অবিলম্বে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে
Published: 5th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করতে এই অবস্থান নেওয়া জরুরি।
প্রথমত, জরুরি ভিত্তিতে কূটনৈতিক পর্যায়ে বিষয়টি তুলতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উচিত হবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রগামী বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। অবিলম্বে এই কাজ শুরু করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে বাণিজ্য চুক্তি ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যেমন এলএনজি আমদানিতে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি করা উচিত।
তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুতা আমদানিতে জলবায়ু-নিয়ন্ত্রিত বন্ডেড ওয়্যারহাউস প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ বিষয়টি আমাদের জোরেশোরে তুলে ধরতে হবে যে মার্কিন সুতা আমদানিতে বাংলাদেশ শুল্ক আরোপ করে না।
চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ানোর সুযোগ খুঁজতে হবে; যেমন বিভিন্ন ধরনের শস্য, সয়াবিন ও অন্যান্য পণ্য। বাণিজ্যে ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে আমাদের অঙ্গীকার বোঝাতে এসব পণ্য আমদানি করা যেতে পারে।
পঞ্চমত, অনন্ত গ্রুপসহ অন্যান্য বাংলাদেশি শিল্পগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করে অন্তত ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে চায়, এ ধরনের ইতিবাচক খবর প্রচার করতে হবে।
বিষয়টি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা শঙ্কিত। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখতে তারা বাংলাদেশের সরবরাহকারীদের দাম কমানোর চাপ দিতে পারে। এই দেশগুলোতে এফওবি মূল্যের ওপর ১১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়; এটা বড় সুবিধা। ভারত, পাকিস্তানসহ মিসর, কেনিয়া ও তুরস্ক আগামী বছরের মধ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে।
এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিকারকদের জন্য বাংলাদেশ সরকার কী করতে পারে, তার জন্য কিছু নীতিগত পরামর্শ
১.
২. মুদ্রার অবমূল্যায়ন: বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা যেতে পারে, যদিও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আছে।
৩. বেতন ও চলতি পুঁজির জন্য ঋণ: পরিচালনাগত স্থিতিশীলতা রক্ষায় স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া যেতে পারে।
৪. এমএমএফ সরবরাহ ব্যবস্থায় উৎসাহ দেওয়া: কৃত্রিম সুতা দিয়ে পোশাক তৈরির অবকাঠামো নির্মাণে প্রণোদনা দেওয়া। নতুন অবকাঠামোর ওপর বর্ধিত হারে পরিষেবা মাশুল প্রত্যাহার; এ ধরনের নীতি উদ্যোগের রাশ টেনে ধরে।
শরিফ জহির, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অনন্ত গ্রুপ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানায় গ্যাস সরবরাহে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করবে সরকার: প্রেস সচিব
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের কারখানাগুলোতে স্বচ্ছন্দে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার দোহায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেছেন, ‘অনেকে বলেছেন, গ্যাসের অভাবে তারা কারখানা স্থাপন করতে পারছেন না। তাই, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করতে চাই যাতে পর্যাপ্ত গ্যাস (বিদেশ থেকে) আনা যায়।’
তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দোহা সফরের সময় কাতার এনার্জির সঙ্গে একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে মিগগির স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনালটি স্থাপন করা হবে। খবর-বাসস
প্রধান উপদেষ্টার দোহা সফর সম্পর্কে তিনি বলেছেন, এই সফর অত্যন্ত সফল এবং ফলপ্রসূ হয়েছে। আমি বলব এটি সবচেয়ে সফল এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় সফরগুলোর মধ্যে একটি।
শফিকুল আলম আশা প্রকাশ করেছেন, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনাম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসবেন। দেশের অর্থনীতির উত্থান-পতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময় ৩শ’ ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ ছিল, কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা কমিয়ে ৬০ কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে এসেছে।
প্রেস সচিব বলেছেন, অবশিষ্ট ঋণ কয়েক মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। তিনি আরও বলেছেন, ‘এটি বিশ্বের বাইরে ইতিবাচক সংকেতের অনুভূতি যে আমরা ব্যবসার জন্য প্রস্তুত।’ চার দিনের সফর শেষে প্রফেসর ইউনূস আজ শুক্রবার পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগদানের জন্য দোহা থেকে ইতালির রোমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।