টানা পাঁচ দিন পর সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর ভাঙন কবলিত বেঁড়িবাধের পাশে জিও টিউবের মাধ্যমে বিকল্প রিংবাঁধ দিয়ে অবশেষে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে এবং সেনাবাহিনী সার্বিক সহযোগিতায় আজ শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দুপুর থেকে পানি লোকালয়ে প্রবেশ বন্ধ হয়েছে।

জানা গেছে, পানি উন্নয়নবোর্ড কর্তৃক নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন এবং সেনা বাহিনীর দুটি টিম বিগত তিন দিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জিও টিউবের মধ্যে বালি ভরে সেখানে বিকল্প রিংবাঁধ বাঁধার চেষ্টা করে আসছেন। অবশেষে আজ তারা রিংবাঁধটি বাঁধতে সক্ষম হয়েছেন।

রিংবাঁধ সম্পন্ন হওয়ায় শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দুপুর থেকে ভাঙন কবলিত বেঁড়িবাধ দিয়ে আর লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে না। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ভাঙন কবলিত মানুষের মাঝে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো-২) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

সাখাওয়াত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে জিও টিউব ব্যাগের মধ্যে বালি ভরে বিকল্প রিংবাঁধ দিয়ে প্রাথমিকভাবে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। আরো কিছু জিও টিউব সেখানে দেওয়া হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রিংবাঁধের নির্মাণের সকল কাজ শেষ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর ধাপে ধাপে মূল বেড়িবাঁধ তৈরির কাজ শুরু করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ ঈদের দিন সকাল ৯টার দিকে পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রায় দুই’শ ফুট এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ হঠাৎ করেই খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে গ্রামবাসীর ঈদের আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয়। 

হাজার হাজার স্থানীয় গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দফায় দফায় ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণের প্রাণপণ চেষ্টা চালালেও তা জোয়ারের তোড়ে ব্যর্থ হয়। এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক হাজার মানুষ। পানিতে ভেসে যায় প্রায় চার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের এবং ২১ হেক্টর জমির ফসল। বিধ্বস্ত হয় শতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি। বিদ্যুৎ বিহীন থাকে সেখানকার তিনটি গ্রাম।

প্লাবিত এলাকায় দেখা দেয় সুপেয় পানির অভাব। একইসাথে মানুষের রান্না-খাবার, হাঁস-মুরগি ও গো খাবারের অভাব দেখা দেয়। বানভাসি মানুষ পার্শ্ববর্তী আশ্রয়কেন্দ্র ও পাউবো’র বাঁধে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেন। 

পানিতে প্লাবিত হয় আনুলিয়া ইউনিয়নের নয়াখালী, বিছট, বল্লবপুর, বাসুদেবপুর, আনুলিয়া, চেচুয়া, কাকবাশিয়া, মীর্জাপুর, চেউটিয়াসহ আশপাশের ১০ গ্রাম। বর্তমানে সেখানকার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ঢাকা/শাহীন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব কল প র প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

আইএমএফের ঋণের কিস্তি নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ, শর্ত নিয়ে আলোচনা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়া শেষ পর্যন্ত একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। সেটি হচ্ছে, বাংলাদেশ কখন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার উন্মুক্ত করবে, অর্থাৎ মার্কিন ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। গভর্নর আশা করছেন, ঋণের কিস্তি বাংলাদেশ পাবে। তবে শর্ত নিয়ে আলোচনা এখনো বাকি আছে।

মোট সাত কিস্তিতে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। ইতিমধ্যে তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার।

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠক উপলক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আছেন। ২১ এপ্রিল শুরু হওয়া ছয় দিনব্যাপী এই বৈঠক আগামীকাল শনিবার শেষ হবে। বসন্তকালীন বৈঠকের এক ফাঁকে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত বুধবার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আলাদা বৈঠক হয়।

এ বৈঠকের বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কিছু অগ্রগতি হয়েছে, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে। আশা করছি, কাল-পরশুর মধ্যে একটা ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। এখন কারিগরি দিকগুলো নিয়ে কাজ চলছে।’

দুই কিস্তির ছাড়ের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোথায় এসে ঠেকেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘বিষয় তো একটাই, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা। আইএমএফ এ ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থানে আছে। প্রশ্নটা হচ্ছে সময়ের। এটা কি (কিস্তি ছাড়ের) আগে করব, না পরে।’

বুধবার বৈঠকের পর ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন গভর্নর। সাংবাদিকদের সঙ্গে গভর্নরের আলাপের একটি ভিডিও ফুটেজ ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজা নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়েছেন।

গভর্নর সেখানে বলেন, মুদ্রা বিনিময় হার এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ডলারের সরবরাহও ভালো। এ কারণে গত রোজার সময় ব্যাপক আমদানি হয়েছে। তা ছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বর, ডিসেম্বর ও এ বছরের মার্চ পর্যন্ত আইএমএফের দেওয়া রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে বাংলাদেশ।

আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের আরও জানান, আইএমএফের সঙ্গে মতবিরোধের কিছু নেই। তবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে সংস্থাটি যে প্রাক্কলন করেছে, তার সঙ্গে তিনি পুরোপুরি একমত নন। গভর্নর আশা করেন, এ হার আরেকটু বেশি হবে।

চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি মিশন চলতি মাসে দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকা ঘুরে গেছে।

ঢাকা ছাড়ার আগে আইএমএফের মিশন ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, এ বিষয়ে আরও আলোচনা চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে আগামী জুনের শেষ দিকে। সেই বিষয়ে এখন আলোচনা চলছে ওয়াশিংটনে।

আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ