যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে বিভিন্ন দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন, তাতে দেশটিতে পণ্য রপ্তানিকারক সব দেশই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ যেমন এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তেমনি আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর ক্ষেত্রেও একই চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এ কারণে এককভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি নিয়ে আমি খুব বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নই। তবে আমি মনে করি, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সরকারকে ত্বরিত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি আমরা যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি করি, আমাদেরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমরা দীর্ঘদিন ধরে নতুন বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ নিয়ে কথা বলে আসছি। কিন্তু এ দুটি বিষয় বাস্তবায়নে খুব বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন সময় এসেছে নতুন এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি উচ্চমূল্যের বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। সরকারের দিক থেকেও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ত্বরিত কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমত, ট্রাম্পের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক কমাতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করা, প্রয়োজনে লবিস্ট নিয়োগ ও নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন খরচ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তৃতীয়ত, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ শিল্পের অবকাঠামো–সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে যেসব পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি করা পণ্যের তালিকায় এমন কিছু পণ্য রয়েছে, যেগুলো খুব বেশি আমদানি হয় না; কিন্তু এসব পণ্যের আমদানি শুল্ক অনেক বেশি। যেসব পণ্য আমরা নামমাত্র আমদানি করি, সেগুলোর উচ্চ শুল্ক পুনর্বিবেচনা করতে পারে সরকার। এরই মধ্যে তৈরি পোশাকের কাঁচামাল তুলা আমদানির ক্ষেত্রে সরকার বন্ডেড ওয়্যারহাউস বা শুল্কমুক্ত আমদানি–সুবিধা দিয়েছে। এটি সরকারের ভালো সিদ্ধান্ত। একই ভাবে পণ্য রপ্তানির অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির খরচও কমানো দরকার।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে দেশটির বড় ক্রেতারা এখন আমাদের দেশ থেকে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে দাম কমিয়ে দিতে পারেন। সেই ধাক্কা বা সামগ্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের কার্যকর পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। আর সেটি করতে হলে সবার আগে কমাতে হবে উৎপাদন খরচ। এ জন্য শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে উন্নতি ঘটাতে হবে ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশের। উদ্যোক্তারা যাতে তাঁদের ব্যবসায়িক ও বিনিয়োগ সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত নিতে পারেন, সে জন্য সরকারি নীতি ও কার্যক্রমগুলোকে সহজ করতে হবে। বর্তমানে আমাদের বিদেশি বিনিয়োগে খরা চলছে। এ অবস্থায় দেশি উদ্যোক্তরা যাতে নতুন বিনিয়োগে উৎসাহী হন, সরকারকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের দিক থেকে নীতি ও অবকাঠামো–সহায়তা পাওয়া গেলে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে উদ্যোক্তারা উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে পারবেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে নিজেদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে আমাদের উচ্চ মূল্যের পণ্য তৈরির দিকে যেতেই হবে। এ জন্য ডিবিএল গ্রুপের পক্ষ থেকে আমরা সেদিকে ধাবিত হওয়ার পরিকল্পনা করছি। এরই মধ্যে বিশ্বের বড় ক্রেতাদের সঙ্গেও আমরা এ নিয়ে কথা বলছি। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদেরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেদিকে আমাদের গভীরভাবে নজর রাখতে হবে। সব মিলিয়ে আমি মনে করি, আমাদের আলাদাভাবে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আলোচনা বা সমঝোতাচেষ্টার পাশাপাশি আমাদের নিজেদের প্রস্তুতিগুলো নিতে হবে।

বিশ্ববাণিজ্যে আমাদের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা আসবেই। তাই আমি মনে করি, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগে আমাদের শক্তিশালী পেশাদার একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা দরকার। যেটি রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে পেশাদারির ভিত্তিতে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে গবেষণালব্ধ সহায়তা করবে।

এম এ জব্বার

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিবিএল গ্রুপ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পদক ষ প ন পদক ষ প ন ত ক র যকর সরক র র আম দ র ব যবস আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষমতা থাকলেই টাকা লুট করা যায়: ফজলুর রহমান

ছবি: প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ