যুবলীগ সন্ত্রাসীকে চাঁদা না দেয়ায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে অপহরণ করে নির্যাতন
Published: 4th, April 2025 GMT
সিদ্ধিরগঞ্জে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা না দেওয়ায় ৩নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীন মিয়াকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সরল ও তার বাহিনী।
এ ঘটনায় শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে ভুক্তভোগী শাহীন মিয়ার পিতা আঃ রশিদ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন- যুবলীগ সন্ত্রাসী মো.
এরআগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সাইনবোর্ড এলাকা শাহিনের নিজের পরিবহন কাউন্টার থেকে তাঁকে অপহরণ করে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে যায় তারা।
ভুক্তভোগী শাহীন জানান যে, সে সাইনবোর্ড এলাকায় বাসের টিকিট বিক্রির কাজ করেন। সম্প্রতি সেখানে একটি চায়ের দোকান দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সরল বাহিনী তার কাছে বার বার ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে তাকে সেখানে ব্যবসা করতে দিবে না বলে হুমকি দেয়।
শাহীন মিয়া চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে কয়েকবারই দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এরই জের ধরে হিসেবে গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে সরলের ভাই নিশাদসহ ৪/৫ জনের একদল সন্ত্রাসী বাহিনী সাইনবোর্ড টিকিট কাউন্টার থেকে প্রকাশ্যে অনেক মানুষের সামনে থেকে শাহীন মিয়াকে টেনে হেঁচড়ে একটি প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মিতালী মার্কেটের এক নম্বর ভবনে তাদের টর্চার সেলে নিয়ে যায়।
সেখানে শাহীনকে লোহার পাইপ, হকিষ্টিক দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপায়। তাঁকে হত্যা করার জন্য উদ্ধত হয়। এমতাবস্থায় সে সরলের পায়ে ধরে জীবন ভিক্ষা চায়। এক পর্যায়ে যেভাবেই হোক দুই তিন দিনের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা যোগার করে এনে সরলকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় শাহীন।
তারপর সরল ও তার বাহিনী চাঁদা প্রদানের শর্তে তাকে ছেড়ে দেয় এবং শাহীন যাতে আইনের আশ্রয় না নেয় তার জন্য হুমকি প্রদান করে। তবে ছেড়ে দেওয়ার পূর্বে তারা শাহীনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ভিডিও করে রাখে এবং বলে তুই বাড়াবাড়ি করলে এই ভিডিও প্রশাসনের কাছে দিয়ে বলবো তুই ছিনতাইকারী।
এই যুবলীগ ক্যাডার সরল ও হেলাল ফরাজি বাহিনীর সন্ত্রাসী তান্ডবে আওয়ামীলীগের সময় থেকে সাইনবোর্ড স্টান্ড, মিতালী মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সম্পুর্ন জিম্মি। সাইনবোর্ড স্ট্যান্ড এবং মিতালী মার্কেটের কোনো ব্যবসায়ী তাদেরকে চাঁদা না দিয়ে এখনো ব্যবসা বানিজ্য করতে পারে না।
মিতালী মার্কেটের বিভিন্ন ভবনে রয়েছে তাঁর একাধিক টর্চার শেল। কেউ তাঁর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করলে বা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে তাদের বাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে এসে এই টর্চার শেলে নিয়ে এসে নির্যাতন চালায়।
যুবলীগ সন্ত্রাসী সরল ও হেলাল ফরাজি এবং তাদের বাহিনী এখনো তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দাপটে চালিয়ে যাচ্ছে। রোজার মধ্যে সরলের নেতৃত্বে মিজমিজি কান্দাপাড়া এলাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক পাপ্পু এবং স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা টুটুলের বাড়ি করে সশস্ত্র হামলা করে। এই ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ সন্ত্রাসী সরলের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা হলেও পুলিশ সরলকে রহস্যজনক কারণে গ্রেপ্তার করেনি।
এদিকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব ভূমিকায় জনমনে আতংক বিরাজ করছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনুর আলম বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করি। এসময় অভিযুক্ত কাউকে পাইনি। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এঘটনায় মামলা পক্রিয়াধীন রয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ অপহরণ স দ ধ রগঞ জ থ ন স ইনব র ড য বল গ ব যবস সরল র সরল ও
এছাড়াও পড়ুন:
অপহরণের ৩৪ দিন পর সাতক্ষীরা থেকে যশোরের ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪
অপহরণের ৩৪ দিন পর যশোরের ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলামের লাশ সাতক্ষীরা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণ একসরা গ্রামের একটি বাগান থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত রেজাউল যশোর শহরের শংকরপুর ইসহাক সড়কের বাসিন্দা। তিনি কাপড় ও পোশাক তৈরির ব্যবসা করতেন। গ্রেপ্তার চারজন হলেন রিপন হাওলাদার (২৮), সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তালতলা বাজার এলাকার সবুজ (৩৮), সবুজের শ্বশুর একই উপজেলার দক্ষিণ একসরা গ্রামের খোকন মোল্লা (৫২) ও সবুজের স্ত্রী প্রিয়াংকা বেগম (৩৫)।
যশোর কোতোয়ালি থানা-পুলিশের একটি দল লাশ নিয়ে সাতক্ষীরা থেকে যশোরের উদ্দেশে সন্ধ্যায় রওনা দিয়েছে। কাল সোমবার লাশের ময়নাতদন্ত ও আসামিদের আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রেজাউল অপহরণের মামলায় পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামি সবুজকে গত শনিবার চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাঁর সহযোগী রিপনকে বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণ একসরা গ্রামে অভিযান চালিয়ে সবুজের শ্বশুরবাড়ির পাশে এক বাগানে পুঁতে রাখা রেজাউলের লাশ উদ্ধার করা হয়।
জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, কী কারণে রেজাউলকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে, এখনই বলা যাচ্ছে না। নিহত রেজাউল অপহরণের কয়েক দিন আগে নিজের জমি বিক্রি করেন। এরপর তিনি নিখোঁজ হন। পরে তাঁর লাশ উদ্ধার হয়। অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে রেজাউলের ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। জমি বিক্রির টাকা ও ব্যবসার লেনদেনের কারণে অপহরণের পর হত্যা করতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, সবুজ ও রিপন যশোর শহরেই রেজাউলকে হত্যা করেন। পরে তাঁর লাশ বস্তাবন্দী করে ইজিবাইকে কিছু দূর নিয়ে যান। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ও পরে বাসে করে সাতক্ষীরায় নিয়ে যায়। এরপর সবুজ লাশটি তাঁর শ্বশুরবাড়ির পাশে একটি বাগানে পুঁতে রাখেন। কয়েক দিন পর বিষয়টি জানতে পারেন সবুজের শ্বশুর খোকন মোল্লা। তিনি লাশটি উত্তোলন করে পাশের আরেকটি বাগানে পুনরায় পুঁতে রাখেন। পুলিশের অভিযানে আজ সন্ধ্যার দিকে ওই বাগান থেকেই রেজাউলের লাশ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম শহরের শংকরপুর এলাকায় কামরুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পাশের ঘর নিয়ে থাকতেন রিপন হাওলাদার ও সবুজ। পাশাপাশি থাকার সুবাদে তাঁদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে রেজাউল ব্যবসার জন্য পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়িসহ দুই শতক জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সবুজ ও রিপনের সহায়তায় জমিসহ বাড়িটি ২১ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। ওই টাকা হস্তান্তরের কথা বলে ২২ মার্চ রাতে রেজাউলকে মুঠোফোনে ডেকে নেন সবুজ ও রিপন। এর পর থেকে রেজাউল আর বাড়ি ফেরেননি। এ ঘটনায় তাঁর পরিবার জিডি করে। খোঁজ না পেয়ে এক সপ্তাহ পর অপহরণ ও গুমের অভিযোগ এনে সবুজ, রিপনসহ অজ্ঞাত দুই থেকে তিনজনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়।
ওসি আবুল হাসনাত জানান, পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারীদের শনাক্ত করে। এরপর অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সবুজকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁরা রেজাউলকে অপহরণ ও হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।