গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ‘আপন দুলাল’ নাটকের মঞ্চায়ন বাতিলের ঘটনাটি রাজনৈতিক কারণে হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। শুক্রবার পুলিশ সদর দপ্তরের ফেসবুক পেজে ওই ঘটনা নিয়ে একটি পোস্টে বলা হয়, নাটকের মঞ্চায়ন বাতিলের নেপথ্যে কোনো ধর্মীয় কারণ নেই। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলেও উল্লেখ করা হয়।

পুলিশের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ৩ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার রানীগঞ্জ উদয়ন সংঘ মাঠে ঈদ সামনে রেখে ‘আপন দুলাল’ নামের একটি নাটক মঞ্চায়িত করার জন্য মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপুর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল হকের নেতৃত্বে বাজারের লোকজন মিলে এই মহড়া দিচ্ছিলেন। নাটকটি স্থানীয় বিএনপির জুনিয়র নেতারা আয়োজন করার কারণে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়। পরে উভয় পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আজিজুর রহমানের অনুরোধে দুর্গাপুর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল হককে নাটক মঞ্চস্থ করতে নিষেধ করা হয়। এরপর নাটকে অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের সিনিয়র নেতার কথা মেনে নাটক মঞ্চস্থ করা থেকে বিরত থাকেন।

ওই দিন মঞ্চ ভাঙার কোনো ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে পুলিশ বলছে, নাটকে অংশগ্রহণকারীরা বিএনপির স্থানীয় জুনিয়র ও সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের আশঙ্কা হওয়ায় সমঝোতার ভিত্তিতে নাটকটি মঞ্চস্থ করা থেকে বিরত থাকেন। পুলিশের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, কিছু সংবাদপত্র বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করছে। এছাড়া সংবাদপত্রে রানীগঞ্জ বাজার মসজিদের ইমাম ও খতিব আজিজুল হকের যে উদ্ধৃতি ছাপা হয়েছে সেটি তিনি বলেননি বলে জানিয়েছেন।

পুলিশ বলছে, কাপাসিয়ার বিষয়টি মূলত রাজনৈতিক ইস্যু, কোনো ধর্মীয় ইস্যু নয়। এ ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি)। পুলিশের ফেসবুক পোস্টের নিচে পাঁচটি সংবাদমাধ্যমের এ- সংক্রান্ত খবরের লিংক দেওয়া হয়। এই খবরগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ দাবি করা হয়।

রমজান মাসের শুরুতে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রানীগঞ্জ উদয়ন কিন্ডারগার্টেন স্কুল মাঠে নাটক মঞ্চায়নের কথা ছিল। স্থানীয় মুসল্লিদের বাধায় তা স্থগিত রাখতে বাধ্য হন আয়োজকরা। বুধবার একই জায়গায় মঞ্চ তৈরি করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নাটকটি মঞ্চায়নের প্রস্তুতি চলছিল। আবারও মুসল্লিদের বাধায় নাটক মঞ্চে গড়াতে পারেনি।

রানীগঞ্জ বাজার মসজিদের সভাপতি ও ব্যবসায়ী মো.

সিরাজুল ইসলাম জানান, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার আজিজুর রহমান পেরার উপস্থিতিতে দুর্গাপুর ইউনিয়নের কোনো স্থানে অশ্লীল নৃত্য করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই মঞ্চের স্থানে সন্ধ্যায় কয়েকশ মুসল্লির অংশগ্রহণে মিলাদ ও দোয়া আয়োজন করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে এখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা নাটক মঞ্চায়নের নামে অশালীন কর্মকাণ্ড করে আসছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নাটক আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য খন্দকার শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, বুধবার রাতে তারা বাজারে বসেছিলেন। এ সময় বাজার মসজিদের ইমাম মো. আজিজুল হক তুষার, মসজিদের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন মুসল্লি এসে নাটক মঞ্চায়ন করতে নিষেধ করেন। ‘চিরদিনের জন্য এখানে নাটক বন্ধ’ রাখার কথা বলেন। এর পর নাটকের জন্য তৈরি মঞ্চ ও প্যান্ডেল গতকাল সকাল ৯টার মধ্যে ডেকোরেটরের লোকজন খুলে নিয়ে যায়।

খন্দকার শাহাদাত হোসেন সেলিম দাবি করেন, ‘আপন দুলাল’ একটি গীতিনাট্য। এতে নারী চরিত্র বা অভিনয় নেই। পরিশীলিত নাটক। অথচ এই নাটক মঞ্চে গড়াতে দেননি তারা। এতদিনের প্রস্তুতি, শ্রম ও উদ্যোগ সব ভেস্তে গেছে।

এ বিষয়ে রানীগঞ্জ বাজার মসজিদের ইমাম মো. আজিজুল হক তুষার জানান, সমাজে খারাপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় মুসল্লিরা আয়োজক কমিটিকে নাটক মঞ্চায়ন না করতে অনুরোধ করেন। তারাও সমাজের ভালোর জন্য শেষ পর্যন্ত সেই নাটক অনুষ্ঠান করেননি। এখানে এককভাবে কেউ নিষেধ করেননি। স্থানীয় মুসল্লি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নিয়ে আয়োজকদের অনুরোধ করেছেন।

কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা বলেন, নাটক মঞ্চায়নের নামে কয়েক বছর ধরে রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় মাদক ও অশালীন কর্মকাণ্ডের আসর বসত। তাই এটি সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও যেন কাপাসিয়াকে মাদকমুক্ত করা যায় সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে রানীগঞ্জ, ফুলবাড়িয়া, কামড়ামাশকসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মাদকবিরোধী সমাবেশ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে নাশেরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি মাদকবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, নাটক আয়োজক কিংবা বাধাদানকারী কোনো পক্ষ থানায় কিছু জানায়নি। তিনি কিছুই জানেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না তাসনিম জানান, তাঁর কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ র মসজ দ র র ফ সব ক প ব এনপ র ন ত কর অন র ধ র জন য র ধ কর ন টক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে নেই কোনো সবজি

সরবরাহ কমের অজুহাতে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। অধিকাংশ সবজি কিনতে গুণতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সেই সঙ্গে দাম বেড়েছে মাছেরও। এতে অস্বস্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা।

কয়েকজন ক্রেতা জানান, শীত মৌসুমের সবজি নিয়ে যে স্বস্তি ছিল, তা এখন আর নেই। বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম ৬০ টাকার ওপরে। কোনো কোনটির দাম একশো পেরিয়েছে।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি পটল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে কমে শুধু পেঁপে পাওয়া যাচ্ছে, তাও ৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়া, করলা, বেগুন, বরবটি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।

সবচেয়ে বেশি দাম দেখা গেছে কাঁকরোলের। গ্রীষ্মকালীন এই সবজিটি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সজনে ডাঁটা ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।

তবে ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি পণ্যের দাম আগের মতোই আছে। পেঁয়াজের দামও কয়েক সপ্তাহ বেড়ে এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় আটকে আছে।

এদিকে, মাছের বাজারেও বাড়তি দাম দেখা গেছে। মা ইলিশ সংরক্ষণে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ও চাষের মাছের সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশ ও চিংড়ির দাম।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি পিস ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দাম হাঁকা হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রতিকেজি চাষের চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, নদীর চিংড়ি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে এসব মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কম থাকে। এছাড়া কই, শিং, শোল, ট্যাংরা, চাষের রুই, তেলাপিয়া,পাঙাশ ও পুঁটি মাছও আগের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।

ঢাকা/সুকান্ত/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ