পদ্মায় নিখোঁজ স্বামী-স্ত্রীর লাশ ১৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার
Published: 5th, April 2025 GMT
পাবনায় ঈদের ছুটিতে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার পর পদ্মা নদীতে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ স্বামীর-স্ত্রীর মরদেহ ১৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করেছেন নৌ পুলিশ সদস্যরা ও স্থানীয় জেলেরা।
এর আগে শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সুজানগর উপজেলা সাতবাড়ি ইউনিয়নের কাঞ্চন পার্ক নামক স্থানে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। নিখোঁজের ১৬ ঘণ্টা পর শনিবার সকাল ১০টার দিকে সাতবাড়িয়া নামক স্থানে পদ্মা নদীর মাঝ থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন- পাবনা সদর উপজেলার চত্রাপুর ইউনিয়নের কোল চুরি গ্রামের দুলাল প্রামাণিকের ছেলে হৃদয় হোসেন (২৬) ও আতাইকুলা থানার বনগ্রামের মনিরুজ্জামান মানিকের মেয়ে মৌ খাতুন (২২)।
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিন মাস আগে হৃদয় ও মৌয়ের বিয়ে হয়। শুক্রবার তারা সাতবাড়িয়া কাঞ্চন পার্ক এলাকায় পদ্মা নদীতে নৌকায় ঘোরার সময় সেটি নদীর মাঝখানে ডুবে যায়। নৌকার অন্যান্য ব্যক্তিরা সাঁতার কেটে তীরে ফিরলেও হৃদয় দম্পত্তি নিখোঁজ হয়। পরে স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজি করলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
নাজিরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জয়ন্ত চন্দ্র দে বলেন, ঘটনা শোনার পর নো পুলিশ কাজ শুরু করে। জেলেদের মাধ্যমে আমরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প বন
এছাড়াও পড়ুন:
যেভাবে ভারত-পাকিস্তান সংকটের কেন্দ্র হয়ে উঠল ‘কাশ্মীর’
সাত দশকের বেশি সময় ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কাশ্মীর অঞ্চল। গত মঙ্গলবার কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের গুলিতে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর আবারও আলোচনায় এসেছে এই অঞ্চলটি।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ এবং পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই ভূখণ্ড নিয়ে দুটি যুদ্ধ করেছে। দুই দেশই এই অঞ্চলের পুরোটা নিজেদের দাবি করে, তবে নিয়ন্ত্রণ করে আংশিকভাবে।
চীনও এই অঞ্চলের কিছু অংশে শাসন পরিচালনা করে এবং এটি বিশ্বের অন্যতম অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সামরিকায়িত অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
২০১৯ সালে ভারতের পার্লামেন্ট এই অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে, যা এই অঞ্চলকে স্বায়ত্তশাসনের কিছুটা অধিকার দিয়েছিল।
তখন জম্মু-কাশ্মীর দুই অংশকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়।
এর পর থেকে ভারত সরকার বারবার দাবি করেছে যে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ থামানো গেছে। তবে মঙ্গলবারের মর্মান্তিক ঘটনার পর ভারত সরকারের সে দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সমালোচকেরা।
১৯৪৭ থেকে ইতিহাস
ব্রিটিশ শাসন থেকে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর সে সময়কার রাজকীয় শাসকদের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
তৎকালীন কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ছিলেন একজন হিন্দু শাসক, কিন্তু এই অঞ্চলটি ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই দুই দেশের মাঝে অবস্থিত এই অঞ্চল নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে পরিবহন এবং অন্যান্য পরিষেবা বজায় রাখার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
১৯৪৭ সালের অক্টোবরে, মুসলিমদের ওপর আক্রমণের খবরে এবং হরি সিংয়ের বিলম্ব করতে থাকা কৌশলে হতাশ হয়ে পাকিস্তানের নৃগোষ্ঠী কাশ্মীরে আক্রমণ করে।
মহারাজা হরি সিং তখন ভারতের সামরিক সহায়তা চেয়েছিলেন।
ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন বিশ্বাস করতেন যে কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে সাময়িকভাবে যুক্ত হলে শান্তি বজায় থাকবে এবং পরে তার চূড়ান্ত অবস্থান নিয়ে গণভোট হবে।
সেই মাসেই হরি সিং ‘অধিগ্রহণ চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন, যার মধ্য দিয়ে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতির নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী ভূখণ্ডের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে নেয়, আর পাকিস্তান উত্তরের বাকি অংশ দখল করে। ১৯৫০-এর দশকে চীন এ রাজ্যের পূর্ব অংশ আকসাই চিন দখল করে।
এই ‘অধিগ্রহণ চুক্তি’ আগে স্বাক্ষরিত হয়েছিল নাকি ভারতীয় সেনা আগে প্রবেশ করেছিল, সেটি এখনো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বড় বিতর্কের বিষয়।
ভারত জোর দিয়ে বলে যে মহারাজা হরিং সিং প্রথমে স্বাক্ষর করেছিলেন, ফলে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বৈধ। আর পাকিস্তান বলে, মহারাজা সৈন্য আগমনের আগে স্বাক্ষর করেননি, তাই ভারত ও মহারাজা পাকিস্তানের সঙ্গে হওয়া চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।
পাকিস্তান কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি গণভোট দাবি করে, আর ভারত বলে যে ধারাবাহিকভাবে রাজ্য ও জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কাশ্মীরিরা ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পাকিস্তান জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবের কথা বলে, যেখানে জাতিসংঘ পরিচালিত গণভোটের কথা বলা হয়েছে, তবে ভারত বলে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি অনুযায়ী সমস্যার সমাধান রাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই হতে হবে।
কয়েক দশক ধরে দুই পক্ষের এমন অবস্থানে খুব একটা নড়চড় হয়নি। এ ছাড়া কিছু কাশ্মীরি রয়েছে যারা স্বাধীনতা চায়, যেটা ভারত বা পাকিস্তান কেউই মেনে নিতে রাজি না। কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান ১৯৪৭-৪৮ এবং ১৯৬৫ সালে যুদ্ধ করেছে।
তারা সিমলা চুক্তিতে মূল যুদ্ধবিরতির যে রেখা ছিল সেটিকে নিয়ন্ত্রণ রেখা হিসেবে চূড়ান্ত করে, তবে এতে সংঘর্ষ বন্ধ হয়ে যায়নি। ১৯৯৯ সালে সিয়াচেন হিমবাহ অঞ্চলে আরও সংঘর্ষ হয়, যেটি ছিল নিয়ন্ত্রণরেখার বাইরে। ২০০২ সালেও দুই দেশ আবার যুদ্ধের কাছাকাছি চলে যায়।
১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে ইসলামপন্থীদের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। বিতর্কিত ‘সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন’ (এএফএসপিএ) চালু করে ভারত সেনাবাহিনীকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়।
এ আইন নিয়ে মাঝেমধ্যে পর্যালোচনা হলেও এটি এখনো ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে কার্যকর।
কাশ্মীরের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সময়
১৮৪৬ - কাশ্মীর রাজ্য গঠিত হয়।
১৯৪৭-৪৮ - পাকিস্তানি নৃগোষ্ঠী বাহিনীর হামলার পর কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সঙ্গে অধিগ্রহণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
১৯৪৯ - ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে কাশ্মীর ভাগ হয়।
১৯৬২ - আকসাই চিন সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ হয়। এতে ভারত পরাজিত হয়।
১৯৬৫ - দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়, যেটি যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদের উত্থান: জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়, যার লক্ষ্য ভারত ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরকে পুনরায় একত্র করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন।
১৯৭২- শিমলা চুক্তি: যুদ্ধের পর ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখা চূড়ান্ত করে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে একমত হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়।
১৯৮০-৯০ দশক: ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে সশস্ত্র প্রতিরোধ, গণবিক্ষোভ ও পাকিস্তান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়।
১৯৯৯ - কারগিল যুদ্ধ: পাকিস্তান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী ভারতের অধীন কারগিল অংশে অনুপ্রবেশ করলে ভারত ও পাকিস্তান আবার স্বল্পমেয়াদি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
২০০৮ – ভারত ও পাকিস্তান ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো নিয়ন্ত্রণরেখা পারাপারের বাণিজ্য রুট চালু করে।
২০১০ - ভারতশাসিত কাশ্মীরে ভারতবিরোধী বিক্ষোভে শতাধিক যুবক নিহত হন।
২০১৫ – রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণ: জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়, যখন তারা আঞ্চলিক মুসলিম পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে আংশিকভাবে জোট সরকার গঠন করে।
২০১৯ – ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামাতে ভারতের সেনাবাহিনীর বহরে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৪০ জন সেনা নিহত হন। অগাস্ট মাসে ভারত সরকার জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে, যা রাজ্যটিকে উল্লেখযোগ্য স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিল। এরপর রাজ্যটিকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তর করা হয়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা