আলোচনায় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, সংখ্যালঘু নির্যাতন
Published: 5th, April 2025 GMT
বাংলাদেশে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন টানাপোড়েনের কেন্দ্রে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার ব্যাংককে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আলোচনায়ও এসেছে শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ।
অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বৈঠকে তুলেছে ঢাকা। পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন, তিস্তা চুক্তি সইসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে ভারত উদ্বেগ জানিয়েছে। দিল্লি আশা প্রকাশ করেছে, ভবিষ্যতে ভারত এমন এক গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ দেখতে চায়, যেখানে নির্বাচনের একটি ভূমিকা রয়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪০ মিনিটের বৈঠকে দুই নেতা সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে খোলাখুলিভাবে কথা বলেছেন। আলোচনায় পারস্পরিক স্বার্থ ও উদ্বেগের বিষয়গুলোও উঠে এসেছে।
বৈঠকের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়েছে, বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশের গভীরভাবে মূল্য দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আমাদের দুই দেশের জনগণের কল্যাণের স্বার্থে সম্পর্ককে সঠিক পথে স্থাপনের লক্ষ্যে আপনার সঙ্গে একত্রে কাজ করতে চাই।’
বৈঠকের বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি নিজের এক্স হ্যান্ডলারেও লিখেছেন। তাতে বলা হয়, ‘ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি গঠনমূলক ও জনগণকেন্দ্রিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। আমি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করেছি এবং হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিয়ে আমাদের গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।’
আরও পড়ুনমোদির সঙ্গে বৈঠকে হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গ তুললেন ইউনূস১১ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনাকে ফেরতের প্রসঙ্গ
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্যাংককে সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। আলোচনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা (প্রত্যর্পণ), ভারতে বসে তিনি যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, সে প্রসঙ্গেও কথা হয়েছে।
বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টেও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের অনুরোধের বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির কাছে জানতে চান। এ বিষয় এখন ভারত সরকারের কাছে বিবেচনাধীন রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ শুক্রবার ব্যাংককে প্রতিবেশী দুই দেশের নেতাদের মধ্যে প্রথম বৈঠক হলো.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রসঙ গ সরক র র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
এই কঠিন সময়ে ঐক্য ধরে রাখা প্রয়োজন: ঢাবি উপাচার্য
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির ঐক্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান।
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। এক অর্থে জাতির জন্য এটি একটি ক্রান্তিকাল। এই সময়ে আমাদের ঐক্য ধরে রাখা একান্তই প্রয়োজন।’
আজ রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে নিয়াজ আহমেদ খান এ কথা বলেন।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতির জন্য পরম শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও মমতার দিন। এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। তাঁদের সেই চূড়ান্ত আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে আছে।
নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, যুগে যুগে ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ এ জাতিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং সাহস জুগিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতি ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে।
উপাচার্য আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আজও জাতির ঐক্য ধরে রাখার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোকবর্তিকা। একই সঙ্গে ১৯৫২, ১৯৬৮, ১৯৬৯, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে যাঁরা রক্ত ও জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ১৯৫২ থেকে ২০২৪—এর প্রতিটি দিন ও ঘটনাপ্রবাহ জাতির মৌলিক পরিচয়ের মাইলফলক। এর কোনো অংশ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ইতিহাসই যুগে যুগে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে, আর বর্তমান সময়ে সেই ঐক্য ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।