Samakal:
2025-04-29@13:43:34 GMT

বড়ই বেদনার ঈদ তাদের

Published: 4th, April 2025 GMT

বড়ই বেদনার ঈদ তাদের

গত বছরও ঈদের সময় স্ত্রী ও শিশু সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক, কসমেটিকস, খেলনা সামগ্রীসহ নানা কিছু নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছিলেন বরিশালের বানারীপাড়ার পূর্ব সলিয়াবাকপুর গ্রামের হাফেজ মো. জসিম উদ্দিন। ঈদের দিন স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন তিনি। এবারের ঈদে জসিম উদ্দিনের পরিবারে আনন্দের বদলে পরিবারে বিষাদ নেমে আসে। ঈদের দিন স্ত্রী ও দুই সন্তান বারবার জসিম উদ্দিনের কবরের কাছে গিয়ে চোখের জলে ভেসেছেন। 

একই অবস্থা ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অপর শহীদ বানারীপাড়া উপজেলার জম্বদ্বীপ গ্রামের রাকিবের পরিবারে। তাঁকে হারানোর শোকস্মৃতিতে ডুবে আছেন স্বজনরা। 
গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২১ জুলাই সকালে রাকিব ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকায় বাজার করতে বেরিয়ে আন্দোলনকারী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। দুপুরে ফতুল্লার খানপুর হাসপাতালে গিয়ে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন রাকিবের বাবা। এ ঘটনার তিন দিন আগে ১৮ জুলাই দুপুরে রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে কোটা আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন। তিনি সেখানে একটি গাড়ির ওয়ার্কশপে চাকরি করতেন। 

শহীদ জসিম উদ্দিনের মৃত্যুকালে তাঁর ছেলে সাইফের বয়স ছিল মাত্র দেড় বছর। ছোট্ট সাইফ এখনও বাবাকে খুঁজে ফেরে। জসিম উদ্দিনের স্ত্রী সুমি আক্তার দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্না-বিলাপ করে বলেন, স্বামীকে হারিয়ে তাদের সব আনন্দ চিরকালের জন্য শেষ হয়ে গেছে। ঈদ তাদের কাছে এখন বড়ই বেদনার। বাবার জন্য ছেলে-মেয়ে দুটি হাহাকার করছে। ছোট্ট ছেলেটি বাবার জন্য কাঁদছে, আবার হাত দিয়ে মায়ের (তাঁর) চোখের জল মুছে দিচ্ছে। এবার আর ওদের জন্য নতুন পোশাক, খেলনা, খাবার নিয়ে বাবা আসেননি। তাঁকে ছাড়া খুব অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। 

শহীদ রাকিব (২১) প্রতিবছর বাবা-মা-ভাইসহ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতেন। গত বছরও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বাজার জামে মসজিদে বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ঈদ নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। এবার রাকিবকে ছাড়া সেই মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে ছেলের কথা মনে পড়তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দিনমজুর বাবা মোশারেফ হোসেন। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন সপরিবারে বানারীপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ছেলের কবর জিয়ারত করার। ঈদের দিন বিকেলে গ্রামের বাড়িতে এসে রাকিবের কবর জিয়ারত শেষে কান্নাকাটি-বিলাপ করছিলেন পরিবারের সদস্যরা। 

নিহত হওয়ার মাত্র চার মাস আগে রাকিবের সঙ্গে বিয়ে হয় বরগুনার আমতলীর জান্নাতের (১৮)। বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাদের। কিন্তু দু’হাতে আঁকা বিয়ের মেহেদির রঙ মুছে যাওয়ার আগেই সব স্বপ্ন-আশা যেন চুরমার হয়ে যায় জান্নাতের। 

রাকিবের মা রাশিদা বেগম বলেন, নানির কাছে বড় হওয়া অসহায় এতিম মেয়েটাকে (জান্নাত) ছেলের বউ করেছিলাম। চোখের সামনে বউটা বিধবা হয়ে যায়। রাকিবকে দাফনের কয়েক দিন পরে জান্নাত তার নানির সঙ্গে চলে যায়। এরপর তাদের সঙ্গে আর জান্নাতের যোগাযোগ নেই। 

রাকিব শহীদ হওয়ার পরে তাঁর পরিবার যে দান-অনুদান পেয়েছে তা দিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ির পুকুর ভরাট করে ঘরের ভিত্তি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। জীবিত অবস্থায় রাকিবের নিজ বাড়িতে ঘর নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ না হলেও তাঁর জীবনের বিনিময়ে পাওয়া সহায়তার অর্থ দিয়ে সেই ‘স্বপ্নের ঘর’ নির্মাণ হচ্ছে। এ বিষয়টিও ছেলে হারানো বাবা-মায়ের কাছে নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল পর ব র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মাতারবাড়ি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার ট্যারিফ অনুমোদন  

বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের  বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮.৪৪৭৫ টাকা। এ কেন্দ্র থেকে ৩০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনতে মোট ব্যয় হবে ২ লাখ ১৭ হাজার ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানিয়েছে, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৫৮৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

মাতারবাড়ি ৬০০¬X২ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদুৎকেন্দ্র ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো)। বাবিউবোর বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনার জন্য সিপিজিসিবিএল ও বাবিউবোর মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদে স্বাক্ষরিতব্য পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ট্যারিফ স্ট্রাকচার ও লেভেলাইজড ট্যারিফ কিলোওয়াট ঘণ্টা ৮.৪৪৭৫ টাকায় কেনার চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।

ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেনা হলে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার ২৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা হিসাবে ৩০ বছর মেয়াদে সিপিজিসিবিএল-কে আনুমানিক ২ লাখ ১৭ হাজার ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

বর্তমান ট্যারিফ কিলোওয়াট ঘণ্টা ৮.৪৪৭৫ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে চূড়ান্ত ব্যয় হিসাব করে পুনরায় ট্যারিফ নির্ধারণ করা হবে।

সিপিজিসিবিএল সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এর উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে যে পরিমাণ লাভ হবে, তা সরকারের লাভ হিসেবে বিবেচিত হবে। 

প্রথম সংশোধিত ডিপিপি একনেকে অনুমোদিত হয় ২০২১ সালের  ২৩ নভম্বর। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশন, তোশিবা কর্পোরেশন ও আইএইচআই কর্পোরেশন।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ