ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মো. হাসান (২৩) নামের এক তরুণকে পিটুনি দিয়ে হাত–পা ভেঙে দেওয়ার পর দুই চোখ খুঁচিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় জনতা। পরে মারা গেছে ভেবে তাঁকে ফেলে যান। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের ঝিটকা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে গ্রাম পুলিশের সহায়তায় হাসানকে উদ্ধারের পর বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে ভোলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাঁকে বরিশালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসান উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রতন মাঝির ছেলে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিরুপম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, হাসানের চোখ তুলে নেওয়ার খবর সত্য নয়। ছুরি দিয়ে চোখ খুঁচিয়ে দিয়েছেন, তুলে ফেলেননি। হাত–পায়ের অবস্থা গুরুতর ছিল। এ জন্য উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

পুলিশ, চৌকিদার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিটুনির শিকার হাসান নিজের কাছে সব সময় ধারালো অস্ত্র রাখতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করেন। প্রায়ই পথে অটোরিকশা থামিয়ে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করতেন। গতকাল ঝিটকা বাজারের এক দোকানির কাছে চাঁদা আদায়ের সময় প্রতিবাদ করায় আরেক তরুণকে ছুরিকাঘাত করেন হাসান। এসব কারণে এলাকাবাসী তাঁর ওপর অতিষ্ঠ ছিলেন। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী গতকাল রাতে হাসানকে ধরে পিটুনি দেন। পাশাপাশি দুই চোখ খুঁচিয়ে দেওয়া হয়। পিটুনির এক পর্যায়ে মারা গেছে ভেবে সড়কের পাশে ফেলে যান। খবর পেয়ে গ্রাম পুলিশকে নিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে যায় পুলিশ।

হাসানের বাবা রতন মাঝি বলেন, দুই দিন আগে এলাকার রুবেলের সঙ্গে হাসানের মারামারি হয়। ওই ঘটনার জেরে গতকাল রাতে হাসানকে ঝিটকা বাজারে ডেকে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ছুরি দিয়ে চোখ খুঁচিয়ে দেন। আহত হাসানের দাবি, তিনি নিরপরাধ। পূর্বশত্রুতার জেরে তাঁর বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ করা হচ্ছে। তাঁর ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনার বিচার চেয়েছেন তিনি।

বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাসান এলাকায় চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় দুটি মামলা আছে। এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে তাঁকে পিটুনি দেন। খবর পেয়ে গ্রাম পুলিশের সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উপজ ল ছ নত ই গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

মেজর সিনহা হত্যায় প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহাল ও ৭ দিনের মধ্যে কার্যকরের দাবি

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ করার দাবি জানিয়েছে এক্স–ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।

এই মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড উচ্চ আদালতে বহাল রাখার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা বলেছে, এই শুনানি শেষে রায় ঘোষণার পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে। অন্যথায় রায় কার্যকর করার দাবিতে কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি দেওয়া হবে।

আজ শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এক্স–ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন এমন দাবি জানিয়েছে। ‘শহীদ মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ওসি প্রদীপের মৃত্যুদণ্ড অনতিবিলম্বে কার্যকর করার দাবি’ ব্যানারে তারা এই সংবাদ সম্মেলন করে।

সংবাদ সম্মেলনে এক্স–ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) মো. মেহেদী হাসান বলেন, বর্তমানে এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে চলমান। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে কোনো হুমকি, প্রলোভন বা রাজনৈতিক চাপ যেন আপনাদের প্রভাবিত করতে না পারে। রায় ঘোষণার পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে।’

সংগঠনটির দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘আশা করছি, চলমান শুনানি আগামী সপ্তাহেই শেষ হবে এবং উচ্চ আদালত প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখবেন।’

সংগঠনের সদস্যসচিব লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ করার অনুরোধ করেন। প্রদীপ, লিয়াকতসহ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রত্যেকের ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবিও জানান তিনি।

এ মামলায় ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কোনো মামলায় বিচারিক আদালতে রায়ে আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুনসিনহা হত্যা: সেদিন যা ঘটেছিল৩১ জানুয়ারি ২০২২

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেন, মেজর (অব.) রাজিবুল হাসান, ক্যাপ্টেন (অব.) শুভ আফ্রিদি, করপোরাল (অব.) তফসীর আহমেদ, নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য সাইদ ও সাবেক সৈনিক মো. নাইমুল ইসলাম।

আরও পড়ুনআসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে পেপারবুক থেকে উপস্থাপন চলছে২৪ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ