নির্বাচনের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেললেই গণতন্ত্র হয় না: নুসরাত তাবাসসুম
Published: 5th, April 2025 GMT
নির্বাচনের কথা বলে মুখে ফেনা তুললেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম। তিনি বলেন, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বহির্বিশ্বের যে সম্মান বাংলাদেশের জন্য এনে দিচ্ছেন এবং দেশের সংস্কারে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কাজ করে যাচ্ছেন, একটি রাজনৈতিক দলের অতিসাধারণ একটি অংশ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, এসমস্ত সংস্কারের দরকার আছে বাংলাদেশের।
শুক্রবার বিকেলে কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার জুলাই যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নুসরাত তাবাসসুম। তিনি বলেন, যারা রক্ত দিয়ে শরীরের ব্যথা দিয়ে আমাদেরকে যে স্বাধীনতার সুখ এনে দিয়েছে তার কাছে এই সামান্য সম্মাননা কোনো মূল্যই রাখতে পারে না। আমরা তাদেরকে এমন একটি বাংলাদেশ উপহার দেব, যে বাংলাদেশে তারা অনেক ভালোবাসা পাবে, দোয়া পাবে। তবেই তাদের প্রতিদান দেওয়া সম্ভব হবে।
উপস্থিত জুলাই যোদ্ধাদের উদ্দেশে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা কি শুধু এজন্য রাজপথে নেমেছিলেন যে চাদাবাজির মানুষগুলো পরিবর্তন হয়ে যাবে, একটা যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে এ-এর জায়গায় বি ক্ষমতায় বসবে, একজন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে প্রধানমন্ত্রী ছিল আরেকজন একইরকম ক্ষমতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ে যা খুশি করবে? উপস্থিত সবাই ‘না’ বলে সমস্বরে জবাব দেন।
শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা মো.
মিরপুরের আমলাতে শুক্রবার এ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি মিরপুর উপজেলা শাখা এবং স্থানীয় পাঠাগার ‘পাঠক সমাদর’। এসময় বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মিরপুর উপজেলা প্রতিনিধি কমিটির সদস্য শামসুল আরেফিন স্ট্যালিন ও পাঠক সমাদরের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসির আরাফাত। জুলাই যোদ্ধা আবু সাঈদ, এস এম শফিউল ইসলাম, শাহিনুল ইসলাম ও নাহিদ হোসেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি কমিটির সদস্য রায়ান হাসান, মিরপুর উপজেলা কমিটির প্রতিনিধি সদস্য শাহীন পারভেজ, পাঠক সমাদরের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মনিরুল ইসলাম ও নাজমুল খান জনি এবং এস এম আকাশসহ শতাধিক লোকজন গতকালের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির জেলা প্রতিনিধি কমিটির সদস্য মো. মিজানুর রহমান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন কম ট র সদস য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শাসনব্যবস্থায় গণতন্ত্রের ঘাটতিতে: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গত ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় গণতন্ত্রের ঘাটতির কারণে ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে আম জনতার দলের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘গত ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের শাসনকাঠামো গণতন্ত্রের যে ঘাটতি আমরা লক্ষ করছি, প্রতিষ্ঠানের যে দুর্বলতা লক্ষ করেছি, সেগুলোর ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সে কারণে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যাতে আমাদের পুনর্বার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে না হয়, পুনর্বার যাতে প্রাণ দিতে না হয়, পুনর্বার যেন গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার মোকাবিলা করতে না হয়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে এমন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা দরকার, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশর ভবিষ্যতের পথরেখা নির্মাণ করা যাবে।
তিনি বলেন, আমরা ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের মাধ্যমে অগ্রসর হয়েছি, তার নিপীড়ন মোকাবিলা করেছি সবাই, প্রত্যেক নাগরিক, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক দলের বাইরে যাঁরা, তাঁরা সবাই মোকাবিলা করেছেন।
আমজনতার দলের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৩৮টিতে একমত, ১২টিতে দ্বিমত, ১৫টিতে আংশিকভাবে একমত এবং ১টিতে মতামত দেয়নি বলে জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে আছেন—কমিশনের সদস্য সফররাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান। আমজনতার দলের সভাপতি মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে আছে।
গণপরিষদের (একাংশ) থেকে নাম পরিবর্তন করে আমজনতার দল করার কারণে সংলাপের প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে জানিয়ে সূচনা বক্তব্যে মিয়া মশিউজ্জামান বলেন, স্প্রেডশিটে দেওয়া মতামতের কিছু পরিবর্তন হবে। এটা আপনাদের জন্য অসুবিধা হবে। আগের দেওয়া মতামতের কয়েকটা জায়গায় পরিবর্তন করতে চাই।
আজকের বৈঠকের সংবিধান, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে চান বলে জানান মিয়া মশিউজ্জামান। তিনি বলেন, আশা করি আমাদের আলাপ ফলপ্রসূ হবে। জাতির জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনায় অবদান রাখতে পারব।
আমজনতার দলের সভাপতি মিয়া মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, কার্যকরী সদস্য সাধনা মহল এবং তামান্না শিখাসহ ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
উল্লেখ্য, প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়।
ইতোমধ্যে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে। আমজনতার দলসহ এ পর্যন্ত ১৬টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করেছে কমিশন।