Samakal:
2025-04-25@05:00:00 GMT

হাহাকার ভুলে হাসছে হাওর

Published: 4th, April 2025 GMT

হাহাকার ভুলে হাসছে হাওর

একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত আর দুষ্টচক্রের ফসলি জমির মাটি খুবলে নেওয়ায় কঠিন সংকটের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে প্রায় সর্বহারার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন হাওর অঞ্চলের কৃষকরা। এর মাঝেও লড়াই চালিয়ে গেছেন তারা। বোরো আর আমন উৎপাদনের লাগাতার সাফল্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে সুনামগঞ্জের কৃষি।

বোরো ও আমন ধানের অন্যতম উৎপাদন স্থল হিসেবে পরিচিত জেলার ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার হাওরবেষ্টিত অংশে বসবাসকারী কৃষকরা ২০১৭ এবং ২০২২ সালের ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবিলা করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের অবস্থার উন্নয়নে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে এ অঞ্চলের কৃষি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এরইমধ্যে অনেকাংশে বদলে গেছে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ড এবং জীবন ও জীবিকার ব্যবস্থাপনা। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যার পর দেশের অন্যতম এ শস্য উৎপাদন ক্ষেত্র নিষ্প্রাণ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা ছিল। ওই বন্যায় শতভাগ ফসলাহানির ঘটনা ঘটে এখানে; যা হাওর অঞ্চলে সংঘটিত ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত। ফসলহানির ঘটনায় বহু কৃষক নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন। মহাসংকটের মুখে পড়েছিল কৃষি ব্যবস্থাপনা।

পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের বন্যায় আগের বারের মতো এত বড় মাপের দুর্বিপাকে না পড়লেও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয় কৃষিতে। শুধু ধর্মপাশার ডুবাইল হাওরের বাঁধ ভেঙে এক হাজার ৬৫ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়। এতে স্থানীয় পর্যায়সহ জাতীয় পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তায় বিরূপ প্রভাব পড়ে। পাশাপাশি স্থলজ ও জলজ প্রাণির পুরো খাদ্যচক্র ব্যাহত হয়। হাওরের পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাব অতিমাত্রায় হওয়ায় পানির স্বাভাবিক গুণাগুণ নষ্ট হয়। এতে ধ্বংস হতে শুরু করে বিপুল মৎস্য সম্পদ এবং মাছের অভয়ারণ্য।

একদিকে ফসলহানি, অন্যদিকে ঋণের চাপে স্থানীয় অনেক কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকতে শুরু করেন। অনেকে শহরমুখীও হয়েছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগের সব উদ্বেগ, আশঙ্কা ঝেরে ফেলে কৃষকেরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন হাওর অঞ্চলসহ দেশের খাদ্য নিরাপত্তায়।

কয়েক বছর হাওরবেষ্টিত ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দিন দিন বাড়ছে আমনের চাষ। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই দুই উপজেলায় ২০২৩ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯৬৩ টন বোরো ও আমন ধান উৎপাদিত হয়েছে। যার বাজার মূল্য এক হাজার ৩২২ কোটি ৩৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। অনুকূল আবহাওয়া ও সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা দুই উপজেলা মিলিয়ে ৫৭৪ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার ধান উত্তোলনে সক্ষম হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুধু ধান চাষই নয়, শুষ্ক মৌসুমে হাওরপারের কৃষকদের ভুট্টা ও সরিষা আবাদেও আগ্রহ বাড়ছে। গত তিন বছরে দুই উপজেলায় ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ভুট্টা ও ১৯ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকার সরিষা উৎপাদন হয়েছে। শাকসবজি উৎপাদনেও পিছিয়ে এখানকার কৃষকেরা। ২০২৩ সালে ১৪ হাজার ৫৪০ টন, ২০২৪ সালে ১৯ হাজার ৬৭৭ টন এবং চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৩৮ হাজার ৩৪৬ টন শাকসবজি উৎপাদন হয়েছে এ অঞ্চলে। সংশ্লিষ্ট কৃষি দপ্তরের সূত্রে পাওয়া তথ্যেও এমনটা জানা গেছে। 

স্থানীয় কৃষক এবং কৃষি দপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর বোরো চাষাবাদের পরিমাণ বাড়ছে এখানে। ২০২২ থেকে ২০২৩ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়; যা থেকে এক লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৮ টন ধান পাওয়া যায়। পরের অর্থবছরে ৩১ হাজার ৯০৭ হেক্টর জমিতে এক লাখ ৯১ হাজার ৫৯৫ টন ধান উৎপাদিত হয়। চলতি অর্থবছরে ৩১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে; যা থেকে এক লাখ ৯১ হাজার ৬১৫  টন ধান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এছাড়াও ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই উপজেলায় আমন চাষাবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে। পরের অর্থবছরে ৪৩৫ হেক্টর ও চলতি অর্থবছরে ৫০০ হেক্টরের বেশি জমিতে আমনের চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা ২০১৭ সালের কথা মনে হলে এখনও বাকরুদ্ধ হয়ে যান। সেখান থেকে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছেন– এটি বড় ব্যাপার। টানা কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। কৃষকদের মরিয়া চেষ্টা ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। সেই সঙ্গে কৃষি বিভাগ স্থানীয় কৃষক ও কৃষি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে যেভাবে সহায়তা দিয়েছে তার সামষ্টিক সাফল্য দৃশ্যমান। এই মৌসুমেও কৃষকরা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বোরো ফসল ঘরে তুলছেন। এতে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় খাদ্যভান্ডারে ভূমিকা রাখছেন ধর্মপাশা ও মধ্যনগরের কৃষকরা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বোরো আবাদে কৃষকের সাফল্যের প্রভাব দৃশ্যমান ছিল হাওরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের বাজার মধ্যনগরে। এখানকার অর্ধশতাধিক ধানের আড়তে মৌসুমজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। কৃষকের পাশাপাশি স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীরাও লাভবান হয়েছেন। আড়তগুলোতে বইয়াখাউরী, টেপী, গচি, রাতা, বাঁশমতি, কালিজিরা, লাল ধান, ছুরাইক্কা, বোরোসহ দেশীয় জাতের ধান সংগ্রহ করে মজুত করেন ব্যবসায়ীরা। সোমেশ্বরী নদীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধান সংগ্রহ করতে আসা বড় বড় নৌকার সারি দেখলে বোঝা গেছে বোরো উৎপাদন ও ধান সংগ্রহ ছিল পর্যাপ্ত পরিমাণে। অথচ ২০১৭ সালে ফসলডুবির ঘটনার পর এসব আড়তে তালা ঝুলেছিল; যা স্থানীয় অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়েছিল অনেকাংশেই।

চলতি মৌসুমে বোরো ফসলকে সামনে রেখে ধান কেনার জন্য এরইমধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আড়তের লোকজন। এমনটাই জানা গেছে মধ্যনগর বাজার ঘুরে। মধ্যনগর আড়তদার কল্যাণ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বরুণ সরকার বলেন, ফসলহানির লোকসান কয়েক বছর টানতে হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ধানের ভালো ফলন পাওয়ায় পরিস্থিতি বদলেছে। কৃষক ও ধান ব্যবসায়ী উভয় পক্ষ লাভের মুখ দেখছে। প্রতি বছর ধানের মৌসুমে মধ্যনগরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ধান কেনাবেচা হয়।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, এখানকার মানুষ আর কোনোদিনও ২০১৭-এর পুনরাবৃত্তি চান না। সেজন্য হাওর অঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশের সেভাবে যত্ন করতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে বিশেষায়িত এসব অঞ্চল রক্ষা করা না গেলে সামগ্রিকভাবে দেশের ভূপ্রকৃতি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে। ঋতু আর মৌসুমের সঙ্গের খুব কঠিন হিসেবে মিলিয়ে চলতে হয় এখানকার কৃষকদের। এ অঞ্চলের বোরো আর আমনের দিক নজর রেখে বাঁধের কাজে ন্যূনতম অবহেলার সুযোগ নেই। এখন বোরো ফসল তোলার সময় চলছে। এ সময় আবহাওয়া বৈরী হলে বিপদ। তাই গবেষণা করে স্বল্পমেয়াদি ধান জাতের উদ্ভাবন করা সময়ের দাবি।

মধ্যনগর উপজেলার দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী নূর আলম ও ধর্মপাশা উপজেলার দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এরইমধ্যে এখানকার সব বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। এখন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। ফসল উত্তোলনের আগ পর্যন্ত নজরদারি অব্যাহত থাকবে।

ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (মধ্যনগরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ তুষার বলেন, খাদ্য নিরাপত্তায় দুই উপজেলার প্রায় ৫৫ হাজার কৃষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে। ওই কর্মকর্তারা বলেন, হাওর অঞ্চলের কৃষকের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় ফসল পরিবহন ও বাজারজাতকরণে। হাওরের সঙ্গে উপজেলা সদরসহ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ দ ই উপজ ল ব যবস থ উপজ ল র উপজ ল য় ক ষকদ র ন হয় ছ উৎপ দ ক ষকর

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের চেয়ে কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আন্তর্জাতিক সংস্থাটির অনুমান, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। তাদের এ পূর্বাভাস যা গত বছরের অক্টোবর এবং চলতি বছরের জানুয়ারির বেশ কম।

আগের দুই পূর্বাভাসে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৪ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ১০ শতাংশ হতে পারে। তবে আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে অনুমান করছে সংস্থাটি। এটিও আগের পূর্বাভাস থেকে কম। 

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানোর পেছনে দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তাকে অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। সর্বশেষ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে গতকাল প্রকাশিত সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেটে। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর ওপর পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস রয়েছে। গত জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংক ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ রিপোর্টে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার অনুমানের পেছনে মূলত গত জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়াকে মূল কারণ উল্লেখ করা হয়। 

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে আসা বেড়েছে। এর কারণ, হুন্ডি কমা এবং ব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে বৈদেশিক মুদ্রার দরের পার্থক্য কমে যাওয়া। 

গত আগস্টে পতনের মাত্র দুই মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরে সংসদে জাতীয় বাজেট পাস করেছিল। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করে। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ শিরোনামে প্রকাশিত তথ্যে পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে। রাজস্ব সংস্কার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক খাতের সংস্কার না হলে প্রবৃদ্ধির গতি আরও মন্থর হতে পারে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহসী ও লক্ষ্যভিত্তিক সংস্কার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি আর্থিক খাতের দুর্বলতা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে নতুন বিনিয়োগ কম হতে পারে। এর আগে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং একই বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং জ্বালানির দাম বৃদ্ধিও ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। যার প্রভাব শেষ পর্যন্ত অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতিকে কমিয়েছে।

মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক খাত প্রসঙ্গ 

বিশ্বব্যাংকের গতকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির গড় হার এখন পর্যন্ত ৯ দশমিক ৩০ শতাংশে রয়েছে। যদিও ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তা ১১ দশমিক ৭০ শতাংশে পৌঁছে ছিল, যা ভোক্তাদের ব্যয় সক্ষমতা কমিয়েছে। এর ফলে দেশের ভোগব্যয় ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমেছে। যদিও রপ্তানিতে কিছুটা প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকটাই বৃদ্ধি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করলেও অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারেনি।

প্রবৃদ্ধিতে আর্থিক খাত যথেষ্ট সহায়তা করতে পারছে না জানিয়ে বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ালেও তা কার্যকরভাবে আর্থিক খাতে পৌঁছায়নি। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর উচ্চ অনাদায়ী ঋণ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ, সরকারকে কয়েকটি ব্যাংককে নগদ সহায়তা দিতে হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে না পারার একটি বড় কারণ নির্ধারিত মুদ্রা বিনিময় হার থেকে পুরোপুরি বাজার নির্ধারিত বিনিময় হারে যাওয়ার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়া। অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় এই ধীরগতি আন্তর্জাতিক আস্থাকে ক্ষুণ্ণ করছে। ব্যাংক খাতের দুর্বলতা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। 

রাজস্ব ঘাটতি ও কর নীতি

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু ছিল কর বা রাজস্ব। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে কর হার তুলনামূলক বেশি হলেও রাজস্ব আদায় কম। ২০১৯-২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় গড় সরকার রাজস্ব ছিল জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল অঞ্চলে তা ২৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রাজস্ব আদায়ের হার এখনও কম। বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ের হার সম্ভাব্য জিডিপির তুলনায় অনেক কম, যা আর্থিক সংকট কমাতে বড় বাধা হয়ে আছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের চিফ ইকোনমিস্ট ফ্রান্সিসকা ওহনসরগ বলেন, রাজস্ব আদায়ের দুর্বলতা দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক ভঙ্গুরতার মূল কারণ। করের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও কর আদায় দুর্বল। এর ফলে যারা কর দেন, তাদের ওপর করের বোঝা বেশি পড়ে। অথচ সরকার জনগণের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত অর্থ পায় না।

দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি 

শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক। দক্ষিণ এশিয়ায় মোট প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ছিল ৬ শতাংশ। ২০২৫ সালে তা কমে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশে নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অঞ্চলের মধ্যে ভুটান, ভারত, নেপাল স্বাভাবিক গতিতে ফিরে এলেও বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা এখনও অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপে রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চলতি বছর বাংলাদেশে আরো ৩০ লাখ মানুষ দরিদ্র হতে পারে: বিশ্বব্যাংক
  • নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলের মতের অমিল হলে উত্তেজনা বাড়বে: বিশ্বব্যাংক
  • দেশে ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হতে পারে
  • বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশ হতে পারে: বিশ্বব্যাংক
  • রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে
  • বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৩ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক
  • বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশ হতে পারে: বিশ্বব্যাংক
  • আগে কমেছিল নগদ সহায়তা, এখন বাড়ল রপ্তানি মাশুল
  • সুন্দরবন সুরক্ষায় বিলম্ব নহে
  • ৩ মাসে আয় ৯৯ কোটি টাকা, আয়ের অর্ধেকই মুনাফা