এবার যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর একগুচ্ছ অতিরিক্ত শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে চীন। মাত্র দুই দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্কের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিল চীন।

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ১০ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাঁচামালের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করবে। এ ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দেশটি। আজ শুক্রবার চীনের পক্ষ থেকে এসব ঘোষণা দেওয়া হয়। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের

বেইজিং জানিয়েছে, ৪ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু মাঝারি ও ভারী বিরল মূল্যবান ধাতুর রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সামারিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টার্বিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লুটেটিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম ও ইট্রিয়াম প্রভৃতি বিরল মূল্যবান ধাতু।

গত বুধবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টায় বিশ্বের অনেকগুলো দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে তিনি চীনের ওপর নতুন করে ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা পূর্বে আরোপিত শুল্কসহ ৫৪ শতাংশে দাঁড়াবে। এর ফলে চীন আমেরিকার শুল্ক তালিকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে সেটি ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়’। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ঘোষণার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা নতুন করে ১৬টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য চীনের বাজার ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারে বিধিনিষেধ আরও বাড়বে।

এ ছাড়া যুক্তরষ্ট্রের ১১টি প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ‘অবিশ্বস্ত সত্তা’ তালিকায় যুক্ত করেছে। এর আওতায় চীন এসব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

বিশ্লেষকদের মতে, একাধিক পাল্টা পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত বাণিজ্যযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রাসঙ্গিক আইনের আলোকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করার মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থকে আরও ভালোভাবে রক্ষা করাই চীন সরকারের উদ্দেশ্য।

ডব্লিউটিওতে চীনের মামলা

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বিরুদ্ধে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) মামলা দায়ের করেছে। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র আজ শুক্রবার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক ডব্লিউটিওর নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন। এটি ডব্লিউটিও সদস্যদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থের ক্ষতি করবে এবং নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করবে।

ওই মুখপাত্র আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ একটি একপক্ষীয় আচরণ। এটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক আদেশের স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করবে। চীন এই সিদ্ধান্তকে দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘের দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনইএসসিএপি) ৮১তম অধিবেশনে বাংলাদেশ একটি তাৎপর্যপূর্ণ কূটনৈতিক জয়লাভ করেছে। আঞ্চলিক সহযোগিতায় ক্রমবর্ধমান নেতৃত্ব প্রদর্শন করে বাংলাদেশ ইউএনইএসসিএপির অধীন মর্যাদাবান দুটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কাউন্সিলের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেনিং সেন্টার অন আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট (এপিসিআইসিটি) ও এশিয়া-প্যাসিফিক সেন্টার ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব ডিজাস্টার ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টের (এপিডিআইএম) গভর্নিং কাউন্সিলে তিন বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

ইউএনইএসসিএপির ৮১তম অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সহসভাপতি নির্বাচিত হন।

উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ভিডিও ভাষণ প্রচার করা হয়। ভাষণে তিনি সব ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণের নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন বিশ্ব গড়ার আহ্বান জানান। তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
গুরুত্বপূর্ণ এই অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

গভর্নিং কাউন্সিলের নির্বাচন ও বিষয়ভিত্তিক অধিবেশনের বাইরে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ইউএনইএসসিএপির নির্বাহী সচিবের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করে। বৈঠকে আইসিটি উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা জোরদারসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আঞ্চলিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর আলোচনা করা হয়।

তাৎপর্যপূর্ণ এই দুটি নির্বাচনী বিজয় এ অঞ্চলে বাংলাদেশের প্রভাবশালী নেতৃত্বের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান আস্থার প্রতিফলন। দুটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কাউন্সিলের নির্বাচনে মূল্যবান সমর্থনের জন্য সব সদস্যরাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ