আমার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বাংলাদেশের উত্তর–পূর্বের পাহাড়ি শহর খাগড়াছড়িতে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত হারিকেন জ্বালিয়ে পড়েছি। আমাদের সবারই ভাষাগত সমস্যা ছিল। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় খাপ খাইয়ে নেওয়ার সমস্যা। আমাদের ছিল কো-এডুকেশন বা সহশিক্ষা। মেয়েরা ক্লাসরুমের এক পাশে আর আমরা ছেলেরা আরেক পাশে বসতাম।
অনেকের নাম ও চেহারা এখন আর মনে নেই। দশম শ্রেণি পর্যন্ত কারা কারা ছিল? দেবতোষ, জলদেশ্বর, ইন্দুপ্রিয়, প্রফুল্ল, প্রদীপ, শুভরঞ্জন, মনোরঞ্জন, রামেন্দু, সুহাস জীবন, অজয়, সামাদ, পাইলা প্রু চৌধুরী, মংয়্যু, ছত্র নারায়ণ, উচিৎময়, পূর্ণিমা, অমরাবতী, শাহেদা, সুষমা, তাপসী, রাখী, স্মৃতিরানী, মেরিনা—এদের নাম মনে করতে পারছি। সংখ্যায় বাঙালি ছাত্রছাত্রী খুব কম ছিল। তার মধ্যে সামাদের পরিবার মূলত ব্যবসায়ী। বাড়িঘর সব চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। প্রায় সময় সে স্কুল কামাই করত। বসত একদম পেছনের সারিতে। কিন্তু কেন জানি তারপরও তার সঙ্গে আমার একধরনের বন্ধুত্ব হয়ে গেল। মনে হয় সামাদ বাঙালি মুসলিম বলে আমার একটু অন্য রকম আগ্রহ ছিল। নবম কিংবা দশম শ্রেণিতে এসে দুজন বাঙালি মুসলিম ছাত্রী যোগ দিল—একজন শাহেদা, আরেকজনের নাম এখন মনে পড়ছে না।
আমি যখন বুয়েটে প্রথম বর্ষে, তখন খাগড়াছড়িতে থমথমে অবস্থা। শান্তি বাহিনীর সঙ্গে সরকারের সংঘাত চলছে। খাগড়াছড়িতে তখন একধরনের অঘোষিত কারফিউ।
এক ঈদের বন্ধে বাড়ি গিয়ে শাহেদার সঙ্গে হঠাৎ রাস্তায় দেখা। আমি রীতিমতো চমকে উঠলাম। ওর বাবা আবার বদলি হয়ে এসেছে। এখানে ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছে। এখন বেশ সপ্রতিভ, তেমন জড়তা নেই। ঈদের দাওয়াত দিল। অবাক হলাম যখন ওর আম্মাও ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে আমার পাশে বসে খুব আপন হয়ে গেলেন। শাহেদার চোখে–মুখে খুশির ঝিলিক। বিদায় নেওয়ার সময় বাইরে বেরিয়ে দেখি, কনে দেখা আলোয় আকাশটা ভরে আছে, চারপাশটা এত সুন্দর লাগছে।
এর এক বছর পর গিয়ে শুনলাম, ওরা বদলি হয়ে গেছে। সম্ভবত সহপাঠিনীদের মধ্যে শাহেদার সঙ্গেই আমার শেষ দেখা হয়েছিল।
মং রাজার মৃত্যুর পর আদালতের রায়ে সহপাঠী ও বন্ধু পাইলা প্রু চৌধুরী মং রাজা হলো। এর বছর সাতেক পরে, তখন আমি কুমিল্লায়। ঢাকা থেকে নাইট কোচে খাগড়াছড়ি ফেরার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় পাইলা প্রুর মৃত্যু হয়। মুঠোফোনে সংবাদটি শুনে আমি অনেকক্ষণ হতবাক হয়ে বসে ছিলাম।
অমরাবতীর দাম্পত্যজীবন সুখের হয়নি। একদিন জানলাম সে নেই। সুহাস জীবন ছিল বান্দরবানের অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। ২০১১ সালে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামে মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে নৃশংসভাবে খুন হয়। এই অপমৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। প্রফুল্লও সময় দিল না, ক্যানসার ধরা পড়ার মাস তিনেকের মাথায় চলে গেল অন্য ভুবনে।
বছর দুয়েক আগে বাড়ি গেলাম। ভাবলাম অনেক দিন দেখা হয়নি, সামাদের খবর নিই। তার দোকানে খবর নিতে গেলাম। তার ভাই জানাল, ভাই তো নেই, চলে গেছে মাস ছয়েক হলো। আমি বজ্রাহতের মতো বসে রইলাম অনেকক্ষণ, বলার মতো কোনো কথা মুখে আসছিল না। বছর তিনেক আগে বাড়ি গিয়ে শুনলাম, দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভুগে ইন্দুপ্রিয় চলে গেছে।
আমি আমার সহপাঠী–সহপাঠিনীদের নাম দিয়ে অন্তর্জালে অনেক খুঁজি। কিন্তু না, কেউ নেই। হঠাৎ যেন সবাই দল বেঁধে কোথায় চলে গেছে আমায় কিছু না বলে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহপ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
পোপের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বিশ্বনেতাসহ সাধারণ মানুষের ঢল
রোমান ক্যাথলিকদের প্রয়াত ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠান সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। স্থানীয় সময় সকাল থেকেই ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা গির্জার সামনের চত্বরে এই রাষ্ট্রীয় মর্যাদাপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
এ শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিতে ভ্যাটিকানে উপস্থিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও রাজপরিবারের সদস্যরা। তাঁদের মধ্যে আছেন প্রিন্স উইলিয়াম, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, স্পেনের রাজা ফিলিপ ষষ্ঠ ও রানী লেতিজিয়া এবং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা।
সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যেই দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে রোমে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প,।
এছাড়া সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন, ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলে শেষকৃত্যানুষ্ঠানে থাকবেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোমে পৌঁছেছেন। তিনি তার স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কা এবং একটি ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল নিয়ে শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছেন। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম সস্পিলনকে এ তথ্য জানিয়েছে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র।
সেই সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ক্যাথলিক ধর্মানুসারি থেকে শুরু করে শোকাহত হাজারো মানুষ। বুধবার সকালে পোপ ফ্রান্সিসের মরদেহ সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় আনা হয় এবং শুক্রবার সন্ধ্যায় জনসাধারণের জন্য প্রদর্শন শেষ হয়। এই তিনদিনে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে বলে ভ্যাটিকান এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
বুধবার, যখন প্রথম মরদেহ দর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তখন ব্যাসিলিকা পুরো রাত খোলা খোলা রাখা হয়েছিল যাতে ভক্তরা দেখতে পারেন। ৮৮ বছর বয়সী পোপ ফ্রান্সিস চলতি বছরের প্রথম দিকে দু’বার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। মৃত্যুর প্রায় এক মাস আগে তিনি হাসপাতাল থেকে ভ্যাটিকানের বাসায় ফেরেন। ইস্টার সানডে উপলক্ষে রোববার সেন্ট পিটার্স স্কয়ারেও হাজির হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরদিন সকালে ভ্যাটিকান তাঁর মৃত্যুর খবর জানায়। খবর-বিবিসি