ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা, পালাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা
Published: 5th, April 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলা ও গণহত্যার মুখে প্রতিনিয়ত বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। উপত্যকাটির ৯০ শতাংশ মানুষ নিজের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। একবার-দু’বার নয়, অনেক পরিবার চার-পাঁচবারও বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তিকে সঙ্গী করে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুলে চলেছেন বাসিন্দারা।
দেড় বছর ধরে দখলদার দেশটির তীব্র আগ্রাসনে সহায়-সম্বল ও পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তারা। সর্বশেষ রাফা ও গাজা সিটিতে বাস্তুচ্যুতি আদেশের ফলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি আবারও পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। খবর আলজাজিরা ও রয়টার্সের।
গাজা সিটির আগে থেকেই বাস্তুচ্যুত এক বয়স্ক ব্যক্তি আবু হাজেম খালেফ আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সংগ্রাম হলো বাস্তুচ্যুতি। এই পরিস্থিতি কীভাবে সামলাব, তা আমাদের জানা নেই। আমি গাজা শহরের পশ্চিমে যাচ্ছি, এমন কোনো রাস্তা খুঁজছি, যেখানে আমি তাঁবু স্থাপন করতে পারি।’
আরেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মাহমুদ আল-ঘারাবলি যোগ করেন, আমাদের জোর করে চলে যেতে হচ্ছে এবং আমরা কোথায় যাব, তাও জানি না। আমরা ক্লান্ত এবং সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছি।
ইসরায়েলি বাহিনী আবারও একের পর এক এলাকাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে শুরু করেছে। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের (ওসিএইচএ) তথ্য অনুসারে, ইসরায়েল এখন গাজার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে। বিশাল এলাকাকে নিষিদ্ধ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা কিংবা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির আদেশ জারি করে তারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। বিধিনিষেধযুক্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ রাফার একটি বিশাল অংশ। সেখানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত সোমবার একটি নতুন বাস্তুচ্যুতি আদেশ জারি করে ঘোষণা দেয়, তারা প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে লড়াই করতে ফিরে আসছে।
বিধিনিষেধগুলো গাজা সিটির কিছু অংশকেও অন্তর্ভুক্ত করে। সেখানে দেশটির সেনারা শুক্রবার সকালে ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ সম্প্রসারণের জন্য স্থল আক্রমণ শুরু করেছে। এই ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি যুদ্ধের সবচেয়ে বড় গণবাস্তুচ্যুতিগুলোর মধ্যে একটিকে সূচিত করেছে। ফলে আগে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হওয়া লাখ লাখ ফিলিস্তিনি আবারও পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
হামাসকে কোণঠাসা করতে আক্রমণাত্মক অভিযান তীব্র করার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বুধবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, আমরা এখন এই উপত্যকা ভাগ করছি এবং ধাপে ধাপে চাপ বাড়িয়ে যাচ্ছি। ফলে তারা যেন জিম্মিদের আমাদের হাতে তুলে দেয়।
স্থানীয় চিকিৎসা সূত্র এবং গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মতে, শুক্রবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। আগের দিন তীব্র বোমাবর্ষণের পর এ হামলার ঘটনা ঘটে। ওইদিন অন্তত ১১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু।
বৃহস্পতিবার তুহফা এলাকায় তিনটি স্কুলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৮ শিশুসহ অন্তত ৩৩ জন নিহত হন। এসব হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শুধু দার আল-আরকাম স্কুলে হামলায় ১৮ শিশুসহ ২৯ জন নিহত হন। স্কুলটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল। ওই স্কুলটিতে কমপক্ষে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৫০ হাজার ৫২৩ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হলো। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজারেরও বেশি। উপত্যকায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কয়েক হাজার মানুষের মৃতদেহ পড়ে আছে বলেও ধারণা করা হয়।
দক্ষিণ লেবাননে হামাসের শীর্ষস্থানীয় এক নেতাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ। শুক্রবার তারা জানায়, সিদন অঞ্চলে হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কমান্ডার হাসান ফারহাতকে হত্যা করা হয়েছে। আইডিএফের দাবি, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীন ইসরায়েলের বেসামরিক ও সামরিক ব্যক্তিদের ওপর একাধিক হামলা চালানোয় জড়িত ছিলেন ফারহাত। তাঁর আদেশে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি উত্তরাঞ্চলীয় সাফেদ কমান্ড বেইজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পরিচালিত হয়। ওই হামলায় স্টাফ সার্জেন্ট ওমের সারাহ বেনজো নিহত এবং একাধিক সেনা আহত হন।
এদিকে গাজা উপত্যকায় চলমান দ্বিতীয় দফা সামরিক অভিযানে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের যথাযথ তদন্ত চেয়েছেন দেশটির ১৩ জন আইনজীবী। শিগগির এ ইস্যুতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল গ্যালি বাহারাভ-মিয়ারা এবং সামরিক বাহিনীর আইনজীবী ইফাত তোমের-ইয়ারুশালমি বরাবর চিঠিও দিয়েছেন তারা। ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ এ তথ্য জানিয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র আম দ র হয় ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙ্গায় পৃথক ঘটনায় দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
ফরিদপুরের ভাঙ্গার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি ইউনিয়নে পৃথক ঘটনায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আর এই দুটি ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ। বর্তমানে সংঘর্ষ এড়াতে উভয় স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের মনসুরাবাদ গ্রামে ও তুজারপুর ইউনিয়নের সরইবাড়ি গ্রামে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ ঘটে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বাবর আলী ও সাবেক ইউপি সদস্য আকরামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। ঈদের দিন রাতে আকরাম আলী পক্ষের মাজহারুল ইসলাম নামের একজনকে বাবর আলী পক্ষের লোকজন মারধর করে। এর জেরে ঈদের পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে আকরাম ও বাবর আলী দলের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষের কয়েক শত সমর্থক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু করে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০/৩৫ জন আহত হন। এ সময় মনসুরাবাদ বাজারের কমপক্ষে ১০/১৫টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত ১৫ জনকে ভাঙ্গা উপজেলা আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে, উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের সরইবাড়ি গ্রামের কবির খাঁর সঙ্গে হাবি তালুকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার বিরোধ চলছিল। ঈদের দিন সোমবার রাতে কবির খাঁ এক আত্মীয় বাড়ি যাওয়ার পথে হাবি তালুকদারের লোকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি পরে হাতাহাতি হয়। এর জেরে ঈদের পরদিন মঙ্গলবার উভয় গ্রুপের লোকজন ঘোষণা দিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সকাল থেকে চলা সংঘর্ষ দফায় দফায় রাত ১০টা পর্যন্ত চলতে থাকে। এ সময় উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন এবং ছয়টি বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে গুরুতর আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফ হোসেন সমকালকে বলেন, খবর পেয়ে পৃথক স্থানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ এখনও থানায় অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।