দুর্যোগের মেঘ দেখে ফেলেছে বিশ্বখ্যাত মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মর্গ্যান। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে মন্দার পূর্বাভাস দিল তারা। পূর্বাভাস দিতে যেমন বেশি সময় লাগেনি তাদের, তেমনি ‍মন্দা আসতে বেশি সময় না–ও লাগতে পারে বলে তাদের পূর্বাভাস। চলতি বছরেই আমেরিকান অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হতে পারে বলে তাদের অনুমান।

মন্দা হলে তার সঙ্গে বেকারত্বও বাড়বে বা উল্টোভাবে বললে, বেকারত্ব বাড়বে বলেই মন্দা আসবে। জেপি মর্গ্যান সেটাই বলেছে। কোম্পানির প্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল ফেরোলি বলেছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টস বা জিডিপি) সংকুচিত হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা হলে তার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে। সারা বিশ্বে মন্দার আশঙ্কা ৬০ শতাংশ, জানিয়েছে জেপি মর্গ্যান। এর আগে তাদের পূর্বাভাস ছিল, মন্দার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও রয়টার্স

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে এ প্রসঙ্গে ফেরোলি বলেন, ‘শুল্কের চাপে আমাদের জিডিপি সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। গত বছর জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি বছরে আমরা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি আশা করছি না।’ বেকারত্ব বৃদ্ধির পূর্বাভাসও দিয়েছেন ফেরোলি। তাঁর আশঙ্কা, চলতি বছরে আমেরিকার অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হলে বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে উঠে যেতে পারে।

এদিকে ২ এপ্রিল নতুন শুল্কনীতি ঘোষণার আগেই গোল্ডম্যান স্যাকস পূর্বাভাস দেয়। তারাও মন্দার আশঙ্কা ২০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করে এবং তারা বলে, অর্থনীতির মৌলভিত্তিগুলো আগের বছরের মতো অতটা শক্তিশালী নয়।

বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি জানিয়েছে, মন্দার আশঙ্কা নিয়ে আলাপ-আলোচনা আরও বাড়বে। তারা আরও বলেছে, ইতিমধ্যে শেয়ারবাজার, বন্ড ও মুদ্রাবাজারের যে অবস্থা, তাতে মন্দার বাস্তবতা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এইচএসবিসির বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে শেয়ারবাজার পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেই পর্যবেক্ষণ থেকে তাঁরা বুঝতে পারছেন, বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে মনে করছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ মন্দা আসার আশঙ্কা প্রায় ৪০ শতাংশ। এই আশঙ্কার কারণেই শেয়ারের বর্তমান দাম এবং বাজারে বিনিয়োগকারীদের কার্যকলাপ কিছুটা প্রভাবিত হচ্ছে; অর্থাৎ মন্দা আসার আশঙ্কা মাথায় রেখেই বাজারে কেনাবেচা চলছে।

এর মানে এই নয় যে মন্দা নিশ্চিতভাবেই আসবে, তার আশঙ্কা ৪০ শতাংশ; বরং শেয়ারবাজার বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে আছে, তা সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে।

এ ছাড়া অন্যান্য গবেষণা সংস্থা যেমন বার্কলেস, বোফা গ্লোবাল রিসার্চ, ডয়েচে ব্যাংক, আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটস ও ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানও সতর্কতা জারি করেছে। তারা বলছে, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি জারি থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ মার্কিন অর্থনীতির মন্দার কবলে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে।

বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী, বুধবার গভীর রাতে বিভিন্ন দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের পণ্যে আরোপ করা হয়েছে ৩৭ শতাংশ শুল্ক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ৯ এপ্রিল থেকে এই বর্ধিত শুল্ক কার্যকর করা হবে। তবে কোনো দেশ যদি এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করতে চায়, সে পথও খোলা আছে।

ট্রাম্পের এই শুল্ক–সংক্রান্ত ঘোষণার পরই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। গত ১১ মাসে এই পরিমাণ ধস হয়নি। মাত্র দুই ধাপে ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার সমপরিমাণ বাজার মূলধন কমেছে।

শুল্ক আরোপের ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি অনেক কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের পূর্বাভাস, আমদানি কমতে পারে অন্তত ২০ শতাংশ। সার্বিক ভাবে মার্কিন অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া ট্রাম্পের শুল্কের জবাবে অন্যান্য দেশ যদি মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে রপ্তানির বাজারও মার খাবে। ইতিমধ্যে চীন মার্কিন পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প শ য় রব জ র র আশঙ ক মন দ র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

ডেইলি স্টার-এইচএসবিসি সম্মাননা পেলেন কৃতী শিক্ষার্থীরা

ও-লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে ডেইলি স্টার এবং এইচএসবিসি ব্যাংক। গতকাল শনিবার পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আগামীর রাষ্ট্রনির্মাতাদের অভিবাদন’ (স্যালুটিং দ্য নেশন বিল্ডার্স অব টুমোরো)।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধনাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ছাড়াও তাদের অভিভাবক, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্‌ফুজ আনাম।

এ বছর এডেক্সেল এবং কেমব্রিজ কারিকুলামের অক্টোবর–নভেম্বর ২০২৩, জানুয়ারি ২০২৪, মে–জুন ২০২৪ এবং অক্টোবর–নভেম্বর ২০২৪ সেশনের মোট ২ হাজার ৩৭৫ জন শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ও-লেভেলে ১ হাজার ৮২৪ জন এবং এ-লেভেলে ৫৫১ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ও-লেভেলে বিশ্ব পর্যায়ে সেরা ৬৭ জন এবং দেশসেরা ৬২ জন রয়েছেন। এ ছাড়া এ-লেভেলে বিশ্ব পর্যায়ে সেরা ১৫ জন এবং দেশসেরা ৩২ জন শিক্ষার্থীকে সম্মান জানানো হয়।

সারা দেশের ১১২টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে। কেমব্রিজ পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরপর দুটি ও-লেভেল সেশনে কমপক্ষে ছয়টি এ গ্রেড এবং এ-লেভেলে তিনটি এ গ্রেড অর্জনকারীরা সংবর্ধনা পেয়েছেন। এ ছাড়াও আইজিসিএসই পরীক্ষায় এক বা দুটি ধারাবাহিক সেশনে ছয়টি বিষয়ে সাত বা তার বেশি গ্রেড অর্জনকারী এবং আইএএল-এ এক বা দুটি ধারাবাহিক সেশনে তিনটি এ বা তার বেশি গ্রেড অর্জনকারীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্‌ফুজ আনাম কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।

এইচএসবিসি বাংলাদেশের হেড অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়েলথ অ্যান্ড প্রিমিয়ার ব্যাংকিং /তানমি হক, আইডিপি এডুকেশন বাংলাদেশ লিমিটেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজিব মাহবুবুল, পিয়ারসন এডেক্সেল, বাংলাদেশ ও নেপালের আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল মামুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল বলেন, ‘বড় স্বপ্ন দেখো এবং সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টা করো। সব সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করো আমি কি শুধু নিজের জন্যই বাঁচব, নাকি অন্যদের জন্যও? আর যদি অন্যদের জন্য বাঁচার সিদ্ধান্ত নাও, তবে সেটা যেন তোমার দেশের মানুষের জন্য হয়।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘তোমরা চাইলেই উন্নত কোনো দেশে গিয়ে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারো, কিন্তু যদি তা করো, তবে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি, তা কখনো বাস্তবায়িত হবে না। জাতি গঠনে আমাদের সবারই একটা ভূমিকা আছে, এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। আর আমার প্রধান অনুরোধ হলো, তোমরা দেশের সেবা করো।’

মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘তোমরা যদি সত্যিকার অর্থেই আগামীর জাতি-নির্মাতা হতে চাও, তবে প্রথমেই তোমাদের দেশকে ভালোবাসতে হবে।’

অনুষ্ঠানে শিখোর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শাহির চৌধুরী, অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা রাহাত আহমেদ এবং টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আয়মান সাদিক তিনটি পৃথক অনুপ্রেরণামূলক সেশনে অংশ নেন।

এই আয়োজনের টাইটেল স্পনসর এইচএসবিসি ব্যাংক। একাডেমিক পার্টনার হিসেবে পিয়ারসন এডেক্সেল এবং এডুকেশন পার্টনারের দায়িত্বে ছিল আইডিপি।

ডেইলি স্টার ১৯৯৯ সাল থেকে এই ব্যতিক্রমী বার্ষিক আয়োজনটি করে আসছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডেইলি স্টার-এইচএসবিসি সম্মাননা পেলেন কৃতী শিক্ষার্থীরা