সংসদে নারী আসন ও নারীর ক্ষমতায়নে সংস্কার
Published: 5th, April 2025 GMT
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিশনগুলোর মধ্যে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অন্যতম। নারীনেত্রী ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী শিরীন পারভীন হককে এ কমিশনের প্রধান করা হয়েছে। এ সংস্কার কমিশনের আগামী ১৯ এপ্রিলের মধ্যেই সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ-সংবলিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক সংখ্যক নারী। এই অর্ধেক সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে পশ্চাৎপদ রেখে জাতিগতভাবে আমরা সামনের দিকে এগোতে পারব না। তাই নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষ্যমের অবসান ঘটিয়ে তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে সরকারের কাছে এমন কিছু সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করতে হবে, যা জাতিগতভাবে আমাদের অগ্রগতি নিশ্চিত করবে।
নারীর ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন তথা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। এই অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের সর্বাপেক্ষা কার্যকর পন্থা হতে পারে এসব প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আসন সংরক্ষণ। শুধু সংখ্যাগত নয়; গুণগত মানের বিষয়ও এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।
জাতীয় সংসদে নারীর আসন সংরক্ষণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে ১০ বছরের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষণ করা হয়। ২০১৮ সালে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীতে আসন সংখ্যা ৫০ রেখে তা ২৫ বছরের জন্য সময় বৃদ্ধি করা হয়। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘দিন বদলের সনদ’ শিরোনামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে, তাতে সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ১০০তে উন্নীত এবং প্রত্যক্ষ নির্বাচনের অঙ্গীকার করা হয়। কিন্তু ২০২৪-এর ৪ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলেও দলটি ঘোষিত সেই অঙ্গীকার পূরণ করেনি। তবে জানা গেছে, জাতীয় সংসদে নারীর জন্য ৩০০ আসন সংরক্ষিত রেখে সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করতে যাচ্ছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। সে ক্ষেত্রে মোট আসন সংখ্যা ৬০০ করার সুপারিশ করা হচ্ছে। নারীর প্রতি বৈষম্য রয়েছে– এমন সব আইনে পরিবর্তন চাওয়া হয়েছে সুপারিশে। এটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো, বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ২০৩০ সালের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত এবং সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের পদগুলোয় নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। প্রকৃত অর্থে নারীর ক্ষমতায়নে শুধু নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নই যথেষ্ট নয়; অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে সমাজ ও পরিবারে নারীদের অবস্থা ও অবস্থানকে সুদৃঢ় করা; জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব নাগরিকের জন্য সম্পত্তিতে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা; নারীশিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ; শ্রমজীবী নারী ও পুরুষের মধ্যে মজুরি বৈষম্য দূর; বাল্যবিয়ে থেকে মেয়েদের রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ; নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ; সর্বোপরি নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সব ধরনের বৈষম্যের অবসান ঘটানো ইত্যাদি বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় সন্নিবেশিত থাকতে হবে এবং রাষ্ট্রকে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আমরা এখনও বিস্তারিত জানি না– নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কী ধরনের সুপারিশ-সংবলিত প্রতিবেদন পেশ করবে। সচেতন নাগরিকরা বিষয়টি দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। তবে সবার প্রত্যাশা, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অতি দ্রুততার সঙ্গে নারী তথা জাতিগতভাবে আমাদের অগ্রগতির লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের অগ্রাধিকারভিত্তিক সুপারিশ-সংবলিত প্রতিবেদন জমা দেবে এবং সেই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে উঠবে।
দিলীপ কুমার সরকার: কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র ক ছ ক র যকর র র জন র জন য ধরন র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির তৃতীয় দফার বৈঠক শুরু
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তৃতীয় দফার বৈঠক শুরু করেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বেলা ১১টার পর এ বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সংস্থাপন সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বৈঠকে রয়েছেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলছে। গত বৃহস্পতিবার দলটির সঙ্গে দিনব্যাপী বৈঠক শেষে আলোচনা মুলতবি করা হয়েছিল। গত রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচনা হয়। তবে আলোচনা শেষ হয়নি।
দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। তারা চায়, একই ব্যক্তি টানা দুবারের পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।
এ ছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সংবিধান সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তার অনেকগুলোর সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল বিএনপি। তবে তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতে পরবর্তী সংসদে একটি আইন করা হবে, এমন প্রস্তাব দিয়েছে।
আরও পড়ুনএকজন কতবার প্রধানমন্ত্রী, আলোচনায় নতুন প্রস্তাব২০ এপ্রিল ২০২৫