জনপ্রতিনিধি ও নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার ভিডিও ভাইরাল
Published: 5th, April 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এক জনপ্রতিনিধি ও এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার একটি ভিডিও শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, উপজেলার সলঙ্গা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শরিফুল ইসলাম ও এক নারীকে একই গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। পাশে কিছু যুবক হৈচৈ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, ইউপি সদস্য শরিফুল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে একই ইউনিয়নের পাশের ছোট গোঁজা গ্রামে অনৈতিক কাজের উদ্দেশ্যে এক নারীর ঘরে ঢুকে। বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয়রা ওই নারী ও শরিফুল ইসলামকে ধরে নিয়ে এসে বাড়ির পাশের একটি গাছের সঙ্গে দুজনকে একসঙ্গে বেঁধে রাখে। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।
তবে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ওই নারী তার আত্মীয় এবং তিনি ঘটনার সময় সেখানে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি শত্রুতা করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
সলঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উল্লাপাড়া উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা আসাদ বিন রাহত খলিল জানান, শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শরিফুল ইসলাম ও অজ্ঞাত এক নারীর গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটি দেখে তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। পরে তিনি জানতে পারেন, অর্থের বিনিময়ে সামাজিকভাবে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে।
ইউপি প্রশাসক আরও জানান, যেভাবেই সামাজিকভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হোক না কেন, তিনি খতিয়ে দেখে বিধি মোতাবেক অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ঘটনার সময় তিনি তার আত্মীয় বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। শত্রুতাবশত কিছু লোক সামাজিকভাবে সম্মানহানি ও হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে ওই নারীসহ তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিল। সলঙ্গা থানা পুলিশ এসে তাদেরকে মুক্ত করেন। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের নাম বলেননি তিনি।
শরিফুল ইসলাম আরও বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কোনো টাকা দেননি। অন্য কেউ দিলে তা-ও তিনি জানেন না।
সলঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা) মনোজ কুমার নন্দী জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শরিফুল ইসলামের ভিডিওটি দেখার পর সংশ্লিষ্ট ইউপি প্রশাসক ও স্থানীয় লোকজন তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। রাতেই তিনি ঘটনাস্থলে যান এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ও নারীকে বাঁধনমুক্ত করেন। পরে স্থানীয় লোকজন ও ইউপি সদস্যরা বিষয়টি মিমাংসা করবেন বলে তাকে জানালে তিনি থানায় ফিরে যান।
তিনি আরও বলেন, এখনও কেউ শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে পুলিশ আইগত ব্যবস্থা নেবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ এক ন র ব ষয়ট সলঙ গ
এছাড়াও পড়ুন:
খাতা দেখতে না দেওয়ায় সহপাঠীদের মারধরে আহত পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় এনায়েতপুর কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে খাতা দেখতে না দেওয়ায় সহপাঠীদের মারধরে আহত ইমন হোসেন (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী মারা গেছে। গত শুক্রবার খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল তাকে মারধর করা হয়েছিল।
নিহত ইমন উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের ইমদাদুল মোল্লার ছেলে। সে স্থানীয় খুকনী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ঘটনার ১০ দিন অতিবাহিত হলেও দুটি থানার সীমানা এলাকা হওয়ায় এ ঘটনায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ। এদিন পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে বেলকুচি থানায় মামলা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
নিহত ইমনের বাবা ইমদাদুল মোল্লা জানান, গত ১৭ এপ্রিল এনায়েতপুর ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা চলাকালে কয়েকজন সহপাঠী ইমনের খাতা দেখে পরীক্ষা দিতে চায়। এতে সে রাজি হয়নি। পরদিন শুক্রবার দুই সহপাঠী তাকে ডেকে নিয়ে যায়। পাশের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর নতুনপাড়ায় নিয়ে গিয়ে কয়েকজন মিলে তাকে মারধর করে।
মারধরে ইমনের মাথার বাম পাশের খুলি ভেঙে যায়। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। বুধবার তাকে বাড়িতে আনা হয়েছিল। শুক্রবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সে মারা যায়।
ইমদাদুল মোল্লা বলেন, ‘আমার ছেলে ভদ্র এবং মেধাবী ছিল। নকল করতে না দেওয়ায় তাকে এভাবে হত্যা করা হবে, কখনও ভাবিনি।’ অভিযুক্তদের শাস্তি দাবির পাশাপাশি দুই থানা মামলা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
খুকনী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তোতা মিয়া বলেন, মারধরের ঘটনার পর কয়েকবার এনায়েতপুর ও বেলকুচি থানায় মামলা করতে যান স্বজনরা। দুই থানার সীমানা জটিলতা দেখিয়ে পুলিশ মামলা নেয়নি। এনায়েতপুর বলছে বেলকুচিতে মামলা হবে। আর বেলকুচি বলছে মামলা হবে এনায়েতপুরে থানায়।
এনায়েতপুর থানার ওসি রওশন ইয়াজদানি শনিবার বিকেলে বলেন, শিক্ষার্থী ইমনের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের পর শুক্রবার রাতে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ সুপার বিষয়টি জেনে বেলকুচি থানায় মামলা করার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
বেলকুচি থানার ওসি জাকেরিয়া ইসলাম শনিবার বিকেলে বলেন, শিক্ষার্থী ইমন বেলকুচিতে মারধরে আহত হলেও মারা যায় এনায়েতপুরে। তাদের বাড়ি এনায়েতপুর থানার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেখানে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সুপার বেলকুচিতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। দাফন শেষে স্বজনরা এলে অভিযোগ নেওয়া হবে। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বেলকুচি থানায় মামলা করার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।