতন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ