সিরিয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না তুরস্ক
Published: 5th, April 2025 GMT
সিরিয়ায় গত ডিসেম্বরে নতুন শক্তি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটির সামরিক স্থাপনায় নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এটা দেশটির নতুন সরকারের হুমকি মোকাবিলার সক্ষমতাকে খর্ব করছে। প্রতিবেশী তুরস্ক সিরিয়ার নতুন সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র। কিন্তু সেখানে নিয়মিত হামলা চালানো সত্ত্বেও ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না তুরস্ক।
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এ কথা বলেন। সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বলে মনে করে আঙ্কারা।
এক প্রশ্নের জবাবে ফিদান বলেন, দামেস্কের নতুন প্রশাসন যদি প্রতিবেশী ইসরায়েলের সঙ্গে ‘নির্দিষ্ট কিছু বোঝাপড়া’ চায়, তা নিয়ে তুরস্কের কোনো আপত্তি নেই। কারণ, সেটাকে সিরিয়ার নিজস্ব বিষয় বলে মনে করেন ফিদান।
ন্যাটো সদস্য তুরস্ক ২০২৩ সালে শুরু হওয়া গাজায় ইসরায়েলের হামলার কঠোর সমালোচনা করে আসছে। তুরস্কের অভিযোগ, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) যৌথভাবে একটি মামলা করেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সব বাণিজ্য স্থগিত করেছে।
ফিলিস্তিনদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরায়েল।
মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে যে বৈরিতা চলছে, সিরিয়াতেও তার আঁচ লাগছে। গত ডিসেম্বরে সিরিয়ায় নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। এসব হামলাকে সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অনধিকার প্রবেশ বলে মনে করে তুরস্ক। তবে ইসরায়েল বলে আসছে, তারা সিরিয়ায় কোনো বৈরী শক্তির কার্যক্রম সহ্য করবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানে হামলা চালানোর হুমকি সম্পর্কে জানতে চাইলে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মতবিরোধ মিটমাট করার জন্য কূটনীতি বাড়াতে হবে। নিজের প্রতিবেশীর ওপর কেউ হামলা করুক, তা চায় না আঙ্কারা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হামাসকে ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়, এমন গালি দিলেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস দেশটির স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে ‘সান অব....’ বলে গালি দিলেন। তিনি গাজায় অবশিষ্ট বন্দীদের মুক্তি দিতেও হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বন্দীদের মুক্তি না দেওয়ার বিষয়টি ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালিয়ে যেতে ইসরায়েলের জন্য একটি অজুহাত তৈরি করছে।
ইসরায়েল–নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় অনুষ্ঠিত ৩২তম প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তৃতাকালে মাহমুদ আব্বাস এসব কথা বলেন। বিশেষ করে তিনি আমেরিকান-ইসরায়েলি বন্দী আদি আলেক্সান্ডারের প্রসঙ্গটি তোলেন।
মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। কেন? তারা সেই মার্কিন জিম্মিকে হস্তান্তর করতে চায় না।’
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস হামাসের উদ্দেশে বলেন, ‘সান অব...., তোমাদের কাছে যারা আছে, তাদের হস্তান্তর করো এবং আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি দাও। ইসরায়েলকে কোনো অজুহাত দেওয়ার সুযোগ দিয়ো না। তাদের অজুহাত দেওয়ার সুযোগ দিয়ো না।’
মাহমুদ আব্বাস আরও বলেন, ইসরায়েলের কারণে নয়, বরং এই বন্দীদের আটকে রাখার কারণে ‘আমাকে এবং আমার জনগণকে মূল্য দিতে হচ্ছে’।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ২৫১ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যায়। এর মধ্যে ৫৮ জন এখনো বন্দী আছেন। আর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, ৩৪ জন ইতিমধ্যেই মারা গেছেন।
হামাস ও মাহমুদ আব্বাসের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়া এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালানোর জন্য আব্বাসকে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হতে হয়েছে।
মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) পশ্চিম তীরের কিছু অংশ শাসন করে। আর হামাস ২০০৫ সালে দুই পক্ষের মধ্যে বিভক্তির পর থেকে গাজা শাসন করছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।