আউট হয়েছেন ঋষভ পন্ত, সবাই তাকিয়ে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার দিকে।

আগের ম্যাচে পন্ত ২ রান করে আউট হওয়ার পর গোয়েঙ্কা মুখ গোমড়া করে ফেলেছিলেন। সেটি ছিল এবারের আসরে পন্তের টানা তৃতীয় ব্যর্থতা। এ নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। এবারের আইপিএলের আগে নিলাম থেকে রেকর্ড ২৭ কোটি রুপি দিয়ে পন্তকে কিনেছেন গোয়েঙ্কা। দাম আরও বেশি উঠলেও পন্তকেই নিতেন, এমনও বলেছিলেন লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের মালিক। সেই পন্ত মাঠে নামার পর প্রথম তিন ম্যাচে আউট হয়েছেন ০, ১৫ ও ২ রানে।

পন্তের মতো ব্যাটসম্যান আর হতাশ করবেন না বলে যাঁরা আশাবাদী ছিলেন, চতুর্থ ম্যাচে তাঁদের লজ্জাতেই ফেলেছেন পন্ত। গতকাল লক্ষ্ণৌতে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান ৬ বল খেলে হার্দিক পান্ডিয়ার নিরীহ এক বলে ক্যাচ তুলেছেন।

আরও একবার ২ রান করে যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, ক্যামেরা খুঁজে নিল গোয়েঙ্কাকে। লক্ষ্ণৌ মালিক নিজেও হয়তো জানতেন সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে। প্রথমে নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করলেন। পরে হেসেই দিলেন। আর কত মুখ গোমড়া করে থাকবেন!

ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত লক্ষ্ণৌ জিতলেও (১২ রানে) পন্তের টানা চতুর্থ ব্যর্থতার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর দাম নিয়ে আবারও হাসিঠাট্টা শুরু হয়েছে। ক্রিকেটবিষয়ক কিছু সাইট বসে গেছে পন্তের রানকে দামের পাল্লায় মাপামাপিতে। যেমন ওয়ানক্রিকেট একটা হিসাব কষে বের করেছে, পন্তের প্রতিটি রানের দামে ৪৭টি রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল কেনা যাবে।

দিল্লি ক্যাপিটালস ছেড়ে নিলামে ওঠা পন্ত গত বছরের মেগা নিলামে পেয়েছেন ২৭ কোটি রুপি দাম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৮ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে ম্যাচ ফিও পাবেন তিনি। তবে নিলামে যে দাম উঠেছে, সে অনুসারে ৪ ম্যাচে তাঁর পাওনা ৭ কোটি ৭১ লাখ বা প্রায় ১১ কোটি রুপি। এই চার ম্যাচে পন্তের ব্যাট থেকে এসেছে মোট ১৯ রান। অর্থ্যাৎ পন্তের কাছ থেকে প্রতি ৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় ১ রান করে পেয়েছে লক্ষ্ণৌ।

ওয়ানক্রিকেট মজার ছলে লিখেছে, পন্তের কাছ থেকে ফেরারি গাড়ির দামে অটোরিকশার পারফরম্যান্স পাচ্ছে লক্ষ্ণৌ। অর্থনীতির ভাষায় দলটি এরই মধ্যে ৪ ম্যাচে ৬.

৬৭ কোটি রুপি সুযোগ ব্যয় (অপরচুনিটি কস্ট) লোকসান করেছে। যে ধারা চলতে থাকলে সুযোগ ব্যয়ের ক্ষতি দাঁড়াবে ২৩ কোটি রুপি পর্যন্ত। পুরো দলের জন্য বেতন খাতে যে ব্যয়, তার প্রায় ২০ শতাংশ নেওয়া ব্যাটসম্যান যদি দলের মোট রানের মাত্র ২.৫৭ শতাংশ করেন, তবে তো ফেরারি–অটোরিকশার তুলনা আসারই কথা।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ফর্মে থাকা এনামুলে আত্মবিশ্বাসী গাজী আশরাফ

রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে সব আলো নিজের ওপর কেড়ে নিয়েছেন এনামুল হক বিজয়। দেশের ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির ফিফটি করার অনন‌্য নজিরও গড়েছেন। ফর্ম যখন তুঙ্গে তখন মুখে চওড়া হাসি ডানহাতি ব‌্যাটসম‌্যানের। সেই হাসির উপলক্ষ‌্য দ্বিগুণ করে দিয়েছেন নির্বাচকরা।

ফর্মে থাকা এনামুলকে জাতীয় দলে ফিরিয়েছেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে এনামুল ফিরেছেন জাকির হাসানের জায়গায়। সিলেটে দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয় ব‌্যর্থ হয়েছেন। এনামুল সেরা একাদশে সুযোগ পাবেন কি পাবেন না সেটা পরের বিষয়। গাজী আশরাফের আনন্দ, ‘‘ফর্মে থাকা একজন যিনি প্রতি ম‌্যাচেই রান করছেন তাকে আমরা পেয়েছি।’’

এনামুলের রেকর্ডই তার হয়ে কথা বলছে। চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রান ফোয়ারা ছুটিয়ে দিয়েছেন এনামুল। গতকালও করেছেন সেঞ্চুরি, আবাহনীর বিপক্ষে। ১৪ ইনিংসে ৮৭৪ রান করেছেন ৪টি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে। যেখানে তার গড় রান ৭৯.৪৫। রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার শীর্ষে, ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তার পরে ১৭৭ রান পিছিয়ে থেকে দুইয়ে অবস্থান করছেন পারভেজন হোসেন ইমন। ঢাকা লিগ দেশের একমাত্র লিস্ট ‘এ’ প্রতিযোগিতা। পঞ্চাশ ওভারের ফরম‌্যাট। সাদা বলের ক্রিকেটের পারফরম‌্যান্স লাল বলে ক্রিকেটে কতটা প্রভাব রাখবে সেই প্রশ্নও উঠতে পারে। জানিয়ে রাখা ভালো, সবশেষ জাতীয় ক্রিকেট লিগে এনামুলের লাল বলের পারফরম‌্যান্সও ছিল দারুণ। আসরে ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। খুলনা বিভাগের হয়ে ৫৩.৮৪ গড়ে ১ সেঞ্চুরি ও ৬ ফিফটিতে ৭০০ রান করেছিলেন ডানহাতি ব‌্যাটসম‌্যান।

আরো পড়ুন:

টেস্টে ম্যাচ প্রতি ৮ লাখ টাকা, তবুও শান্তদের ফর্মে খরা!

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে এনামুল

বিশ্লেষকরা বলেন রান করা অভ‌্যাসের বিষয়। যেকোনো প্রতিযোগিতায়, যেকোনো পর্যায়েই রান পেলে ব‌্যাটসম‌্যানদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এনামুলের থেকে সেই আত্মবিশ্বাসী পারফরম‌্যান্সটাই চান গাজী আশরাফ হোসেন, ‘‘ওর যেই ধারাবাহিকতা, যে একাগ্রতা দিয়ে জাতীয় লিগ বা ঢাকা লিগ খেলেছে সেটা প্রশংসনীয়। আমাদের কাছে মনে হয়েছে ও এসব প্রতিযোগিতায় খুব ফ্রি হয়ে নিজে খেলতে পারে। আমার ব‌্যক্তিগত প্রত‌্যাশা সেই মনোভাবটাই যেন জাতীয় দলে দেখাতে পারে। এটা এমন না যে ওর থেকে সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি করুক। যে কাজটা এতোদিন ঘরোয়া ক্রিকেটে করেছে সেটাই করুক।’’

২০২২ সালের পর টেস্ট দলে ফিরলেন এনামুল। ৫ টেস্টে ১০০ রান করা এনামুল ঘরের মাঠে ২০১৩ সালের পর টেস্ট খেলবেন। বয়স ৩২ পেরিয়েছে। জাতীয় দলে এক সময়ে থিতু হয়েছিলেন। পরবর্তীতে আড়াল হয়ে যান। এরপর আসা-যাওয়ার ভেতরেই থাকেন। এবার সুযোগ হয়েছে জাকিরের পরিবর্তে। কিন্তু দুই ওপেনার সাদমান ও জয়ও নেই ফর্মে। তাদের দুজনের একজনকে ড্রপ করে এনামুলকে চট্টগ্রামে খেলানোর সম্ভাবনাই বেশি। লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক বোলারদের খেলার অভিজ্ঞতা এনামুলের নেই। এবার খারাপ করলেও তাকে বাদ দেবে না নির্বাচকরা সেই আশ্বাস দিয়ে রেখেছেন। তবে ফর্মে থাকা একজন, জাতীয় দলে ফেরার তীব্র জেদে থাকা একজন নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করবেন এমনটাই প্রত্যাশা গাজী আশরাফের।

সিলেট/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষেধাজ্ঞা পিছিয়ে মাঠে নেমে ৩৭ রান করলেন হৃদয়
  • এল ক্লাসিকো: আজ কেমন হবে ফ্লিকের কৌশল, কোথায় বার্সেলোনার দুর্বলতা
  • নতজানু বিসিবির ‘নৈতিক’ পরাজয়
  • মুদ্রার ওপিঠ দেখে ফেললেন রিশাদ
  • ফর্মে থাকা এনামুলে আত্মবিশ্বাসী গাজী আশরাফ
  • মানহীন পারফরম্যান্সে ক্রিকেট বাজারে অস্থিরতা
  • ইংল্যান্ড থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলবে কারা
  • টেস্টে ম্যাচ প্রতি ৮ লাখ টাকা, তবুও শান্তদের ফর্মে খরা!