ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা সালিশে রফা, এলাকায় ক্ষোভ
Published: 4th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বাক্প্রতিবন্ধী এক নারীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা সালিশে রফা করে দিয়েছেন স্থানীয় সমাজপতিরা। এ ঘটনায় অভিযোগ ওঠা মো. আজিজকে (৫৫) ১০ বার কান ধরে উঠবস করানো হয়। এ ছাড়া তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও সমাজচ্যুত করা হয়। এমন একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার চরতী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি গ্রামে বাড়িতে ঢুকে ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় আজিজ। বিষয়টি নিয়ে বুধবার বিকেলে সালিশে বসেন এলাকার সমাজপতিরা। সেখানেই মীমাংসার ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।
ভুক্তভোগী বাক্প্রতিবন্ধী নারীর বড় ভাই জানান, ঘটনার দিন রাতে তারা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। এই সুযোগে আজিজ বাড়িতে ঢুকে তাঁর বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় ধস্তাধস্তি টের পেয়ে তাঁর ছোট ভাই ও প্রতিবেশীরা এসে আজিজকে আটক করেন। পরে কৌশলে সে পালিয়ে যায়। পরদিন স্থানীয় সমাজপতিরা সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে তাকে কান ধরে উঠবস করানো, জরিমানা ও সমাজ থেকে বহিষ্কার করে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। জরিমানার ২০ হাজার টাকা তাদের দিতে চাইলেও তারা তা গ্রহণ করেননি।
তিনি আরও জানান, আগেও বেশ কয়েকবার আজিজ তাঁর বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। একবার তাকে হাতেনাতে ধরতে পারেননি। আরেকবার পালিয়ে যাওয়ার সময় ধাওয়া দিয়ে আজিজকে পাশের একটি বিল থেকে আটক করা হয়। তখন আজিজের সঙ্গে ঝগড়া ও মারামারি হয়েছিল। বিষয়টি তার স্ত্রী ও পরিবারকে জানানো হয়েছিল।
চরতী ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আমিনও সালিশে অংশ নেন। তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘উভয় পক্ষের সম্মতিতে আমিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি আবদুল মন্নান, জামাল উদ্দিন, মোরশেদুল আলম টিপু, নুরুল আলম সওদাগর ও আলী নবী লেদুদের নিয়ে সালিশে বসি। সেখানেই বিষয়টির সমাধান করা হয়।’
তিনি বলেন, আজিজকে ধর্ষণচেষ্টার শাস্তি হিসেবে ১০ বার কান ধরে উঠবস করানো হয়। মাটিতে সেজদা দেওয়ানোর পর ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে তাকে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে।
সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
কাঠগড়ায় মেজাজ হারালেন হাজী সেলিম
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সাজেদুর রহমান ওমর নামে এক ব্যক্তি নিহতের মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (৯ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি.এম. ফারহান ইশতিয়াকের আদালত শুনানি শেষে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।
এর আগে তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত তার উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির তারিখ রাখেন। এদিন শুনানিকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়া, হাজির করা হয় আওয়ামী সরকারের সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী, এমপিকেও। তাদেরও গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি ছিলো।
শুনানিকালে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা হাজী সেলিমের ওকালত নামায় স্বাক্ষর নিতে যান আইনজীবী। এসময় মেজাজ হারান তিনি। কিছুটা উচ্চবাচ্য করেন। ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে বোঝানোর পর তিনি স্বাক্ষর করেন। পরে শুনানি শেষে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে হাজী সেলিমের আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ বলেন, “আমার মক্কেল কথা বলতে পারেন না। কারাগারে খাবার খেতে পারেন না। কাউকে কোনো কিছু বোঝাতে পারেন না। এই অভিমানে রেগে গিয়েছিলেন। এজন্য তিনি ওকালত নামায় স্বাক্ষর করতে চাচ্ছিলেন না। কিছুক্ষণ বোঝানোর পর স্বাক্ষর করেন। তাকে বলেছি, সিস্টেমের বাইরে তো কিছু করতে পারবো না।”
তিনি বলেন, “আমার মক্কেলকে ১৯ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এখনো ১০ দিনের রিমান্ড পেন্ডিং রয়েছে।”
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ২১ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন ফুটওভার ব্রিজের নিচে ছাত্রজনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন সাজেদুর রহমান ওমর। বিকেলে আসামিদের আক্রমণে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ আগস্ট মারা যান। এ ঘটনায় গত ৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
ঢাকা/মামুন/ইভা