রক্তাক্ত ভ্যানচালককে নিজের গাড়িতে হাসপাতালে নিলেন ইউএনও
Published: 5th, April 2025 GMT
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মহাসড়কের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন এক ভ্যানচালক। এ সময় সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। ভ্যানচালকের এ অবস্থা দেখে তিনি নিজের গাড়িতে করে তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। আজ শনিবার সকালে এই ঘটনা ঘটে।
ভ্যানচালক মো. মানিক মিয়া (৪০) কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জগদল গ্রামের বাসিন্দা। ভ্যানগাড়ি নিয়ে তিনি ভাঙারি জিনিসপত্র কিনতেন। আজ সকালে হোসেনপুর-গফরগাঁও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাঁচবাগ ইউনিয়নের খোরশিদ মহল সেতুর কাছাকাছি এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন মানিক মিয়া।
সকাল পৌনে ৯টার দিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমীর স্নান পরিদর্শনে খোরশিদ মহল সেতু এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে যাচ্ছিলেন ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন। এ সময় তিনি দেখতে পান, বিপরীত লেনে একটি ভ্যান উল্টে আছে, অচেতন ভ্যানচালককে শুশ্রূষার চেষ্টা করছেন কয়েকজন। যানবাহন না পাওয়ায় ভ্যানচালককে হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছিল না। পরে সেখান থেকে নিজের গাড়িতে করে ভ্যানচালককে হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন ইউএনও। হাসপাতালে নেওয়ার পর ভ্যানচালকের মাথায় পাঁচটি ও ঠোঁটে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়। ভ্যানচালকের মুঠোফোন নম্বর থেকে পরিবারকেও খবর দিলে তাঁরা হাসপাতালে যান। পরে পরিবারের কাছে ভ্যানচালককে হস্তান্তর করেন ইউএনও।
পুরো ঘটনা তুলে ধরে আজ দুপুরে গফরগাঁও উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে। ইউএনওর এমন মানবিক কাজের প্রশংসা করছেন অনেকে। মন্তব্যের ঘরে মাহমুদা সুলতানা নামে এক নারী লিখেছেন, ‘অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করার মাঝেই থাকে অনেক শান্তি। আপনাকে (ইউএনও) অনেক ধন্যবাদ।’ হাবিবুর রহমান একজন লেখেন, ‘স্যার, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে যে মানবিক দায়িত্ব পালন করলেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মহৎ কাজের জন্য শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’
গফরগাঁওয়ের ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, আহত ব্যক্তি মনে করতে পারছেন না। মাথায় আঘাত পাওয়ায় তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে সাধারণ একজন মানুষের জন্য কাজ করতে পারায় তিনি শান্তি পাচ্ছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাবলিক লাইব্রেরি ভবনে কমিউনিটি সেন্টার
পাবলিক লাইব্রেরির জন্য নির্মাণ করা হয় ভবন। তবে পাবলিক লাইব্রেরি না করে করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন করেও ভবনটিতে পাবলিক লাইব্রেরি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিবপুর উপজেলা সদর কলেজ গেট এলাকায় পাবলিক লাইব্রেরির জন্য ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৬ সালের ২৪ মার্চ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। একই বছর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে নরসিংদী জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে মেসার্স রহমান কনস্ট্রাকশন। অথচ দীর্ঘ ১৮ বছরেও পাবলিক লাইব্রেরিটি চালু করতে পারেনি নরসিংদী জেলা পরিষদ।
পাবলিক লাইব্রেরি চালু করতে না পারলেও চালু করেছে কমিউনিটি সেন্টার। ভবনটি নির্মাণের ৫ বছর পর থেকে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক লাইব্রেরি চালুর দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ইউএনও, জেলা পরিষদে আবেদন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভবনের মূল ফটকের ভেতর থেকে তালা লাগানো। ভবনের সামনের সিঁড়িতে বসা নাঈম নামে একজন বলেন, ভেতরে কাইয়ুম নামে কেয়ারটেকার আছে। ডাক দিলে বের হয়ে আসবে। কাইয়ুম ভাই বলে কয়েকটি ডাক দেওয়ার পর ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। গেট না খুলে পরিচয় জানতে চান। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তালা খুলে ভেতরে নিয়ে যান এবং পুরো ভবন ঘুরে দেখান।
দেখা গেছে, ভবনটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা উঠে যাচ্ছে। ভবনের এক কক্ষে ভাঙাচোরা আসবাব পড়ে রয়েছে। নরসিংদী জেলা পরিষদের নিয়োগ করা কাইয়ুম মিয়া কেয়ারটেকার হিসেবে ভবনের একটি কক্ষে থাকেন ও ভবন দেখাশোনা করেন। ভবনের সামনে রয়েছে একটি নোংরা ডোবা। সেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
কেয়ারটেকার কাইয়ুম মিয়া জানান, ভবনের কেয়ারটেকার হিসেবে তিন বছর ধরে এখানে থাকেন তিনি। ভবনটি কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কমিনিউনিটি সেন্টার হিসেবে তেমন ভাড়াও হয় না। মাসেও হয় না।
শিবপুর উপজেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নূরুল ইসলাম নূরচানের ভাষ্য, মননশীলতার কেন্দ্র এভাবে বন্ধ থাকতে পারে না। নির্মাণের পর লাইব্রেরি চালু না করায় এলাকার তরুণ সমাজ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দ্রুত লাইব্রেরি চালুর দাবি তাঁর।
উপজেলা গীতিনাট্য সংসদ সভাপতি কাদির কিবরিয়া বলেন, শিবপুরে মননশীল চর্চার কোনো জায়গা নেই। মননশীল ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার জন্য নির্মিত পাবলিক লাইব্রেরিটি চালু করতে দাবি জানালেও অদৃশ্য কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
শিবপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নূর উদ্দিন মো. আলমগীর জানান, একটি পাবলিক লাইব্রেরি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বন্ধ থাকবে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এত টাকা খরচ করে যে উদ্দেশ্যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে আজ সেই উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হচ্ছে। এখানে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। এটি দুর্নীতির একটি অংশ।
শিবপুরের ইউএনও মোছা. ফারজানা ইয়াসমিনের ভাষ্য, পাবলিক লাইব্রেরির জন্য নির্মিত ভবনটি সংস্কার করতে হবে। এ জন্য জেলা পরিষদের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
নরসিংদী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আ. ওহাব রাশেদ জানান, লাইব্রেরিটিকে একটি মালটিপারপাস অর্থাৎ লাইব্রেরি থেকে আরও উন্নত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত চালু করা হবে।