গত বছরও ঈদের সময় স্ত্রী ও শিশু সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক, কসমেটিকস, খেলনা সামগ্রীসহ নানা কিছু নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছিলেন বরিশালের বানারীপাড়ার পূর্ব সলিয়াবাকপুর গ্রামের হাফেজ মো. জসিম উদ্দিন। ঈদের দিন স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন তিনি। এবারের ঈদে জসিম উদ্দিনের পরিবারে আনন্দের বদলে পরিবারে বিষাদ নেমে আসে। ঈদের দিন স্ত্রী ও দুই সন্তান বারবার জসিম উদ্দিনের কবরের কাছে গিয়ে চোখের জলে ভেসেছেন।
একই অবস্থা ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অপর শহীদ বানারীপাড়া উপজেলার জম্বদ্বীপ গ্রামের রাকিবের পরিবারে। তাঁকে হারানোর শোকস্মৃতিতে ডুবে আছেন স্বজনরা।
গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২১ জুলাই সকালে রাকিব ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকায় বাজার করতে বেরিয়ে আন্দোলনকারী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। দুপুরে ফতুল্লার খানপুর হাসপাতালে গিয়ে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন রাকিবের বাবা। এ ঘটনার তিন দিন আগে ১৮ জুলাই দুপুরে রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে কোটা আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন। তিনি সেখানে একটি গাড়ির ওয়ার্কশপে চাকরি করতেন।
শহীদ জসিম উদ্দিনের মৃত্যুকালে তাঁর ছেলে সাইফের বয়স ছিল মাত্র দেড় বছর। ছোট্ট সাইফ এখনও বাবাকে খুঁজে ফেরে। জসিম উদ্দিনের স্ত্রী সুমি আক্তার দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্না-বিলাপ করে বলেন, স্বামীকে হারিয়ে তাদের সব আনন্দ চিরকালের জন্য শেষ হয়ে গেছে। ঈদ তাদের কাছে এখন বড়ই বেদনার। বাবার জন্য ছেলে-মেয়ে দুটি হাহাকার করছে। ছোট্ট ছেলেটি বাবার জন্য কাঁদছে, আবার হাত দিয়ে মায়ের (তাঁর) চোখের জল মুছে দিচ্ছে। এবার আর ওদের জন্য নতুন পোশাক, খেলনা, খাবার নিয়ে বাবা আসেননি। তাঁকে ছাড়া খুব অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা।
শহীদ রাকিব (২১) প্রতিবছর বাবা-মা-ভাইসহ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতেন। গত বছরও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বাজার জামে মসজিদে বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ঈদ নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। এবার রাকিবকে ছাড়া সেই মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে ছেলের কথা মনে পড়তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দিনমজুর বাবা মোশারেফ হোসেন। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন সপরিবারে বানারীপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ছেলের কবর জিয়ারত করার। ঈদের দিন বিকেলে গ্রামের বাড়িতে এসে রাকিবের কবর জিয়ারত শেষে কান্নাকাটি-বিলাপ করছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
নিহত হওয়ার মাত্র চার মাস আগে রাকিবের সঙ্গে বিয়ে হয় বরগুনার আমতলীর জান্নাতের (১৮)। বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাদের। কিন্তু দু’হাতে আঁকা বিয়ের মেহেদির রঙ মুছে যাওয়ার আগেই সব স্বপ্ন-আশা যেন চুরমার হয়ে যায় জান্নাতের।
রাকিবের মা রাশিদা বেগম বলেন, নানির কাছে বড় হওয়া অসহায় এতিম মেয়েটাকে (জান্নাত) ছেলের বউ করেছিলাম। চোখের সামনে বউটা বিধবা হয়ে যায়। রাকিবকে দাফনের কয়েক দিন পরে জান্নাত তার নানির সঙ্গে চলে যায়। এরপর তাদের সঙ্গে আর জান্নাতের যোগাযোগ নেই।
রাকিব শহীদ হওয়ার পরে তাঁর পরিবার যে দান-অনুদান পেয়েছে তা দিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ির পুকুর ভরাট করে ঘরের ভিত্তি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। জীবিত অবস্থায় রাকিবের নিজ বাড়িতে ঘর নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ না হলেও তাঁর জীবনের বিনিময়ে পাওয়া সহায়তার অর্থ দিয়ে সেই ‘স্বপ্নের ঘর’ নির্মাণ হচ্ছে। এ বিষয়টিও ছেলে হারানো বাবা-মায়ের কাছে নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল পর ব র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সামনের মৌসুমে ইপিএলের ৫ দল চ্যাম্পিয়নস লিগে
আগামী মৌসুম থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের (ইপিএল) ৫টি দল খেলবে চ্যাম্পিয়নস লিগ! শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগই নয়, ইউরোপের বাকি দুই প্রতিযোগিতা ইউরোপা লিগ ও কনফারেন্স লিগেও পারফরম্যান্সের জন্য ইপিএল অতিরিক্ত একটি স্থান অর্জন করেছে।
দুটি লিগকে ইউরোপীয় পারফরম্যান্স স্পট (ইপিএস) পুরস্কৃত করা হবে, যা গত মৌসুমে চালু করা হয়েছিল। মূলত চ্যাম্পিয়নস লিগে ৩৬টি দলকে অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রকিয়া, সেখানে একটি সংস্কার হিসাবে কাজ করেছে ইপিএস স্পট।
মৌসুমের বেশিরভাগ সময় ধরেই ইংল্যান্ড টেবিলের শীর্ষে থেকে বেশ এগিয়ে ছিল ইপিএসের জন্য। নকআউট প্লেঅফ রাউন্ড এবং শেষ ষোলো পর্বে ইতালীয় ক্লাবগুলির খারাপ ফলাফলের তালিকার মাধ্যমে অতিরিক্ত স্থানটি প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। ফলে প্রিমিয়ার লিগের দল গুলোকে শুধুমাত্র একটি জয় বা দুটি ড্র দরকার ছিল। যা মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দিবাগত রাতে নিশ্চিত হয়ে যায়, যখন আর্সেনাল ৩-০ ব্যবধানে জিতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে।
আরো পড়ুন:
আর্সেনালের বিপক্ষে রিয়ালের প্রতিশোধের ম্যাচ
ইয়ামালের দাবি, বার্সাই চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতবে
ঢাকা/নাভিদ