৩০ বছর পর পদ্মাপাড়ে মিলনমেলায় হাজারো বন্ধু
Published: 5th, April 2025 GMT
৩০ বছর আগে ১৯৯৫ সালে যাঁরা এসএসসি পাস করেছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই দীর্ঘদিন দেখা-সাক্ষাৎ নেই। কে কেমন আছেন, কোথায় কাজ করছেন, তা–ও জানেন না অনেক বন্ধু। একসময়কার অতিপ্রিয় এই সহপাঠী, সহযাত্রীদের খোঁজ নিতে ৩০ বছর পর বন্ধুরা মিলিত হয়েছেন পদ্মা নদীর তীরে।
আজ শনিবার শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবায় পদ্মা সেতুর পাশে বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলার বন্ধুদের পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছে। ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসএসসি ১৯৯৫ ব্যাচের বন্ধুরা এতে যোগ দেন।
সকালে পদ্মার ইলিশ ও নানা পদের ভর্তা দিয়ে বন্ধুদের আপ্যায়ন করা হয়। এরপর চলে পরিচিতি পর্ব ও আনন্দ আড্ডা। দীর্ঘ বছর পর বন্ধুদের কাছে পেয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্মৃতিচারণা করেন বন্ধুদের সঙ্গে। ফাঁকে ফাঁকে গ্রামীণ নানা ধরনের খাবারের আয়োজন রাখা হয়। মঞ্চে নাচ, গান ও কবিতা পরিবেশন করেন বন্ধুরা। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
জাজিরা মোহর আলী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি ১৯৯৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান ও ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। ৩০ বছর পর ওই দুই বন্ধুর দেখা হয়েছে। তাঁরা একে অপরকে আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরেন।
মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছর এলাকার প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি, খেলাধুলা করেছি। জীবনের মধুময় শৈশব ও কৈশোর একসঙ্গে পার করেছি। উন্নত জীবন গড়তে গিয়ে ও কর্মজীবনে প্রবেশ করে বাল্যবন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। এভাবে কখনো প্রাণের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে তা ভাবতে পারিনি।’
ঢাকার সাভারে ব্যবসা করেন আনোয়ার হোসেন। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সেখানে বসবাস করেন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাল্য বন্ধুদের যে স্মৃতি, তা আমাদের সব সময় উজ্জীবিত করে রাখে। দীর্ঘ বছর ধরে সেই বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম, যা অনেক কষ্টের ও বেদনার। আজ প্রাণের বন্ধুদের পেয়ে সব দুঃখ–কষ্ট দূর হয়ে গেছে।’
বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী উপপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন শাহিন সরদার ও শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসনের কর্মরত আছেন পলাশ দাস। তাঁরা দুজনেই ১৯৯৫ সালে নড়িয়ার বিঝারী উপসী তারাপ্রসন্ন উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। পরীক্ষার পর আর দুই বন্ধুর দেখা হয়নি। ৩০ বছর পর দুই বন্ধু মিলিত হয়েছেন জাজিরার নাওডোবায় পদ্মার পাড়ে বন্ধুদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে।
শাহিন সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩০ বছর পর বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসা বিনিময় করেছি। বন্ধুকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত হয়েছি। দীর্ঘ বছর পর এমন একটি মুহূর্ত আমাদের আজীবন মনে থাকবে।’
পলাশ দাস বলেন, ‘আমাদের জীবনটি যান্ত্রিকতায় স্থবির হয়ে গিয়েছে। এমন একটি মুহূর্তে শৈশব ও কৈশোরের বন্ধুদের কাছে পেয়ে আত্মহারা হয়ে পড়েছি। ফেলে আসা নানা সুখ-দুঃখের ঘটনার স্মৃতিচারণা করতে পেরেছি। জীবনের এমন একটি পর্যায়ে এসে এমন অনুষ্ঠান স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে।’
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৯৫ এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দেশের নানা সেক্টরে কর্মরত। স্কুলজীবনের পরে অনেকের সঙ্গেই আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়ে উঠছিল না। সবাইকে একত্র করার জন্য বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচটি জেলার সব স্কুলের বন্ধুদের একত্র করার জন্যই এই আয়োজন করা হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের যোগাযোগের বন্ধন সৃষ্টি করেছে। সে কারণে বন্ধুত্বের বন্ধনের মিলনমেলাটি সেতুর কাছে পদ্মার পাড়ে করেছি। আনন্দ-আড্ডা, স্মৃতিচারণা, খাবারদাবার ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি উৎসবে রূপ নিয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র বন ধ দ র অন ষ ঠ ন আম দ র ই বন ধ বন ধ র ল ত হয়
এছাড়াও পড়ুন:
জন্মনিবন্ধনের তথ্য বলছে, বরিশালে র্যাবের অভিযানে নিহত ও আহত দুজনের বয়স ১৭
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সাদা পোশাকে র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিতে হতাহত দুজনই জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী শিশু-কিশোর।
যদিও নিহত কলেজছাত্র সিয়াম মোল্লার বয়স ২২ ও আহত এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিব মোল্লার বয়স ২১ বছর বলে উল্লেখ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন ও র্যাবের পক্ষ থেকে করা মামলায় তাদের ওই বয়স উল্লেখ করা হয়।
দুই শিক্ষার্থীর বয়স বাড়িয়ে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকাসক্ত ছিল না বলে দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে উজিরপুরের সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
নিহত সিয়াম এই বিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পাস করে একই এলাকার আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাকিব মোল্লা এই বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্য অনুযায়ী, নিহত সিয়ামের জন্ম ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন ২১ এপ্রিল তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর ১ মাস ২৮ দিন। আর রাকিবের জন্ম ২০০৭ সালের ১ আগস্ট। সেই হিসাবে তার বয়স ১৭ বছর ৮ মাস ২০ দিন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দুজনই শিশু-কিশোর।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাব-৮-এর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বয়সের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই এ ধরনের বিভ্রম হতে পারে। কারণ, অভিযানে যাওয়া র্যাবের সদস্যরা ওই দুজনকে চিনতেন না। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার জন্য অভিযানে গেলে সেখানে মাদক ব্যবসায়ী ১০-১১ জন মিলে র্যাব সদস্যদের ওপর হামলা করেছিলেন। এ জন্য আত্মরক্ষার্থে তাঁরা গুলি করতে বাধ্য হন। হামলায় র্যাবের দুজন সদস্যও আহত হয়েছেন।
র্যাবের অভিযানে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত ও এক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে উজিরপুর উপজেলার সাহেবেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে