ওয়াক্ফ বিল পাসের প্রতিবাদে কলকাতা চেন্নাই আহমেদাবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ
Published: 4th, April 2025 GMT
ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হওয়ার পর উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। দীর্ঘ বিতর্কের পর বৃহস্পতিবার রাতে ১২৮-৯৫ ভোটে বিলটি পার্লামেন্টের শেষ বৈতরণী পার করে।
রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পরই বিলটি আইনে পরিণত হবে। তবে বিরোধী দল কংগ্রেস এত সহজে হার মানছে না, তারা বিলটি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, আমরা শিগগিরই ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল-২০২৫-এর সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে যাব। কংগ্রেস সাংসদ সোনিয়া গান্ধী এই বিলকে সংবিধানের ওপর ‘স্পষ্ট আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, বিজেপি সমাজকে ‘স্থায়ীভাবে বিভক্ত’ রাখতে চায়।
বিজেপি তাঁর এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। পার্লামেন্টে এই বিল নিয়ে তীব্র বাগ্বিতণ্ডা হয়। রাজ্যসভায় রেকর্ড ১৭ ঘণ্টা ২ মিনিট এবং লোকসভায় ১২ ঘণ্টার বেশি আলোচনা হয়।
বিতর্কিত বিলটি পাসের প্রতিবাদে শুক্রবার কলকাতা, চেন্নাই ও আহমেদাবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। জুমার নামাজ শেষে মুসলিম সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল প্রত্যাখ্যান’ স্লোগান দেন।
কলকাতায় জয়েন্ট ফোরাম ফর ওয়াক্ফ প্রোটেকশনের ডাকে বিক্ষোভ হয়। এএনআইর ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভস্থলে উন্মুক্ত স্থানে জমায়েত হয়ে বক্তারা বিলটির বিরোধিতা করেন। আহমেদাবাদে পরিস্থিতি বেশি উত্তপ্ত ছিল। পুলিশ সেখানে রাস্তায় অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের জোর করে সরানোর চেষ্টা করে। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) গুজরাট শাখার প্রধানসহ ৪০ জনকে আটক করা হয়।
চেন্নাইয়ে অভিনেতা বিজয়ের তামিলাগা ভেট্রি কাজাগাম (টিভিকে) রাজ্যব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেন। চেন্নাই, কোয়েম্বাটুর ও তিরুচিরাপল্লিতে টিভিকে কর্মীরা ‘ওয়াক্ফ বিল প্রত্যাখ্যান’ ও ‘মুসলিমদের অধিকার কেড়ো না’ স্লোগান দেন। লক্ষ্ণৌয়েও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (সেন্ট্রাল লক্ষ্ণৌ) আশীষ শ্রীবাস্তব বলেন, আমরা সবাইকে বিলটি ভালোভাবে পড়ে মতামত দিতে বলেছি। সোশ্যাল মিডিয়া নিয়মিত মনিটর করছি আমরা।
পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর নির্বাচনের মুখে এই বিক্ষোভ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতোমধ্যে বলেছেন, তিনি রাজ্যের মুসলিমদের জমি হারাতে দেবেন না। বিজেপিকে দেশ বিভক্ত করার চেষ্টার অভিযোগ এনে তিনি বলেছেন, নতুন অ-বিজেপি সরকার কেন্দ্রে গঠিত হলে এই বিল বাতিল করা হবে।
ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল পাসের পক্ষে দলের সমর্থনের প্রতিবাদে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন জনতা দলের (ইউনাইটেড) দুই শীর্ষ নেতা। জানা গেছে, দলত্যাগ করা নেতাদের মধ্যে আছেন মোহম্মদ কাসিম আনসারি এবং দলের সংখ্যালঘু সেলের প্রধান মোহম্মদ আশরাফ আনসারি। খবর এনডিটিভি ও দ্য হিন্দুর।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল কসভ
এছাড়াও পড়ুন:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার মামলা
পটুয়াখালীর দুই সাংবাদিকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি করেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম ফারুক অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে মির্জাগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে কামরুজ্জামান জুয়েল নিজেকে মির্জাগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক দিনকাল পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি উল্লেখ করেছেন।
আসামিরা হলেন– দৈনিক সমকালের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি মুফতী সালাহউদ্দিন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এম কে রানা ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম সুবিদখালী এলাকার বাসিন্দা মাসুম হাওলাদার।
গত ১৬ এপ্রিল দৈনিক সমকালে ‘চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধর বিএনপি নেতার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একই দিন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অনলাইনে ‘মাসে ৫০ হাজার টাকা না দিলে ব্যবসা বন্ধের হুমকি বিএনপি নেতার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। মাসুম হাওলাদার তাঁর ফেসবুকে প্রতিবেদনটি শেয়ার করায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সংবাদগুলো ভিত্তিহীন, মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এগুলো বাদীর সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে।
এ ব্যাপারে মুফতী সালাহউদ্দিন ও এম কে রানা জানান, কারও মর্যাদা ক্ষুণ্ন নয়, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদন করেছেন তারা। এমন কিছু না ঘটলে রাসেল মৃধা অভ্যন্তরীণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার দাবি করে অভিযোগ প্রত্যাহারে কেন থানায় আবেদন করেছেন?
এদিকে মামলাটি নিয়ে পটুয়াখালীর সাংবাদিক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ এবং সাংবাদিকদের হয়রানি করতে এটি করা হয়েছে জানিয়ে দ্রুত মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা।