তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানিতে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ওপর ৪৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ দুটির পোশাক শিল্প। অন্যদিকে ভারতের ওপর শুল্ক আরোপ হয়েছে ২৬ শতাংশ। ফলে রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটি বড় সুবিধা পাবে। গত বুধবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন ওই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।  

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এত চরম কিছু আশা করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ব্যবসা ও হাজার হাজার শ্রমিকের জন্য ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন তারা। একইভাবে শ্রীলঙ্কার তৈরি পোশাক খাতও বড় ধাক্কার মুখে পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্ষতির মাঝেই ভারতের সামনে খুলে যাচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। 

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) জানিয়েছে, শুল্ক ঘোষণার পরপরই তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), চীন ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি বাড়ানোর কৌশলের ওপর জোর দিয়েছেন।    

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত দেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি ও জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ অবদান রাখে। এ খাতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি কর্মরত। 
বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টস রপ্তানিকারক শহীদুল্লাহ আজিম। তিনি রয়টার্সকে জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানটি উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে পোশাক সরবরাহ করে থাকে। এখানে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কর্মী কাজ করেন। হঠাৎ শুল্ক আরোপের ফলে অনেক অর্ডার (ক্রয়াদেশ) বাতিল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক মূল্য সুবিধা হারাতে পারে।  

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বাণিজ্য-সংক্রান্ত আলোচনা চলছে, যা এই সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়, যার মূল্য প্রায় ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে দ্বীপরাষ্ট্রটি বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে। জয়েন্ট অ্যাপারেল অ্যাসোসিয়েশন ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল যোহান লরেন্স বলেন, কম শুল্কের দেশগুলো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।এতে স্বাভাবিকভাবেই শ্রীলঙ্কা দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারাতে পারে। ফোরামের পরামর্শক তুলি কুরে নিউইউর্ক টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের শোকবার্তা লিখতে হবে। ৪৪ শতাংশ শুল্ক চাট্টিখানি কথা নয়।’ প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকের দপ্তর জানিয়েছে, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি যৌথ প্যানেল গঠন করা হয়েছে।

ভারতের সামনে এখন সম্ভাবনার নতুন দরজা। টমি হিলফিগার ও লেভিসের মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করা ভারতের ইভেন্স গ্রুপ ইতোমধ্যেই মার্কিন বাজারে তাদের উপস্থিতি জোরদার করার পরিকল্পনা করছে। ইভিন্স গ্রুপের আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই মার্কিন ক্রেতারা মূলত ভারতের দিকে ঝুঁকছিলেন। বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের ওপর শুল্ক কম ১১ শতাংশ। এতে ক্রেতারা স্বাভাবিকভাবেই ভারতের দিকেই ঝুঁকবে। যদিও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি মাত্র ৬-৭ শতাংশ, তবুও মার্কিন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, ৩০টি শীর্ষ ব্র্যান্ড বাংলাদেশের পরিবর্তে ভারতে ঝুঁকছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশকে এখন কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা বাড়ানো। সেই সঙ্গে বিকল্প বাজার খোঁজা ও ইইউ, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি বাড়ানোর কৌশল নিতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের জন্য সরকারকে বিশেষ সহায়তা দিতে হবে, যাতে তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। 

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কের ধাক্কা বিশ্বের পোশাক শিল্পের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর জন্য অনেক বড়। ইক্যুইটি ফার্ম উইলিয়াম ব্লেয়ারের বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত তৈরি পোশাকের প্রায় ৮৫ শতাংশ উৎপাদন করে, সেসব দেশের ওপর গড়ে ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করুন: আ স ম রব

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। সাংবিধানিক সংস্কারসহ জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল দল ও সমাজশক্তি তথা শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহের সাথে আলোচনা করে ব্যাপকভিত্তিক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা আবশ্যক।

জাতীয় সনদ নির্বাচনের আবশ্যিক শর্ত পূরণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন পারস্পরিক পরিপূরক বিধায় সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করা আবশ্যক। এই পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতি একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্যে ধাবিত হবে। সংস্কার ও নির্বাচন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জাতীয় রাজনীতির মৌলিক প্রশ্নে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির অনৈক্য বা বিভেদ পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।

আজ শুক্রবার উত্তরাস্থ বাসভবনে জেএসডির স্থায়ী কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার শুরুতে ক্যাথলিক গুরু ফ্রান্সিস পোপের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

সভায় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন— দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, স্থায়ী কমিটির সদস্য 
মিসেস তানিয়া বর, অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট কে এম জাবির ও কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ