জেরুজালেমে জন্মগ্রহণকারী তারিফ খালিদি একজন আরবি ভাষা, ইসলাম ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ। ৮৬ বছর বয়সী এই পণ্ডিত এখন লেবাননে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতের শেখ জায়েদ চেয়ার ইন অ্যারাবিক ও ইসলামিক স্টাডিজের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর হাত দিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফের একটি নতুন ইংরেজি তরজমা প্রস্তুত হয়েছে। প্রকাশ করেছে বিখ্যাত পেঙ্গুইন প্রকাশনা সংস্থা।
কোরআনের ইংরেজি অনুবাদের ইতিহাস প্রায় ৩০০ বছরের। এর মধ্যে জর্জ সেলের অনূদিত দ্য কোরআন, কমনলি কলড দ্য আলকোরান অব মুহাম্মদ প্রকাশিত হয় আজ থেকে ২৯০ বছর আগে। এটিই প্রথম সরাসরি আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ, যা লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে যত ইংরেজি অনুবাদ হয়েছে, তার বড় অংশই সেলের অনুবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে বলে খালিদি তাঁর অনূদিত কোরআনের ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুনইসলামী সভ্যতার পনেরোটি নগরের কাহিনী২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩আবার ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত এ জে আরবারির দ্য কোরআন ট্রান্সলেটেড মূল আরবি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে কাব্যিক বা ছন্দময়তা বজায় রাখার চেষ্টা করে। খালিদি বলেছেন যে এর মধ্যে দিয়ে কোরআনের ইংরেজি অনুবাদ একমাত্রিক গদ্য অনুবাদের ধারা থেকে বেড়িয়ে এসেছে। তাঁর নিজের অনুবাদেও একইভাবে গদ্যের প্রাধান্য না দিয়ে তিনি অনেকটাই কাব্যিক ঢঙের আশ্রয় নিয়েছেন।
খালিদি ভূমিকাতে আরও বলেছেন যে কোরআন এমন একটি ধর্মগ্রন্থ যা একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, অন্যদিকে তেমনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘এটি এমন একটি বিশ্বাসকে পাঠ করার আহ্বান জানায় যা দুনিয়া প্রথমবার সৃষ্টির পরই আবির্ভূত হয়েছে। এটি আল্লাহর সঙ্গে তাঁর বান্দার অশেষ কথোপকথনকে সুচিন্তিতভাবে পাঠ করায়, যেখানে তাঁকে মান্য করার, স্মরণ করার, চিন্তা করার, পর্যবেক্ষণ করার ও যুক্তিসংগতভাবে কল্পনা করার জন্য বান্দার সক্ষমতার ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুনবিশ্ব–পটভূমিতে মহানবী (সা.)-এর জীবন০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর ধাপে ধাপে ওহি আকারে বিভিন্ন আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যার পরিপূর্ণ রূপ হলো কোরআন। এই ওহি নাজিলের বিষয়ে খালিদি ইবনে খালদুনের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। খালদুনের মতে, ‘নবী-রাসুলদের আত্মা মানবের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করে, আর তাই তা ফেরেশতাদের সঙ্গে কখনো কখনো মিশে যায়। আল্লাহ নবী-রাসুলদের আত্মাকে এমন একটা পর্যায়ে উত্তরণের অনুমোদন দিয়েছেন যেখানে গিয়ে তাঁরা ঐশ্বরিক বাণী গ্রহণ করতে পারেন এবং তা বিভিন্ন রূপে। সে কারণেই মুহাম্মদ (সা.) যখন ওহি নাজিলের সময় যন্ত্রণাক্লিষ্ট হতেন, তখন আসলে তাঁর আত্মা মানব রূপ ছেড়ে ফেরেশতা রূপ ধারণ করত। আর তাই কোরআন ওপর থেকে নিচে অবতীর্ণ হওয়ার এবং রাসুলের তা গ্রহণের জন্য উপরে ওঠার মাধ্যমে সৃষ্ট।’
এ অনুবাদের ভূমিকায় কোরআন সংকলনের ইতিহাস খুব সংক্ষেপে বর্ণনা করার পাশাপাশি কোরআনের ভাষা শৈলী ও গঠন কাঠামোর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
দ্য কোরআন; তারিফ খালিদি; পেঙ্গুইন ক্লাসিকস, লন্ডন, ইংল্যান্ড, ২০০৯
আরও পড়ুনহারানো মুসলিম সভ্যতার খোঁজে১৯ আগস্ট ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘পুরোটাই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে, ডুবে যাচ্ছি, আবার ভেসে উঠছি’
নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র ও চলচ্চিত্র বানিয়ে ১৮ বছর পার করেছেন আদনান আল রাজীব। পরিচালক হিসেবে সবচেয়ে মন ভালো করা খবরটি পেলেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনীত হয়েছে তাঁর পরিচালিত সিনেমা ‘আলী’। সিনেমাটির দৈর্ঘ্য ১৫ মিনিট।
গতকাল বিকেলে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের তালিকা ঘোষণা করে কান উৎসব কর্তৃপক্ষ। এর কাছাকাছি সময়ে নির্মাতা রাজীবও ফেসবুকে সুখবরটি জানান। সহকর্মী থেকে শুরু করে বিনোদন অঙ্গনের শুভাকাঙ্ক্ষীরা আদনানের এ খবরে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কানে তাঁর সিনেমার মনোনয়ন নিয়ে জানতে চাইলে উচ্ছ্বসিত আদনান প্রথম আলোকে বলেন, এবারই প্রথম কান উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের কোনো ছবি জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। অদ্ভুত একটা অভিজ্ঞতা। পুরোটাই স্বপ্নের মতো। মনে হচ্ছে, ডুবে যাচ্ছি, আবার ভেসে উঠছি। বোঝানো যাবে না, হার্টবিট (হৃৎস্পন্দন) বেড়ে যাচ্ছে। কান চলচ্চিত্র উৎসব পৃথিবীর অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর। জানতে পেরেছি, সাড়ে চার হাজার চলচ্চিত্র থেকে আমাদেরটা নির্বাচিত হয়েছে। এটা আসলে কল্পনাই করা যায় না।’
‘আলী’ ছবির শুটিং প্রসঙ্গে আদনান জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে সিলেটের বিভিন্ন লোকেশনে শুটিং করেছিলেন। টানা পাঁচ দিন কাজ করে শুটিং শেষ করেন।
সিনেমাটি উৎসবের কথা মাথায় রেখে বানিয়েছেন আদনান আল রাজীব। তবে তা যে কান উৎসব হবে, ভাবেননি তিনি। আদনান বলেন, ‘আমরা তো আসলে কখনোই কান উৎসবের কথা ভাবিনি। এটা তো স্বপ্নের মতো ব্যাপার। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটা ফিল্ম বানাব। এরপর একটা অভিনব ভাবনা মাথায় আসে। তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল, এই ভাবনা নিয়ে কাজ করি। আমাদের একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে, ক্যাটালগ নামে। বাংলাদেশ থেকে সেই প্রতিষ্ঠানে আছি আমি আর তানভীর, ফিলিপাইন থেকে আছে আমাদের আরও দুজন বন্ধু। চারজন মিলে গেল বছরে প্রতিষ্ঠানটা শুরু করি। শুরুর পর কোনো কাজ করা হচ্ছিল না। তারপর আমরা কাজ শুরু করলাম। ‘আলী’ গল্পটা বানালাম, যা আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রযোজনা। ফেব্রুয়ারিতে আমরা জমা দিই কান উৎসবে। এরপর জানতে পারলাম মনোনয়নের খবর।’
পরিচালক আদনান জানান, ‘আলী’ ছবিতে অভিনয় করেছেন আল আমিন। যিনি গান করেন এবং ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবেও পরিচিত। এ ছাড়া আছেন ইন্দ্রানী সোমা।
‘আলী’ কানে জায়গা করে নেওয়ায় আনন্দিত সংস্কৃতি উপদেষ্টা ও নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।