‘স্থানীয় নির্বাচনে আমূল সংস্কার প্রয়োজন’
Published: 5th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, “আগামী নির্বাচন ভালোভাবে সম্পন্ন করতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, ততটুকু সংস্কার শেষে আমরা একটি ভালো নির্বাচন চাই। এরপর যারা পার্লামেন্টে যাবেন, তারা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী অন্যান্য সংস্কার করবেন।”
তিনি বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। যারা সংসদ সদস্য হবেন, তাদের কাজ হবে আইন প্রণয়ন করা। উন্নয়নের কাজ করবে স্থানীয় সরকার। বর্তমানে সংসদ সদস্যের অনুমতি ছাড়া কোথাও কিছু করা যায় না। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে স্থানীয় সরকারকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সব এলাকায় সমান উন্নয়ন করতে হবে।”
শনিবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে শরীয়তপুর পৌরসভা মিলনায়তনে জেলা কমিউনিস্ট পার্টির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। আমরা নিরপেক্ষ অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার, ১৯৭১ এর গণহত্যার বিচার অব্যাহত রাখা, পুলিশের লুটপাট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারসহ মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তাদের।”
তিনি বলেন, “বাহাত্তরের সংবিধানের অসম্পূর্ণতা দূর করে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান চাই। যারা বলে, বাহাত্তরের সংবিধান ফেলে দেব, তাদেরকে একথা বলার রাইট (অধিকার) কে দিয়েছে? বাহাত্তরের সংবিধানে অসূম্পর্ণতা আছে, যা পূর্ণাঙ্গ করার প্রস্তাব কমিউনিস্ট পার্টি বাহাত্তর সালেই দিয়েছে। বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আছে, তারা বাহাত্তরের সংবিধানের মাধ্যমেই ক্ষমতায় আছেন।”
বর্ধিত সভাটি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) শরীয়পুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত ভাওয়াল সঞ্চালনা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলার সভাপতি নুরুল হক ঢালী। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য কাজী রুহুল আমিন, শরীয়তপুর উদীচীর সভাপতি শফিউল বাসার স্বপন, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি বিকাশ মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক জি কে সাজ্জাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দরপতনে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু, তবে মাত্রা কম
ঈদের দীর্ঘ ৯ দিনের ছুটি শেষে আজ রোববার দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে। অবশ্য শুরুটা হয়েছে কিছুটা দরপতনে, যা ছিল অনেকটাই প্রত্যাশিত।
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে বিশ্বের সব দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন, তার প্রেক্ষিতে তাঁর নিজ দেশসহ বিশ্বের প্রায় সব শেয়ারবাজারে দরপতন চলছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও দরপতনের আশঙ্কা করছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আশঙ্কার তুলনায় দরপতনের মাত্রা অনেক কম।
সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর আড়াই ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টায় ৯৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৬৪টি দর হারিয়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। এ সময় দর অপরিবর্তিত অবস্থায় কেনাবেচা হচ্ছিল ৩০টি।
এতে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৫ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে। সূচক পতনের হার ছিল শূন্য দশমিক ৪৮৭ শতাংশ।
এটা স্বাভাবিক সময়েও সূচকে এমন পতন হয়। ফলে আজকের পতনে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না বলে জানান শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, দরপতন বেশি হচ্ছে বস্ত্র খাতের শেয়ারে। এটা প্রত্যাশিত ছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য বস্ত্র।
তবে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে এমন তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে শেয়ারবাজারে ট্রাম্পের শুল্কারোপের তেমন প্রভাব পড়ার কারণ দেখছেন না কেউ।
তাছাড়া অতীতের মত এমন সংকটে বাংলাদেশের সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ বাণিজ্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে ট্রাম্প বাংলাদেশের তুলনায় অধিক হারে শুল্কারোপ করেছেন।
তাছাড়া শুল্কারোপে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য মূল্য বাড়বে। বিশেষত উচ্চ মূল্যের পণ্যের ক্রয় চাহিদা কমে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।
এর ফলে বাংলাদেশের উল্টো ব্যবসা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যগুলো কম মূল্যের ‘ব্যাসিক প্রোডাক্ট’। ২০০৮ এর মহামন্দায় এমন সুবিধা পেয়েছিল বাংলাদেশ।
এমন ভাবনার প্রতিফলন ছিল আজকের শেয়ারবাজারের লেনদেনে।
দিনের শেয়ার লেনদেন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সকাল ১০টায় দিনের লেনদেনের প্রথম মুহূর্তে প্রি-মার্কেট লেনদেনে ভর করে সূচক নামে কমে উল্টো সামান্য (শূন্য দশমিক ৬৭ পয়েন্ট) বেড়েছিল।
তবে স্বাভাবিক লেনদেন শুরুর প্রথম মিনিটে ১২ পয়েন্ট এবং দ্বিতীয় মিনিটে আরও প্রায় ৮ পয়েন্ট হারায় সূচকটি। এর ১২ মিনিট পর অর্থাৎ সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে সূচকটি ৪৪ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৭৪ দশমিক ২০ পয়েন্টে নেমেছিল। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লেনদেনে এটাই ছিল সূচকের সর্বোচ্চ পতন। অবশ্য এর পর সূচক কিছুটা পতন কাটিয়ে উঠেছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মিউচুয়াল ফান্ড খাত ছাড়া বাকি সব খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়েছে। তবে তুলনামূলক বেশি দর হারিয়েছে বস্ত্র খাতের শেয়ার।
যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ ইস্যুতে বস্ত্র খাতেই সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক।
দুপুর সাড়ে ১২টায় এ খাতে তালিকাভুক্ত ৫৮ কোম্পানির মধ্যে ৫৬টি দর হারিয়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। গড়ে দরপতন হয়েছিল প্রায় ৪ শতাংশ, যা খাতওয়ারি দরপতনের সর্বোচ্চ।
বস্ত্র খাতের বাইরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের দরপতনের হার ছিল ১ দশমিক ৪০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতের শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের ১ শতাংশ, চামড়া খাতে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ উল্লেখযোগ্য।
বিপরীতে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের গড় দর ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়েছিল। সিরামিক খাতের দরবৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
একক কোম্পানি হিসেবে দরপতনের শীর্ষে ছিল বস্ত্র খাতের শেয়ার।
সর্বোচ্চ পৌনে ৭ শতাংশ দর হারিয়ে প্রাইম টেক্সের শেয়ার ১৪ টাকায় কেনাবেচা হতে দেখা গেছে।
৬ শতাংশের বেশি দর হারিয়ে এর পরের অবস্থানে থাকা শেয়ারগুলো ছিল- ইভিন্স টেক্সটাইল, এসক্যোয়ার নিট, সাফকো স্পিনিং, জেনারেশন নেক্সট, নিউ লাইন, ড্রাগন সোয়েটার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।
ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর আজ লেনদেনের গতিও কম। প্রথম দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে ১৮৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। ঈদের ছুটির আগের শেষ কার্যদিবসে একই সময়ে ২০০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার কেনাবেচা হতে দেখা গেছে।