মিয়ানমারে ভূমিকম্প: ৭ দিন পরও ধ্বংসস্তূপের পাশে গিয়ে স্বামীর নাম ধরে ডাকছেন স্ত্রী
Published: 5th, April 2025 GMT
মিয়ানমারের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়েছে। এখনো স্বামী ও দুই শিশুসন্তানের খোঁজে নির্ঘুম রাত কাটান হনিন। বিধ্বস্ত মান্দালয় শহরের যে ভবনের নিচে পরিবারের সদস্যরা চাপা পড়েছেন, সেখানে গিয়ে স্বামীর নাম ধরে ডাকাডাকি করেন। যদি কোনো সাড়া পাওয়া যায়। হনিন বলেন, পরিবারের সদস্যদের জন্য কাঁদতে কাঁদতে তাঁর চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।
২৮ মার্চ মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মান্দালয়, সাগাইং ও রাজধানী নেপিডো। দেশটিতে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার আহ শনিবার জানিয়েছে, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৫৪ জন নিহত হয়েছেন। সংখ্যাটা প্রতিদিনই বাড়ছে। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৮৫০ জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ২২০ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হনিনের স্বামী-সন্তানেরাও।
হনিনের মতো একই অবস্থা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর বাসিন্দাদের। ঘরবাড়ি ধসে পড়ায় আর আবার ভূমিকম্পের আশঙ্কায় এখনো তাঁরা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। প্রচণ্ড গরমে অনেকেই হিটস্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন। ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মরদেহ থেকে ভেসে আসছে দুর্গন্ধ। শৌচাগার ব্যবহার করতে পারছেন না অনেকে। এতে চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, মসজিদ ও মন্দিরের পাশাপাশি সরকারি ভবনগুলোরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে নেপিডোর সুপ্রিম কোর্ট ভবন। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ভূমিকম্পে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই সরকারি কর্মচারীদের পরিবারের সদস্য—তাঁদের স্ত্রী, সন্তান ও মা-বাবা।
ভূমিকম্পে মিয়ানমারের সামরিক স্থাপনাগুলোর কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা প্রকাশ করেনি সরকার। তবে ভূমিকম্পের কারণে জান্তা বাহিনীর সদস্যরা নৈতিকভাবে বড় ধাক্কা খেয়েছেন বলে মনে করেন ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের গবেষক ইয়ে মিও হেইন। তাঁর ভাষ্যমতে, যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেক সেনা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নিতে পারছেন না। শুধু নেপিডো নয়, মিয়ানমারে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সব এলাকায় এই সমস্যার মুখে পড়ছেন তাঁরা।
বিধ্বস্ত এলাকা পুনর্গঠন নিয়ে শঙ্কাজাতিসংঘের হিসাবে, ভূমিকম্পে মিয়ানমারের যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বসবাস। এই এলাকাগুলোয় অন্তত ১০ হাজার ভবন ধসে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক শহর এলাকা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়ে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন পড়বে বিপুল পরিমাণ অর্থের।
২০২১ সালে মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে জান্তা সরকার। এর পর থেকে দেশটিতে চলছে গৃহযুদ্ধ। এমনকি ভূমিকম্পের পরও জান্তাবিরোধী বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর থেকেই দেশটি বিদেশি সহায়তা থেকে বিচ্ছিন্ন। এমনকি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে অর্থ ছাড়ের সুযোগ নেই তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মিয়ানমারের পুনর্গঠন কীভাবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমারবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা রিচার্ড হরসি বলেন, ভূমিকম্পে মিয়ানমারে অন্তত ২০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু প্রকল্পের জন্য চীন হয়তো ঋণ দিতে পারে। তবে জান্তা সরকারকে বিশ্বাস করে বড় অঙ্কের অর্থ দেওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, ভূমিকম্পের পর জরুরি সহায়তা কার্যক্রম ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারেনি তারা।
এদিকে ভূমিকম্পের পর চীন, রাশিয়া, ভারতসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশ সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে। গতকাল মান্দালয় পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন জাতিসংঘের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তাসংক্রান্ত সংস্থার (ওসিএইচএ) প্রধান টম ফ্লেচার। তিনি বলেন, বিশ্বকে মিয়ানমারের মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র সদস য ত হয় ছ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’
ক্যাম্পাসে মানবাধিকার সুরক্ষা ও সচেতনতা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’। রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রার কথা জানানো হয়।
‘রাইজ ফর রাইটস (অধিকারের জন্য জাগো)’ স্লোগানকে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটির ২৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। রোববার সংবাদ সম্মেলনে ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন এই সংগঠনের আহ্বায়ক হয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদ সাকিব। সদস্যসচিব করা হয়েছে ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার বিভাগের শিক্ষার্থী পত্র নন্দিতাকে। এ ছাড়া ইসমাঈল নাহিদ যুগ্ম আহ্বায়ক আর রুকাইয়া রচনা যুগ্ম সদস্যসচিব হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে গণরুম, গেস্টরুম সংস্কৃতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আর কখনো এই সংস্কৃতি যেন ফেরত না আসে, সেই লক্ষ্যে কাজ করবে সংগঠনটি।
সংগঠনের আহ্বায়ক তাহমিদ সাকিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, সংখ্যালঘু অধিকারও জাতিগত সম্প্রীতি রক্ষা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও প্রয়োজনে আইনি পরামর্শ প্রদানসহ ক্যাম্পাসে মানবাধিকার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করবে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটলে সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
তাহমিদ সাকিব বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থী নিপীড়নের ঘটনাগুলো আমরা দেখেছি। বিভিন্ন সময় যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেগুলোর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা আমরা দেখিনি। নারী শিক্ষার্থীরা এখনো ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। অসংখ্য নারী নিপীড়নের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের ঘটনা আমরা দেখি না। এই সংগঠনটি এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্যসচিব পত্র নন্দিতা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কম নয়, বরং অহরহ ঘটে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিসরে। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতেও এটা বিদ্যমান। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, ডকুমেন্টেশন এবং অধিকার আদায়ে কাজ করবে তাঁদের এই সংগঠন।
আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে আরও আছেন তাপসী রাবেয়া, হুরে জান্নাত, তাজফিহা উখরোজ, সামিয়া মাসুদ, সুরমি চাকমা, নাফিসা নুজহাত, ইসরাত জাহান, আবদুল্লাহ আজিমসহ আরও অনেকে।