জুলাইবিব (রা.) ছিলেন মহানবীর (সা.)-এর একজন প্রিয় সাহাবি। যদিও তিনি ইতিহাসের মহান নায়কদের সারিতে তেমনভাবে স্থান পাননি। জুলাইবিবের (রা.) জীবন এবং তার কর্মকাণ্ড সেভাবে স্মরণ করা হয়নি, তবে তার সম্পর্কে যতটুকু তথ্য পাওয়া যায়, তাতে অনেক হতাশ হৃদয় প্রেরণা খুঁজে পাবেন।

 বাধার পাহাড় পেরিয়ে

জুলাইবিব (রা.)দেখতে লম্বা বা সুন্দর কেউ ছিলেন না। ইসলামের আগমনের আগে তিনি সাহসী যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতও ছিলেন না। তার শারীরিক অবস্থা ছিল সমাজের সাধারণ নায়কদের থেকে ভিন্ন। তিনি ছিলেন এক অঙ্গহীন, প্রতিবন্ধী এবং অতিরিক্ত খাটো ছিলেন। বংশেও তেমন সম্ভ্রান্ত নন। ফলে সমাজ তাকে তেমনভাবে গ্রাহ্য করেনি, বরং তার প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা ছিল।

 তবে এই হতাশা ও অপমান সত্ত্বেও জুলাইবিব(রা.

) কখনও আত্মসম্মান বা ভালোবাসার অভাবে ছিলেন না।

আরও পড়ুনইসলামের শত্রু আবু জাহেলের মা আসমা (রা.) সাহাবি ছিলেন ১০ জানুয়ারি ২০২৫

নতুন জীবন

 ইসলাম গ্রহণের পর জুলাইবিব (রা.)আল্লাহর পরিপূর্ণ দাস হয়ে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় সাহাবি হয়ে ওঠেন। তিনি নবীজির (সা.)কাছ থেকে সততা, আন্তরিকতা এবং দৃঢ় বিশ্বাসের জন্য সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করেন। নবীজি (সা.) তার প্রতি গভীর দয়া ও সহানুভূতি প্রকাশ করতেন। একবার নবীজি (সা.) এক আনসারিকে বললেন, ‘আমার জন্য তোমার কন্যাকে বিবাহের জন্য দাও।’

 আনসারি ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল(সা.)! এটি আমার জন্য সম্মান ও আশীর্বাদ।’

 নবীজি (সা.) বললেন, ‘আমি তাকে নিজের জন্য চাই না।’

 ‘তাহলে, আল্লাহর রাসুল, কার জন্য?’

 নবীজি (সা.) বললেন, ‘জুলাইবিবের জন্য।’

 আনসারি ব্যক্তি অবাক হয়ে বললেন, ‘এমনি হলে, আমাকে তার মার সাথে পরামর্শ করতে দিন।’

 মেয়ের মা প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, ‘জুলাইবিব (রা.)? আল্লাহর কসম, আমরা তাকে আমাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে পারব না।’

আরও পড়ুনযে আমলে রিজিক বাড়ে ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

তবে মেয়েটির ছিল এক অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি। সে বলল, ‘আমরা কি আল্লাহর রাসুলের আদেশ অগ্রাহ্য করব? আমি কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হব না। আপনি তাঁর আদেশ মেনে চলুন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,১১২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৮৪৭)

মেয়েটির সিদ্ধান্ত সমাজের সমস্ত ধারণা ও ভাবনা ভেঙে দেয়। মেয়েটির আত্মবিশ্বাস ও আস্থা ইসলামি মূল্যবোধের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

পরদিন বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। উসমান ইবনে আফফান (রা.) ও আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) একত্রে জুলাইবিবকে (রা.)অর্থ সাহায্য করেন যাতে তার বিয়ের আয়োজন করা যায়। জুলাইবিবের (রা.) জীবনে সুখ ফিরে আসে, এবং তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে সুখী জীবন কাটান।

আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শহীদ হওয়া

 এক যুদ্ধের পর নবী মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের কাছে জানতে চান, ‘আপনার মধ্যে কেউ কি হারিয়ে গেছে?’

 তারা বললেন, ‘এবং এমন কেউ নেই।’

 তবে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমি তো দেখছি, জুলাইবিব(রা.) হারিয়ে গেছে।’

 সাহাবিরা তাকে খুঁজে পান। তাকে সাতজন নিহত শত্রুর মধ্যে শহীদ অবস্থায় পাওয়া যায়। নবীজি (সা.) তার মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘তিনি সাতজনকে হত্যা করেছিলেন। তারপর তারা তাকে হত্যা করল। তিনি আমার অন্তর্গত এবং আমি তার অন্তর্গত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭১)

 জুলাইবিবের (রা.) জীবন, যে একসময় সমাজের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত ছিল, ইসলামের মহত্ত্ব এবং নবীজির (সা.) সহানুভূতি তাকে অনেকের হৃদয়ে জায়গা করে দেয়। আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে, বাইরের সৌন্দর্য এবং সামাজিক মর্যাদা থেকে অনেক বড় কিছু হলো, আন্তরিকতা, বিশ্বাস ও ইমান। জুলাইবিবের গল্প আমাদের শেখায়, সমাজের অবস্থান যা-ই থাকুক, ইসলাম তাকে সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে পারে।

আরও পড়ুননারী সাহাবি হজরত শিফা (রা.)১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ইসল ম বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

এই কঠিন সময়ে ঐক্য ধরে রাখা প্রয়োজন: ঢাবি উপাচার্য

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির ঐক্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান।

উপাচার্য বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। এক অর্থে জাতির জন্য এটি একটি ক্রান্তিকাল। এই সময়ে আমাদের ঐক্য ধরে রাখা একান্তই প্রয়োজন।’

আজ রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে নিয়াজ আহমেদ খান এ কথা বলেন।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতির জন্য পরম শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও মমতার দিন। এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। তাঁদের সেই চূড়ান্ত আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে আছে।

নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, যুগে যুগে ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ এ জাতিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং সাহস জুগিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতি ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আজও জাতির ঐক্য ধরে রাখার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোকবর্তিকা। একই সঙ্গে ১৯৫২, ১৯৬৮, ১৯৬৯, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে যাঁরা রক্ত ও জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।

নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ১৯৫২ থেকে ২০২৪—এর প্রতিটি দিন ও ঘটনাপ্রবাহ জাতির মৌলিক পরিচয়ের মাইলফলক। এর কোনো অংশ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ইতিহাসই যুগে যুগে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে, আর বর্তমান সময়ে সেই ঐক্য ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ