বিশ্বের দুই বড় অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ এখন প্রকট ও দৃশ্যমান। দুই দেশই একে অপরের ওপর পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নিচ্ছে। গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিয়ে আদাজল খেয়ে বাণিজ্যযুদ্ধে নামেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনের পণ্যে প্রকারভেদে তিনি বিভিন্ন মাত্রার শুল্ক আরোপ করেন। এবার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কঠোর হচ্ছে চীন। তারা মার্কিন পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
চীন ছাড়াও ট্রাম্প মিত্র কানাডা, মেক্সিকো ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রতিও একই আচরণ করছেন। তিনি জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান ও কানাডা থেকে আসা গাড়ির ওপর বড় শুল্ক আরোপ করেছেন। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেও মার্কিন ভোক্তাদের ওপর পড়ছে এর নেতিবাচক প্রভাব। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হয়েও ওই দেশগুলো কঠোর হতে বাধ্য হচ্ছে।
রয়টার্স জানায়, সামারিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টার্বিয়াম, ডিসপ্রোজিয়াম, লুটেনিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়ামসহ মাঝারি ও ভারী ‘বিরল খনিজ’ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আনার ঘোষণাও দিয়েছে বেইজিং। গত বুধবার হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন শুল্ক ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তিনি এটাকে ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বা পাল্টা শুল্ক বলে বর্ণনা করে আসছেন। এর জেরে গতকাল শুক্রবার চীন মার্কিন পণ্যে নতুন করে ৩৪ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা দেয়। চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলের বরাত দিয়ে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, আগামী ১০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে নতুন এ শুল্ক। শুল্ক আরোপের পাশাপাশি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডাও চলছে। গত বৃহস্পতিবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের নতুন শুল্ককে ‘একতরফা উৎপীড়ন’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। প্রত্যাহার না করলে পাল্টা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকিও দেয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান বেইজিং যেন সামাজিক মাধ্যম টিকটক যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। টিকটক বিক্রির অনুমোদন দিলে শুল্ক নিয়ে সমঝোতার ইঙ্গিতও দেন ট্রাম্প। বেইজিং এতে রাজি হয়নি।
চীন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা ১৬টি মার্কিন কোম্পানির কাছে রপ্তানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ছয়টি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানির চীনে পণ্য রপ্তানি স্থগিত করেছে। মার্কিন ড্রোন নির্মাতা স্কাইডিওসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও ১১ কোম্পানিকে ‘অবিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে’র তালিকায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ওয়াশিংটনে দুষ্প্রাপ্য খনিজ রপ্তানির ক্ষেত্রেও আরও বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে বেইজিং।
প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের পাশাপাশি ট্রাম্পের শাঁখের করাত কাটছে তাঁর মিত্রদেরও। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে পরিকল্পিত বিনিয়োগ স্থগিত করতে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের শিল্প প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে মাখোঁ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে ধোঁয়াশা না কাটা পর্যন্ত অপেক্ষমাণ কিংবা সম্প্রতি ঘোষিত বিনিয়োগগুলো স্থগিত করা উচিত। ফরাসি শিপিং প্রতিষ্ঠান সিএমএ সিজিএম যুক্তরাষ্ট্রে শিপিং লজিস্টিকস প্রদান ও টার্মিনাল নির্মাণে ২ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট এ মন্তব্য করলেন।
আবারও পতনের মুখে শেয়ারবাজার
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন দেখা দেয়। মার্কিন শেয়ারবাজারের মোট দরপতনের পরিমাণ আড়াই ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। নাইকি, অ্যাপল ও টার্গেটের মতো বড় কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ারমূল্যে ইতোমধ্যে ৯ শতাংশের বেশি দর পতন দেখেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প পদক ষ প ন
এছাড়াও পড়ুন:
আবারও ভারতীয় রুপির দরপতন, ডলারের বিপরীতে রেকর্ড তলানিতে
ভারতের মুদ্রা রুপির দরপতন চলছেই। চলতি ডিসেম্বর মাসে ডলারের বিপরীতে রুপির দর ৯০ পেরিয়ে যায়। আজ শুক্রবার তা নতুন রেকর্ড গড়ল। ফলে এ সময় বাংলাদেশ থেকে যাঁরা ভারতে যাচ্ছেন, তাঁরা লাভবান হচ্ছেন।
আজ শুক্রবার ভারতীয় মুদ্রার দাম ২৪ পয়সা কমেছে। এর জেরে প্রতি মার্কিন ডলারের সাপেক্ষে ভারতীয় মুদ্রার দাম হয়েছে ৯০ দশমিক ৫৬। রুপির এই দর এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন। অর্থাৎ ইতিহাসে এটাই এখন রুপির সর্বনিম্ন দর। বৃহস্পতিবার রুপির দাম ছিল ৯০ দশমিক ৩২। খবর ইকোনমিক টাইমস
চলতি বছরের শুরু থেকেই রুপির অবস্থা টালমাটাল। ধারাবাহিকভাবে দাম কমেছে এই মুদ্রার। বছরের শেষ প্রান্তে এসে তা রীতিমতো খাদের কিনারায় চলে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি–সংক্রান্ত জটিলতা রুপির এই দরপতনের মূল কারণ। ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে সম্প্রতি ফোনে কথা হয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিও আলোচনার জন্য ভারতে এসেছেন; কিন্তু তা সত্ত্বেও রুপির দর পতন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।
রুপির এই দরপতনের আরও কিছু কারণ আছে। সংবাদে বলা হয়েছে, আমদানিকারকদের ডলার কেনার ধুম পড়ার কারণেও রুপির দামে প্রভাব পড়েছে। ভারতের শেয়ারবাজার থেকে চলতি বছর বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ চলে গেছে।
সেই ধারা অব্যাহত আছে। সম্প্রতি ভারতের শেয়ারবাজার থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ চলে গেছে। বিষয়টি আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো হয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন ধাতুর মূল্যবৃদ্ধির কারণেও রুপির ওপর চাপ বাড়ছে।
সংবাদে বলা হয়েছে, ডলারের বিপরীতে রুপির দাম ৮৯ পেরিয়ে যাওয়ার পর তা যেন ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে চলতি বছর এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার খেতাব পেয়েছে রুপি। শুধু ডলার নয়, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন ও চীনা ইউয়ান অর্থাৎ বিশ্বের বিশ্বের অন্য চারটি প্রধান মুদ্রার বিপরীতেও রুপির দর কমেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা এখন উদ্বিগ্ন। রুপি আদৌ স্থিতিশীল হবে কি না, এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে স্পষ্টতা আসবে কি না, তাঁরা এখন সেদিকে তাকিয়ে আছেন।
বাংলাদেশিদের ওপর কী প্রভাব
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে যাঁরা ভারতে যাচ্ছেন, তাঁরা ডলার ভাঙিয়ে আগের চেয়ে বেশি রুপি পাবেন। বাংলাদেশে ডলারের দাম অনেক দিন ধরেই স্থিতিশীল। কয়েক মাস ধরে তা ১২২ টাকার মধ্যে আছে।
একদিকে দেশের বাজারে ডলারের দাম স্থিতিশীল, আরেক দিকে ভারতে রুপির দরপতন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি ভ্রমণকারীরা লাভবান হবেন। ভারতে যেসব দেশের মানুষ বেশি ভ্রমণ করেন, তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষস্থানীয়; কিন্তু ভিসা–নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি মানুষ ভারতে যেতে পারছেন না।