অনলাইন—আইএমএফ মিশনের সফর/ বাড়তি রাজস্ব আদায়, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ কমানো নিয়ে মূল আলোচনা

অনলাইন—আইএমএফ মিশনের সফর/ বাড়তি রাজস্ব আদায়, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ কমানো নিয়ে মূল আলোচনা

আইডি: ০৩০৫৩

সেকশন:

মেটা:

ট্যাগ: ।

ছবি: বাংলাদেশ সরকার ও আইএমএফের লোগো।

চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের আগে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নানা দিক পর্যালোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি মিশন এখন ঢাকার পথে রয়েছে। মিশনটি আগামীকাল রোববার লাগাতার বৈঠক শুরু করবে। দুই সপ্তাহ ধরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক চলবে। মার্কিন ডলার অর্থাৎ মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায়, ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনা—এ বিষয়গুলো এবারের আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, আইএমএফ মিশন প্রথম দিন বৈঠক করবে সাতটি। সচিবালয়ে সকাল সোয়া ৯টায় প্রথম বৈঠকটি হবে অর্থসচিব মো.

খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও তাঁর দলের সঙ্গে। এতে আইএমএফ মিশন তাদের সফরের উদ্দেশ্য তুলে ধরবে। এরপরের বৈঠকটি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। এ বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানেরও যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

এরপর অর্থ বিভাগের সঙ্গে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট, সামষ্টিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংক খাতের তারল্যপ্রবাহ ও ঋণ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করবে আইএমএফের দলটি। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নররা এসব বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন।

জানতে চাইলে আইএমএফের ঢাকা কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে আজ শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইএমএফ মিশন আজ আসবে। এ মিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।’ মিশনপ্রধান ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হো’স হো পদকজয়ী অর্থনীতিবিদ।

আইএমএফের এবারের মিশন আগামীকাল শুরু হয়ে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। বৈঠকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের পাশাপাশি এনবিআর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এসব দপ্তরের সঙ্গে হবে বলে জানা গেছে।

সব বৈঠক শেষ করে ১৭ এপ্রিল প্রেস ব্রিফিং করবে আইএমএফের মিশন। সেদিন তারা আবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও বৈঠক করবে।

আইএমএফের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচিটি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে পাওয়া গেছে ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে মোট ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। কর্মসূচিটির আওতায় এখন বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য আশা করছে, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ আগামী জুনে একসঙ্গে পাওয়া যাবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনবিআরের বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার পাশাপাশি মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পক্ষে আইএমএফ। আবার ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দামও বৃদ্ধির পক্ষ নেবে সংস্থাটি। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হতে পারে। তবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির উপযুক্ত সময় এখন নয়। আইএমএফের উচিত বাংলাদেশের বাস্তবতা বোঝা। উভয় পক্ষ ছাড় দিয়ে হলেও ঋণ কর্মসূচিটি বজায় রাখলে ভালো হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইএমএফ র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

দারিদ্র্য নিরসনে প্রয়োজন জোরদার কর্মসূচি

দুই দিনের ব্যবধানে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, তাতে বিচলিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

২৪ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর বাংলাদেশে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতি গরিব হওয়ার শঙ্কা আছে। অতি দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হবে, যা আগে ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। জাতীয় দারিদ্র্য হার গত বছরে ছিল ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০২৫ সালে তা বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হবে।

অন্যদিকে ২২ এপ্রিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে, যা গত দেড় দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক, এপ্রিল ২০২৫-এ এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আইএমএফ সাধারণত পঞ্জিকাবর্ষ ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দিয়ে থাকে। তবে সংস্থাটির মতে, ২০২৬ প্রবৃদ্ধি বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হবে।

দুই সংস্থার এসব তথ্য ও পূর্বাভাস বাংলাদেশের অর্থনীতির নাজুক অবস্থাই তুলে ধরে। আগামী বছর প্রবৃদ্ধি কতটা বাড়বে কিংবা দারিদ্র্যের হার কতটা কমবে, তার চেয়েও জরুরি হলো অর্থনীতির গতি মন্থর হওয়ার কারণগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। জুনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে। সেই বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচন ও নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে জোরালো কর্মসূচি থাকবে কি না। দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ মূল্যস্ফীতি। অর্থাৎ যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে, সে হারে রোজগার না বাড়লে মানুষ দারিদ্র্যের চক্রে ঘুরপাক খাবে। এই অবস্থার উত্তরণে কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে।

বাস্তবতা হলো আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার সাড়ে আট মাস পরও সেটা কমানো যায়নি। মূল্যস্ফীতির কারণে দারিদ্রে্যর হার বেড়ে চললেও সরকার প্রতিকারে টেকসই কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও চলছে ঢিমেতালে। সামাজিক সুরক্ষায় তৈরি কার্ডের তালিকা নিয়েও অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেবল আমলাদের দিয়ে সেটা করা সম্ভবও নয়। 

আন্তর্জাতিক পরিসরে ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) অনুসারে, দিনে ২ দশমিক ১৫ ডলার আয় করে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা কেনার সামর্থ্য না থাকলে অতি দরিদ্র হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় দারিদ্র্যসীমার মানদণ্ড হলো খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবা কেনার জন্য একজন মানুষের প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার ৮২২ টাকা খরচ করার সামর্থ্য যদি না থাকে, তাহলে তিনি দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবেন বা গরিব হয়ে যাবেন। এখানেও আন্তর্জাতিক মান অনুসৃত হয়নি। 

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যখন এসব শঙ্কার কথা বলছে, তখন অর্থনীতির কোনো খাতেই আশাব্যঞ্জক কিছু ঘটছে না। দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগের গতি অত্যন্ত মন্থর। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতে গত ১৫ মাসে ৭৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হলেও বেকার হয়েছেন প্রায় ১ লাখ। ৮৬ শতাংশের বেশি কর্মসংস্থান হয় অনানুষ্ঠানিক খাতে, যেখানে ন্যূনতম মজুরির নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থায় দারিদ্র্য কমানো সম্ভব নয়। 

দেশের অর্থনীতির গতি মন্থর হওয়ার আরেকটি কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। আমরা মনে করি, নির্বাচন নিয়ে যে ধোঁয়াশা আছে, সেটি কেটে গেলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানও বাড়বে। অতএব দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজন জোরদার ও সৃজনশীল কর্মসূচি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্প–ঝড়ের পরও বিশ্বব্যবস্থা টিকে আছে, স্বস্তি নীতিপ্রণেতাদের
  • আইএমএফের ঋণের কিস্তি না পেলে ক্ষতি হবে না
  • আইএমএফের ঋণের কিস্তি পাচ্ছে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশও আশাবাদী
  • দারিদ্র্য নিরসনে প্রয়োজন জোরদার কর্মসূচি
  • আইএমএফের ঋণের কিস্তি নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ, শর্ত নিয়ে আলোচনা