রাজশাহীর বাগমারায় চাঁদা না পেয়ে আবদুর রাজ্জাক (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে আমিনুল ইসলাম (২২) নামে ওই হামলাকারী নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বাগমারা উপজেলার রনশিবাড়ি গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। এ সময় ক্ষুব্ধ লোকজনের হামলায় পুলিশের উপপরিদর্শকসহ ছয়জন আহত হয়েছেন।

নিহত মাছ ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক বাগমারার সীমান্তবর্তী নওগাঁর আত্রাই উপজেলার গোয়ালবাড়ি গ্রামের মো মিঠুনের ছেলে। আমিনুল ইসলাম একই গ্রামের বাসিন্দা মো.

ঝড়ুর ছেলে।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে মাছ বিক্রি করছিলেন রাজ্জাক। এ সময় তার কাছে টাকা চান আমিনুল। তাকে টাকা দিতে অস্বীকার করলে পাশের কামারের দোকান থেকে ছুরি এনে রাজ্জাকের বুকে আঘাত করে সে।  এতে ঘটনাস্থলেই মাছ ব্যবসায়ী নিহত হন। পরে ঘাতক আমিনুলকে আটক করে গণপিটুনি দেন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে সেখানে যায় পুলিশ। আমিনুলকে পুলিশ থানায় আনার পথে তাকে ছিনিয়ে নেন স্থানীয়রা। সঙ্গে সঙ্গে ইট দিয়ে তার মাথা থেঁতলে দেন। এতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশের এক কর্মকর্তাসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়। 

পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে আবদুর রাজ্জাক রনশিবাড়ি বাজারের মাছ বিক্রি শেষে নজরুলের চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে একই গ্রামের আমিনুল ইসলাম দোকানে ঢুকে আবদুর রাজ্জাককে ছুরি দিয়ে বুকে আহত করেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে দৌড় দেন আমিনুল। তার আগেই মাছ বিক্রির সময় আমিনুল চাঁদা চান রাজ্জাকের কাছে। টাকা না দিলে তাকে হুমকি দিয়ে ছুরি আনতে কামারের দোকানে যান। এ সময় বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে চা পান করছিলেন রাজ্জাক।
স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে আমিনুলকে ধাওয়া করেন। এ সময় রনশিবাড়ি গ্রামের আবদুর রশিদের বাড়িতে তিনি আশ্রয় নেন। ক্ষুব্ধ লোকজন বাড়িটি ঘিরে রাখেন। খবর পেয়ে বাগমারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। তবে লোকজনের বাঁধার মুখে পড়ে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। লোকজন কয়েক দফা বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালান। তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাদের হাতে তুলে দিয়ে পুলিশকে চলে যেতে বলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, একপর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ক্ষুব্ধ লোকজন বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। বাধা দিলে উপপরিদর্শক সাদিকুল ইসলামসহ পুলিশের ছয় সদস্যকে লাঞ্ছিত ও মারধর করে ভেতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর বাইরে এনে মারধর করেন জনতা। একপর্যায়ে আমিনুল মারা যান।

বাগমারা থানার ওসি আরও জানান, দুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণপ ট ন ন হত ছ র ক ঘ ত হত য আবদ র র জ জ ক ম ছ ব যবস য় ল ইসল ম আম ন ল ব গম র ল কজন এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়া তিনজনই সুবিধাবঞ্চিত কিশোর-তরুণ, ছিলেন স্টেশনের টোকাই: রেলওয়ে পুলিশ

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত তিন কিশোর-তরুণ সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির বলে জানা গেছে। রেলওয়ে পুলিশের ভাষ্য, তাঁরা সবাই ‘টোকাই’ ছিলেন। স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে বোতলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়াতেন।

কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) সোহেল মোল্লা জানান, আজ বুধবার ভোরের কোনো এক সময় বুড়িচং উপজেলার মাধবপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ওই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পরে সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুনকুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ কিশোর-তরুণের মৃত্যু৫ ঘণ্টা আগে

তিনজনের মধ্যে একজনের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। তাঁর নাম সাইফুল ইসলাম (১৮)। তিনি কুমিল্লা রেলস্টেশনে বোতল কুড়ানোর কাজ করতেন। তাঁর মা-বাবা সেখানে রেলস্টেশন পরিচ্ছন্নতা কাজের পাশাপাশি বোতল কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিহত অন্য দুজনের মধ্যে একজনের নাম তুহিন বলে জানা গেলেও আরেকজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। তুহিনও কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনে বোতল কুড়াতেন। তবে তাঁর বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।

আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা রেলস্টেশনে সাইফুলের মরদেহের পাশে মোখলেছুর নামের এক ব্যক্তিকে আহাজারি করতে দেখা যায়। তিনি নিজেকে সাইফুলের বাবা দাবি করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার তিনটা পুত (ছেলে)। এর মইধ্যে সাইফুলডা বড়। গতকালকা দুপুরে আমি সাত প্লেট ভাত আনছি হোটেল থাইক্কা। পুতে কইলো, “আব্বা, কসবা স্টেশনে যাইয়াম; বোতল টোকানোর লাইগ্যা।” আমি কইছি, “পুত, তুই ভাত খাইয়া যা; এহন বোতল টোকান লাগতো না।” পুতে আমার কথা না হুইন্যা চইল্যা গেল। রাইত ৩টা পর্যন্ত পুতের লাইগ্যা অপেক্ষা করছি। আজকা সহালে স্টেশনের এক লোক আমারে ভিডিওতে দেহাইলো, আমার পোলাডা ট্রেনে কাটা পইড়া মইরা গেছো।’

মোখলেছুর জানান, সাইফুলের সঙ্গে নিহত অন্য কিশোর-তরুণও টোকাই। তাঁদের মধ্যে একজনকে তুহিন নামে চেনেন তিনি। মোখলেছুরের গ্রামের বাড়ি দেবীদ্বার উপজেলায়। সেখানে তাঁর ভিটেমাটি না থাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকেন। ছেলের লাশ দাফন করার মতো জায়গা নেই। তাই রেলওয়ে পুলিশকে বলেছেন, লাশটি যেন সরকারিভাবে দাফন করা হয়।

সাইফুলসহ ওই তিনজন গতকাল দুপুরে কুমিল্লা স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছিলেন বলে জানান রাজীব হোসেন নামের আরেক সুবিধাবঞ্চিত তরুণ। সাইফুলের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল বেলা দেড়টার দিকে ওই তিনজন আমাকে ও ইউসুফকে (আরেক পথশিশু) যেতে বলছিল। আমরা যাইনি। আমাকে জানাইছিল, হেরা আখাউড়া যাইব। বিকালে ফিরে আওনের কথা থাকলেও রাইতে আর তাগো দেহি নাই। সাইফুল কুমিল্লা স্টেশনে থাকত। তয় ওই দুজন চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্টেশনে বোতল টোকাইতো।’

তবে ওই তিনজন কোন ট্রেনের নিচে এবং কীভাবে কাটা পড়েছেন, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) সোহেল মোল্লা। তিনি ধারণা করছেন, গতকাল শেষ রাতের দিকে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন তাঁরা।

সোহেল মোল্লা আরও বলেন, নিহত তিনজনই টোকাই ছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন স্টেশনে বোতলসহ ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র কুড়াতেন। তবে যেখানে তাঁরা কাটা পড়েছেন, সেটি নির্জন এলাকা। হয়তো মাদক সেবন করে অসাবধানতার কারণে তাঁরা ট্রেনে কাটা পড়েছেন। কারণ, যেভাবে কাটা পড়েছেন, সেটি দেখে মনে হচ্ছে না তাঁরা ট্রেনের ছাদ থেকে লাফ দিয়েছেন। আবার চলন্ত ট্রেন থেকে নামার সময়ও এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তাঁদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে।

পুলিশ জানায়, লাশগুলোর ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের পরিচয় শনাক্তের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হবে। অন্য দুজনের পরিচয় পাওয়া না গেলে দাফনের জন্য সাইফুলের লাশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে পাঠানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে: সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা
  • কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়া তিনজনই সুবিধাবঞ্চিত কিশোর-তরুণ, ছিলেন স্টেশনের টোকাই: রেলওয়ে পুলিশ