একটি দেশে সংঘাত বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর শিক্ষার্থীদের মনোসামাজিক সহায়তা দেওয়ার ওপর ইউনেস্কো জোর দিয়ে থাকে। মনোসামাজিক সহায়তার মাধ্যমে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশুদের কল্যাণের লক্ষ্যে শিক্ষা এবং সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়।

কভিডের পর বাংলাদেশের স্কুল-কলেজে মনোসামাজিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চব্বিশের আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীদের মনোসামাজিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানা যায় না। অথচ চব্বিশের আন্দোলন শিক্ষার্থীদের ওপর ভীষণ রকম মানসিক চাপ তৈরি করেছিল, যা শেষ হয়ে যায়নি। মনোসামাজিক সহায়তার লক্ষ্য হলো, জরুরি পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ সৃষ্টির ফলে ব্যক্তির ওপর যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ে, তা দূরীকরণের ব্যবস্থা নেওয়া। ইউনেস্কোর সংজ্ঞা অনুযায়ী আক্রান্ত অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য যে সামাজিক সহায়তা প্রয়োজন, তাকেই মনোসামাজিক সহায়তা বলে। মনোসামাজিক বা সাইকো-সোশ্যাল শব্দটি সাইকি মানে মানস এবং সোসাইটি মানে সমাজ– এই দুটি শব্দের একত্রিত রূপ। 

ডানকান অ্যান্ড আর্নস্টন (২০০৪) দেখিয়েছেন, একই সময়ে একই সমাজভুক্ত শিশু ও পরিবার একই ঘটনায় আক্রান্ত হলেও ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী তাদের তিনটি দলে ভাগ করা যায়: সাধারণভাবে আক্রান্ত দল, ঝুঁকি-কবলিত দল এবং গুরুতর আক্রান্ত দল। চব্বিশের আন্দোলনেও এ দেশের শিক্ষার্থী ও জনগণকে তিনটি দলে ভাগ করে দেখা যায়।

বাংলাদেশের জনগণের একটি বড় অংশ সাধারণভাবে আক্রান্ত দলের অন্তর্ভুক্ত। যারা সরাসরি রাস্তায় নেমে আসেনি কিন্তু মানসিকভাবে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম ছিল। তারা ঝুঁকি-কবলিত কিংবা গুরুতর আক্রান্ত দলের মতো পীড়ন অনুভব না করলেও মানসিক অবসাদে আক্রান্ত। ঝুঁকি-কবলিত দল– আন্দোলনের সময় রাস্তায় যারা নেমে এসেছিল তারা প্রতিদিন সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাপের মধ্যে ছিল। পুরো আন্দোলনের সময়ে তারা নানা ধরনের মানসিক বিপর্যয় এবং হতাশা ও অসহায়ত্ববোধে ভুগেছে। তাদের জন্য আন্দোলনের পরপরই জরুরি ভিত্তিতে মনোসামাজিক সহায়তা দরকার ছিল। তবে গুরুতরভাবে আক্রান্ত দল– যারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে, সেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ আগস্টের পর অনেক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, যার মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার অবশ্যই প্রয়োজন।

এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল শেখানো খুব দরকার ছিল। কিন্তু সেদিকে পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র কিংবা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যুক্ত করা ‘তথাকথিত’ সমন্বয়করা যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। এর ফলে একটা বড় ক্ষত সমাজের অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে।

আমার পরিচিত অনেক শিক্ষার্থীই মনে করেন, তারা প্রতারিত হয়েছেন। তারা বলেছেন, আন্দোলনের সময় তাদেরকে যেসব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হয়েছিল, সেগুলো ৫ আগস্টের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। হঠাৎ তারা নিজেদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যেতে দেখে কিংবা তাদের অবদান হাওয়া হয়ে যেতে দেখে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এর পর আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের আচরণ ও কথাবার্তা রাগ-ক্ষোভ-বিতৃষ্ণা বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রের দিক থেকে ইতিবাচক ও সহায়তামূলক কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে আসা দরকার, যাতে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা বিবাদ-বিভাজন ভুলতে পারে। বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা ও কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে। এতে ব্যর্থ হলে দীর্ঘ মেয়াদে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।

মোহাম্মদ গোলাম নবী: প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইট টার্ন

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মনস ত ত ত ব ক

এছাড়াও পড়ুন:

নাটোরে যুবকের দুই হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন 

নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ইসরাফিল নামে এক যুবককে কুপিয়ে দুই হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করেছে দুর্বৃত্তরা। 

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ইসরাফিল ওই এলাকার তাইজুল ইসলামের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ইসরাফিলের বাবা তাইজুল ইসলাম বহুদিন পূর্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ এলাকায় এসে বাড়ি করেন। তারা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে এলাকাবাসী ইসরাফিলের চিৎকারে এগিয়ে গিয়ে তাকে রাস্তার ধারে দুই হাত কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতাল এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নাটোর সদর হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. সুব্রত বলেন, “রোগীর দুই হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন ছিল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে বলে মনে হলো। সকাল ৭টার দিকে রোগীকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেই সময় তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।”

সিংড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসমাউল হক জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, “রাজনৈতিক কোনো বিষয় নিয়ে ঘটনাটি ঘটেনি। পরকীয়া সংক্রান্ত একটা বিষয় থাকতে পারে, সেই বিষয়টাও যাচাই-বাছাই করছি। যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদেরকে শনাক্তসহ গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলমান রয়েছে।”

ঢাকা/আরিফুল/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ