সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে: প্রধান বিচারপতি
Published: 5th, April 2025 GMT
সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।’
‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা’ শীর্ষক এক আঞ্চলিক সেমিনারে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ উদ্যোগে আজ শনিবার সকাল ১০টায় রংপুরের জি এল রয় রোডের গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে সেমিনারটি হয়। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সেমিনারে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘পৃথক সচিবালয় বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। প্রস্তাবিত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় বিচারিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
‘কখনো ক্ষমতার পূর্ণ পৃথক্করণের লক্ষ্যের এতটা কাছাকাছি আসিনি’
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘বিচারিক সংস্কার শুধু বিভিন্ন খাতভিত্তিক সংস্কারের স্থায়িত্বের মূল চাবিকাঠিই নয়, বরং এটি এখন নিজেই ‘সংস্কার’ শব্দের প্রতীক হয়ে উঠেছে। বিচার বিভাগ হলো রাষ্ট্রের একমাত্র অঙ্গ, যা বহু দশক ধরে নিজের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এই দাবির কেন্দ্রে রয়েছে নিজেদের সংস্কার কর্মসূচি নিজেরাই নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব। গত আট মাসে এই প্রচেষ্টা অভূতপূর্ব গতি অর্জন করেছে। এখন লক্ষ্য হলো সেই উদ্দেশ্য পূরণ করা এবং তা যেন ভবিষ্যতেও টিকে থাকে, তা নিশ্চিত করা।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে, আমরা কখনো ক্ষমতার পূর্ণ পৃথক্করণের লক্ষ্যের এতটা কাছাকাছি আসিনি। যদি এই সুযোগ কোনোভাবে নষ্ট হয়, তবে তা বিচার বিভাগের মর্যাদা, অখণ্ডতা এবং প্রাসঙ্গিকতার জন্য চরম ক্ষতিকর হবে।’
বিচার বিভাগ সংস্কারকে অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করার জন্য দেশের সব পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।
ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিতকরণে বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি তিনি তাঁর নিজের ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিবরণও তুলে ধরেন। বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারসংক্রান্ত রোডম্যাপের পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ জুলাই ২০২৪-উত্তর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সংস্কার রোডম্যাপ প্রচেষ্টাকে টেকসই করার উপায় উদ্ভাবনের আহ্বানপ্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় সংস্কার রোড শো তথা আঞ্চলিক সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে দেশের ডিস্ট্রিক্ট জুডিসিয়ারিগুলো নিজ নিজ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, যা বিচার সেবার মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। প্রধান বিচারপতি ঘোষিত সংস্কার রোডম্যাপ প্রচেষ্টাকে টেকসই করার উপায় উদ্ভাবনে দেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি। সভাপতিত্ব করেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক।
সেমিনারে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা অংশ নেন। এ ছাড়া রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সরকারি কৌঁসুলি, পাবলিক প্রসিকিউটরসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা সেমিনারে অংশ নেন।
স্বাগত বক্তব্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে থাকার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অসচেতনতায় হাতছাড়া মালিকানার হিস্যা
দেশের পাঁচজন চলচ্চিত্র প্রযোজক ৬ এপ্রিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। তাদের দাবি, ভুল বুঝিয়ে চলচ্চিত্রের মালিকানা স্বত্ব লিখে নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সেগুলো সম্প্রচার করে তারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। কিন্তু প্রযোজকরা হিস্যা পাচ্ছেন না। সম্প্রতি বাংলাদেশের জনপ্রিয় টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারত নিজেদের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের তালিকাভুক্ত করে। কিন্তু বাংলাদেশ এ পণ্যের স্বীকৃতির আবেদনই করেনি। ভারত তালিকাভুক্ত করার পর টনক নড়ে।
জিআই পণ্য প্রিমিয়াম হিসেবে প্রমাণ হলে পণ্যের মূল্যমান ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। এভাবে মেধাস্বত্ব সম্পর্কে সচেতন না থাকায় ব্যক্তিগত ও জাতীয়ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। মেধাস্বত্ব ধরে না রাখায় ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি সবকিছুই নিজেদের পণ্যের মালিকানা অন্যরা নিয়ে নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ ২৬ এপ্রিল পালিত হচ্ছে বিশ্ব মেধাস্বত্ব (আইপি) দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও একযোগে পালিত হচ্ছে দিবসটি। মেধাস্বত্ব দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য– ‘আইপি অ্যান্ড মিউজিক: ফিল দ্য বিট অব আইপি’।
প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক কিংবা কপিরাইট বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) সাধারণ পরিষদে মেধাস্বত্ব দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য ২৬ এপ্রিল তারিখটি বেছে নেওয়া হয়। কারণ, ১৯৭০ সালের এই দিনে ডব্লিউআইপিওর প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
মেধাস্বত্ব জায়গা-জমির মতোই সম্পত্তি বা সম্পদ। তাই এর নিবন্ধন প্রয়োজন। এতে ওই ব্যক্তি এবং উত্তরাধিকারী এর সুফল ভোগ করবেন। আইন অনুসারে, উদ্ভাবক তাঁর জীবনকাল ও তাঁর মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত এর মালিকানা ভোগ করতে পারবেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে বাণীতে বলেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে মেধাসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার ও মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। সংগীত শিল্পের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যে শক্তিশালী সংযোগ গড়ে তুলতে মেধাসম্পদ আইন ও নীতির যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন। এতে শিল্প ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।
সাধারণভাবে মেধাস্বত্বকে কপিরাইট, পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক, ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) প্রভৃতি বিভিন্ন আঙ্গিকে ভাগ করা হয়। কপিরাইট কাজ করে শৈল্পিক বিষয়ের ক্ষেত্রে। পেটেন্ট নির্ধারণ করে দেয় মালিকানাস্বত্ব। ট্রেডমার্ক হলো এমন এক নিদর্শন, যা পণ্য বা সেবাকে অন্য পণ্য বা সেবা থেকে পৃথক করে। ভৌগোলিক (জিআই) হলো ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সুরক্ষার অন্যতম হাতিয়ার।
বর্তমানে বাংলাদেশের জিআই পণ্যের মধ্যে আছে জামদানি, ইলিশ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ইত্যাদি।