Samakal:
2025-04-25@05:02:24 GMT

সাকিলের ম্যাচবাক্সের জাদুঘর

Published: 5th, April 2025 GMT

সাকিলের ম্যাচবাক্সের জাদুঘর

সাকিল হকের ম্যাচবাক্স সংগ্রহ রীতিমতো অবাক করার মতো। আগ্রহটা হয়েছিল ছোটকালে তাঁর বাবার সংগ্রহ দেখে। সাকিল হকের বাবা নানা ধরনের ডাকটিকিট, মুদ্রা, ম্যাচবাক্স সংগ্রহ করতেন। এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সাকিল ম্যাচবাক্স সংগ্রহে মন দেন। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের ভাড়া বাসায় তিনি গড়ে তুলেছেন ব্যক্তিগত ম্যাচবাক্স জাদুঘর। ম্যাচবাক্স সংগ্রহের পাশাপাশি তিনি ম্যাচবাক্স নকশা করেন। দেশে তাঁর কাছেই ম্যাচবাক্সের সবচেয়ে বড় সংগ্রহ রয়েছে।

ছোটবেলায় ম্যাচবাক্স সংগ্রহ করলেও সাকিল হক তা বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ২০১২ সাল থেকে মূলত নতুন করে সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। অন্য দশটা সংগ্রহের মতো ম্যাচবাক্স না। একেক ধরনের ম্যাচবাক্স একেকভাবে সংরক্ষণ করেছেন সাকিল। কোনোটা প্লাস্টিক বাক্সে রেখেছেন। কোনোটা রেখেছেন প্লাস্টিক প্রোটেক্টর দিয়ে মুড়িয়ে। কারণ, তাঁর কাছে প্রতিটি ম্যাচবাক্স সন্তানের মতো। তাঁর জাদুঘরের কক্ষজুড়ে কাচের আলমারি; যার তাকে সাজানো ম্যাচবাক্স। এক নিত্যব্যবহার্য জিনিস ম্যাচবাক্স। যার নকশায় বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বা খাদ্যাভ্যাস ফুটে ওঠে। সাকিল মনে করেন বিষয়টি শিক্ষণীয়।

সে কারণে ২০১৬ সাল থেকে ম্যাচবাক্স নকশা করা শুরু করেন। সাকিল পারিবারিকভাবে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন। কর্মজীবনে তিনি একজন গ্রাফিক ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজে। পুরো মেধাটাই দিয়েছেন ম্যাচবাক্স নকশায়। একেক করে তিনি পাঁচ শতাধিক ম্যাচবাক্সের নকশা করেছেন দেশ-বিদেশে। এর মধ্যে মাত্র ১৫টি নকশা দিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠান ম্যাচ উৎপাদন করেছে। তাঁর করা নকশায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, চে গুয়েভারা, মাইকেল জ্যাকসন, ওসামা বিন লাদেন, হিটলার, মেরিলিন মনরোর মতো ব্যক্তিরা ফুটে উঠেছেন। আবার কোনো কোনো ম্যাচবাক্সে ফুটে উঠেছে সমাজ তথা পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনা বা প্রেক্ষাপট। নিজের নকশা দিয়ে নিজ খরচেও উৎপাদন করেছেন ম্যাচবাক্স। এর কারণ পৃথিবীতে নিয়মিতভাবে দেশলাইয়ের ব্যবহার কমে যাচ্ছে, দেশলাই বিলুপ্ত হচ্ছে এবং কমে যাচ্ছে দেশলাই সংগ্রাহক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংগ্রাহকরা সাকিলের নকশা করা ম্যাচবক্স সংগ্রহ করেন। ২০১৮ সালে নিজের সংগ্রহ নিয়ে সাকিল প্রথম ম্যাচবাক্স প্রদর্শনী করেন দৃক গ্যালারিতে। এখন ১৩২ দেশের ২২ হাজারের বেশি ম্যাচবাক্স রয়েছে তাঁর সংগ্রহে।

সংগ্রহের বেলায় সাকিল একটু নাছোড়বান্দা টাইপের। কোথাও কোনো দুর্লভ সংগ্রহের খবর শুনলে তা জোগাড় একটুও দেরি করেন না। এ কারণে তাঁর সংগ্রহে আছে ছোট-বড় বিভিন্ন আকার-আকৃতির ম্যাচবাক্স; যার বেশির ভাগই এখন পাওয়া যায় না। কোনো ম্যাচবাক্সে এক হাজার কাঠিও রাখা থাকে। আবার পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ম্যাচবাক্সটিও তাঁর সংগ্রহে আছে। এটি এক ইঞ্চির চার ভাগের এক ভাগের চেয়েও ছোট। এ ম্যাচবাক্সটি বিশ্বে মাত্র দুটি আছে। যার একটি সাকিলের সংগ্রহ সমৃদ্ধ করেছে। এমনটাই জানান তিনি। রাস্তা এমনকি ডাস্টবিন থেকেও দেশলাই সংগ্রহ করেছেন এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গাড়ির জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত ম্যাচবাক্স, রানী এলিজাবেথের ৭৫তম জন্মদিনে তৈরি করা ম্যাচবাক্স, ১৮ শতকের শুরুর দিকের ম্যাচবক্স সাকিলের কাছে রয়েছে। তাঁর সংগ্রহের ম্যাচবাক্সগুলো সিলিন্ডার, তাঁবু, বইসহ বিভিন্ন আকৃতির। এ সংগ্রহে আছে চামড়ার তৈরি ম্যাচবাক্স। টিনের প্যাকেটের ম্যাচবাক্স। তাঁর কাছে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বুকম্যাচও।
কাজের সূত্রে ইংল্যান্ডে বসবাস করেছেন কিছুদিন। ইংল্যান্ডের ইতিহাস সমৃদ্ধ ম্যাচবক্স দেখে সেগুলো সংগ্রহের প্রতি তাঁর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় ম্যাচবাক্স সংগ্রহের জন্য গিয়েছেন তিনি।  

এই সংগ্রহের একটি কেতাবি নাম আছে। যারা ম্যাচবাক্স সংগ্রহ করেন তাদের বলা হয় ফিলুমেনিস্ট। এ শখটির নাম হলো ফিলুমেনি। এ সংগ্রাহকদের মধ্যে স্লোভেনিয়ার স্যান্ডি সাকিলের ম্যাচবাক্সের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা। সাকিল বলেন, ‘আমার সংগ্রহের একটা বড় অংশ স্যান্ডির কাছ থেকে পাওয়া। বিশ্বের বড় বড় সব ফিলুমেনিস্টরা আমার ম্যাচবাক্স সংগ্রহে ভীষণ সাহায্য করেছেন।’ একবার এমনও হয়েছে, এক দিনেই তিনটি দেশ থেকে প্রায় এক হাজার ৫০০ ম্যাচবাক্স ডাকযোগে পেয়েছেন তিনি। 

বাংলাদেশে ম্যাচবাক্স নকশাকে সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। এ প্রসঙ্গে সাকিল বলেন, ‘যত্ন বা চিন্তা করে করা হয় না। জাস্ট করার জন্য করা। এটি যে শিল্পের অংশ হতে পারে, নান্দনিক হতে পারে, তা আমাদের চিন্তায় আসে না। শুধু বাণিজ্যিক চিন্তা মাথায় নিয়ে বানানো একই ধরনের ডিজাইন চলতে থাকে বছরের পর বছর।’ ২০১৬ সালে তিনি বাংলাদেশের ফিলুমেনিস্টদের নিয়ে ‘বাংলাদেশ ম্যাচবাক্স কালেক্টরস ক্লাব’ (বিএমসিসি) গড়ে তোলেন। বিশ্বের প্রথম অনলাইন ম্যাচবাক্স প্রদর্শনী এ ক্লাবই আয়োজন করে। ২০২১ সাল থেকে ‘দেশলাই’ নামে ফিলুমেনিস্টদের জন্য উপমহাদেশের প্রথম ত্রৈমাসিক জার্নাল প্রকাশ করে আসছে ক্লাবটি। সাকিল হক এর সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। সাকিলের একটি অনলাইন ‘ম্যাচবাক্স শপ’ আছে। ডিজাইন অনুযায়ী তাঁর ম্যাচবাক্সগুলো ২৫ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে পাওয়া যায়। তবে বিক্রির চেয়েও ম্যাচবাক্স সংগ্রহ সাকিলের কাছে প্রধান। এ কারণে কেউ সংগ্রহের আগ্রহ দেখালে তিনি উপহার হিসেবে তাঁর ঠিকানায় ম্যাচবাক্স পাঠিয়ে দেন।

কোনো পরিশ্রমই আসলে বিফলে যায় না। যদি পরিশ্রমের মধ্যে ভালোবাসা থাকে, লেগে থাকা যায়, সাকিল হকই এর জ্বলন্ত উদাহরণ। এক সময় ম্যাচবাক্সের নকশা বিনামূল্যে দিতে ম্যাচ কোম্পানির দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন। তাদের বোঝাতে চেষ্টা করতেন, কেন ম্যাচবাক্সের ডিজাইন গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৫ সালে জামিল গ্রুপ সাকিলের করা ‘বাংলার রঙ’ শিরোনামে ১২টি ম্যাচবাক্স ডিজাইন কিনে নেয়। বিনিময়ে সাকিল ভালো পারিশ্রমিকও পেয়েছিলেন।

নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে সংগ্রহ করা শখের ম্যাচবাক্সগুলো ভালোভাবে যুগের পর যুগ থাকুক; প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যেন তা দেখতে পারে– এমনটাই মনেপ্রাণে চান সাকিল। সে জন্য দরকার একটু স্থায়ী জায়গা। যেখানে তৈরি করা যাবে স্থায়ী ম্যাচবাক্স জাদুঘর। তিনি বলেন, ‘ম্যাচবাক্সের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। কখনও অসুখ হলে আমি আমার ম্যাচবাক্সের সংগ্রহের পাশে গিয়ে দাঁড়াই, এগুলো আমাকে সেরে ওঠার মানসিক শক্তি দেয়।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ দ ঘর স ক ল হক র সবচ য় জ দ ঘর ড জ ইন কর ছ ন র নকশ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কতটা গড়াতে পারে

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মঙ্গলবার যে রক্তপাত ঘটল, সেটি ২০১৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে সংঘটিত সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা। হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন।

হামলায় হতাহতের শিকার ব্যক্তিরা সেনাসদস্য বা সরকারি কর্মকর্তা নন। ভারতের অন্যতম সুন্দর নৈসর্গিক দৃশ্যের একটি স্থানে অবকাশ কাটাতে পর্যটক হিসেবে যাওয়া বেসামরিক ব্যক্তি তাঁরা। সেই দিক থেকে এ হামলা নিষ্ঠুর ও প্রতীকী উভয়ই। এটি শুধু মানুষের জীবন লক্ষ্য করেই চালানো হয়নি; বিতর্কিত অঞ্চলটিতে ভারত যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করার ভঙ্গুর ধারণা তুলে ধরার চেষ্টা করছে, তার ওপরও একটি পরিকল্পিত আক্রমণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মীরের ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাস বিবেচনা করলে দেখা যাবে, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই এর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে। তবে উভয়ে আলাদাভাবে কাশ্মীরের দুই অংশ শাসন করে। সর্বশেষ হামলায় ভারতের জবাব কেমন হবে, তা নির্ভর করবে অনেকটাই অভ্যন্তরীণ চাপের ওপরে।

এরই মধ্যে দিল্লি ত্বরিতগতিতে প্রতিশোধমূলক একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আছে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ পানি ভাগাভাগির চুক্তি স্থগিত করা ও কূটনীতিকদের বহিষ্কার।

আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য। তিনি শুধু অপরাধীদের বিরুদ্ধে নয়; ভারতীয় মাটিতে ‘জঘন্য কর্মকাণ্ডের’ পেছনে থাকা মূল পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধেও ‘কঠোর ব্যবস্থা’নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য। তিনি শুধু অপরাধীদের বিরুদ্ধে নয়; ভারতীয় মাটিতে ‘জঘন্য কর্মকাণ্ডের’ পেছনে থাকা মূল পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধেও ‘কঠোর ব্যবস্থা’নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারত সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে কি না, সেটি প্রশ্ন নয়; বরং প্রশ্ন হলো, কবে ও কীভাবে এটি হবে এবং এর মূল্য কতটা হতে পারে।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে ৩ সন্দেহভাজন হামলাকারীর স্কেচ প্রকাশ করেছে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থা২০ ঘণ্টা আগে

সামরিকবিষয়ক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা সম্ভবত একটা জোরাল প্রতিক্রিয়া দেখতে চলেছি। এটি অভ্যন্তরীণ দর্শক ও পাকিস্তানের ‘খেলোয়াড়’—উভয়ের জন্য একটা ইঙ্গিত দেয়। ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর দুই দেশের মধ্যে প্রতিশোধ গ্রহণের ধরন হয়ে উঠেছে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করা বা বিমান হামলা চালানো।’

‘(ভারত) সরকারের তরফে এখন এর নিচে পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হবে। পাকিস্তান সম্ভবত আগের মতোই প্রতিক্রিয়া জানাবে। ঝুঁকির বিষয় হলো, সর্বদাই উভয় পক্ষের ভুল হিসাব-নিকাশ,’ বলেন রাঘবন।

আমরা সম্ভবত একটি জোরাল প্রতিক্রিয়া দেখতে চলেছি। এটি অভ্যন্তরীণ দর্শক ও পাকিস্তানের ‘খেলোয়াড়’—উভয়ের জন্য একটা ইঙ্গিত দেয়। ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর দুই দেশের মধ্যে প্রতিশোধ গ্রহণের ধরন হয়ে উঠেছে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করা বা বিমান হামলা চালানো।শ্রীনাথ রাঘবন, সামরিকবিষয়ক ইতিহাসবিদ

এর আগে ২০১৬ ও ২০১৯ সালে ভারতের নেওয়া দুটি বড় প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের প্রতি ইঙ্গিত করেন এই ঐতিহাসিক।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উরি হামলায় ১৯ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর নয়াদিল্লি ‘নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি)’ নামে পরিচিত কার্যত সীমান্তে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামে আক্রমণ চালায়। ভারতের দাবি, তারা এ অভিযানে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ‘সন্ত্রাসীদের’ ঘাঁটি নিশানা করেছে।

আরও পড়ুনকাশ্মীর: যে হামলা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে২০ ঘণ্টা আগে

আবার ২০১৯ সালে, পুলওয়ামায় হামলায় আধা সামরিক বাহিনীর অন্তত ৪০ সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত বালাকোটে কথিত সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের এতটা ভেতরে এমন হামলার ঘটনা এটাই প্রথম। পাল্টা বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানও। পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ভারতীয় এক বিমানচালককে কিছু সময়ের জন্য আটক করে পাকিস্তান। দুই পক্ষই শক্তির মহড়া দেখায়, কিন্তু পুরোদমে যুদ্ধ এড়িয়ে যায়।

এ ঘটনার দুই বছর পর ২০২১ সালে নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান। এরপর ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একাধিকবার সশস্ত্র হামলা হলেও যুদ্ধবিরতি অনেকটাই টিকে ছিল।

২০১৯ সালে, পুলওয়ামায় আধা সামরিক বাহিনীর অন্তত ৪০ সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত বালাকোটে কথিত সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের এতটা ভেতরে এমন হামলার ঘটনা এটাই প্রথম। পাল্টা বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানও। তখন দুই পক্ষই শক্তির মহড়া দেখায়, কিন্তু পুরোদমে যুদ্ধ শুরু এড়িয়ে যায়।

পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, সাম্প্রতিকতম এ হামলায় ভারতীয় বেসামরিক লোকজনকে নিশানা করায় ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ‘নয়াদিল্লি যদি এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা থাকাকে ধরে নেয় বা অনুমান করে, তবে ভারতের তরফে সামরিক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।’

কুগেলম্যান বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতের জন্য এমন প্রতিক্রিয়া দেখানোর সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হবে রাজনৈতিক। কেননা, ওই হামলার কঠোর জবাব দিতে ভারতের ওপর জনগণের বড় ধরনের চাপ আসবে।’

বিশ্লেষক কুগেলম্যান আরও বলেন, ‘প্রতিক্রিয়া দেখানোর আরেকটি সুবিধা, ভারত যদি সফলভাবে “সন্ত্রাসীদের” নিশানা বানাতে পারে, তবে তা তার প্রতিরোধক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে ও ভারতবিরোধী হুমকি হ্রাস করবে। আর অসুবিধা হলো, প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ গুরুতর সংকট এবং এমনকি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।’

আরও পড়ুনকাশ্মীরে হামলাকারীদের খুঁজতে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর জোরালো অভিযান২৩ এপ্রিল ২০২৫ভারতের সামনে বিকল্প কী

গোপন অভিযানে দায় অস্বীকার করার সুযোগ থাকে। তবে তা প্রতিরোধ–সক্ষমতা দৃশ্যমানভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা, সেটি মেটাতে পারে না। এমনটাই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি। তিনি বলেন, ভারতের সামনে দুটি সম্ভাব্য পথ রয়েছে।

সাম্প্রতিকতম এ হামলায় ভারতীয় বেসামরিক লোকজনকে নিশানা করায় ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ‘নয়াদিল্লি যদি এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা থাকাকে ধরে নেয় বা অনুমান করে, তবে ভারতের তরফে সামরিক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে’।মাইকেল কুগেলম্যান, পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক

প্রথমত, ২০২১ সালে নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রতিষ্ঠিত যুদ্ধবিরতি ফিকে হয়ে এসেছে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আন্তসীমান্তে গোলাগুলি শুরু করার সবুজসংকেত দিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, ২০১৯ সালের মতো বিমান হামলা বা প্রচলিত ক্রুজ মিসাইল দিয়ে আক্রমণ চালানোর বিষয়ও আলোচনার টেবিলে আছে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই পাল্টাপাল্টি আক্রমণের ঝুঁকি থাকবে।

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ভারতে পাকিস্তানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন বিজেপির কর্মীরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের কাছে বিকল্প কী?
  • পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক পদক্ষেপের শঙ্কা
  • পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ ইস্যুতে দিয়া মির্জার পূর্বের মন্তব্য ভাইরাল
  • ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কতটা গড়াতে পারে
  • ‘হট ১০০’ তালিকায় জেনি