যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে এনবিআর যা করছে
Published: 5th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর কমানো যায় কি না, তা পর্যালোচনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বিষয়ে এনবিআরের একটি দল কাজ করছে। আগামীকাল রোববার এ নিয়ে বৈঠক হবে।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বেশির দেশের পণ্যে এমন শুল্ক আরোপ করেন তিনি। যে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি বেশি, সেই দেশের ওপর বেশি হারে শুল্ক আরোপ হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। বাণিজ্যঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো যে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য যায়, সে দেশে উচ্চ শুল্ক হারসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য বাধা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন শুল্ক আরোপের ঘটনায় বাংলাদেশও উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আড়াই হাজারের মতো পণ্য বছরে আসে। সেসব পণ্যের ওপর শুল্ক-কর কত, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এসব শুল্ক-কর কমানোর সুযোগ আছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব সেবা আমদানি করা হয়, সেখানেও শুল্ক-কর কমানোর বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা লিজের পণ্যেও শুল্ক-কর সুবিধা বাড়ানো যায় কি না, তা–ও দেখছে এনবিআর।
এনবিআর কর্মকর্তারা শুধু আমদানি শুল্ক পর্যালোচনা করবেন না, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম কর—এসব শুল্ক-করও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, এই ধরনের শুল্ক আরোপে করণীয় কী, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনবিআর। পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক-কর কমানোর বিষয়টিও আলোচনা করা হবে।
এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা জানান, শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করলেই পণ্যের ওপর আলাদা করে শুল্ক-কর কমানোর সুযোগ নেই। এইচকোডে (পণ্যের শ্রেণি বিভাজন) থাকা পণ্য ও সেবা ধরে শুল্ক-কর কমাতে হয়। যে দেশ থেকেই ওই সব পণ্য আনা হোক না কেন, হ্রাসকৃত শুল্ক-কর আরোপ হবে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যা আমদানি হয়গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ হাজার ৫১৫টি এইচএসকোডের পণ্য আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে আট ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে ৬৭ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যভান্ডারে দেখা যায়, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য আমদানি করেছে ২৬২ কোটি ডলারের পণ্য। এর মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানিতে কোনো শুল্ক-কর দিতে হয়নি। যেমন গম, তুলার মতো পণ্যে শুল্ক-কর নেই। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে গড়ে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে কাস্টমস শুল্ক-কর আদায় করেছে ১ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রড তৈরির কাঁচামাল—পুরোনো লোহার টুকরা বা স্ক্র্যাপ। গত অর্থবছরে পণ্যটি আমদানি হয় ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া মোট পণ্যের প্রায় ২৭ শতাংশ। গড়ে ৪ শতাংশ শুল্কহার রয়েছে পুরোনো লোহার পণ্য আমদানিতে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য এলপিজির উপাদান বিউটেন আমদানি হয়েছে ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের। বাংলাদেশের শুল্কহার গড়ে ৫ শতাংশ।
তৃতীয় সর্বোচ্চ আমদানি সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে ৩২ কোটি ডলারের। এই পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর নেই।
চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা। এই পণ্য আমদানি হয়েছে ২৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের। এটিতেও শুল্ক-কর নেই।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির তালিকায় আরও রয়েছে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, হুইস্কি, গাড়ি, গম, উড পাল্প, পুরোনো জাহাজ, সয়াকেক, কাঠবাদাম ইত্যাদি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের তীব্র নিন্দা
সুদানে জাতিসংঘের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় ছয় শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর লজিস্টিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে নৃশংস ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।’
সুদানের কোরদোফান অঞ্চলের কাদুগলি শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ভবনটিতে গতকাল শনিবার এ হামলা হয়।
গুতেরেসের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন।
গুতেরেস বলেন, ‘দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
হামলায় নিহত শান্তিরক্ষীদের সবাই বাংলাদেশি। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন। হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।সুদানের সেনাবাহিনী ওই হামলার দায় র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর ওপর চাপিয়েছে।
সুদানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে এ লড়াই চলছে।
আরএসএফ তাৎক্ষণিকভাবে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এ হামলা বিদ্রোহী মিলিশিয়া এবং এর পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদের ধ্বংসাত্মক কৌশলের স্পষ্ট প্রকাশ।
সুদান সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওতে একটি স্থান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তারা বলেছে, এটি জাতিসংঘের স্থাপনা।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহত হওয়ার এ ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।.আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মহাসচিবযেখানে হামলা হয়েছে, সেই তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল আবেই নিয়ে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ২০১১ সালে সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর থেকে সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন মোতায়েন রয়েছে।
দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত আবেই বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদার অঞ্চল।
সুদানের আবেই অঞ্চলে একটি সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন জাতিসংঘের একজন শান্তিরক্ষী