Samakal:
2025-04-25@04:50:22 GMT

সেজার ভ্যালেজোর প্রেমজীবন

Published: 4th, April 2025 GMT

সেজার ভ্যালেজোর প্রেমজীবন

মার্ক্সবাদী আদর্শে গভীরভাবে প্রভাবিত হলেও, ট্রটস্কিবাদ এবং পরে স্ট্যালিনবাদ দ্বারা প্রভাবিত পেরুর সেজার ভ্যালেজো (১৮৯২-১৯৩৮) ছিলেন বিশ শতকের অন্যতম গভীর ও রহস্যময় কবি। তাঁর কবিতা অস্তিত্বের যন্ত্রণা, রাজনৈতিক বিদ্রোহ ও গভীর আবেগে পরিপূর্ণ, যেখানে প্রেম প্রকাশ পেয়েছে অপূর্ণতা, ট্র্যাজেডি এবং অতীন্দ্রিয়তার মিশেলে। ভ্যালেজোর প্রেমজীবন ছিল এক বিস্ময়কর পরিক্রমা–অন্ধ আবেগ, অন্তর্দহন, এবং পরিণতিহীন আকাঙ্ক্ষার এক অনির্বচনীয় সংমিশ্রণ। ভ্যালেজোর শৈশবের প্রেমের আঘাত থেকে শুরু করে প্যারিসের রোমান্টিক সম্পর্ক এবং স্ত্রী জর্জেট ফিলিপার্টের সঙ্গে জটিল দাম্পত্য, হৃদয় অন্তর্লীন ভালোবাসার গল্প তাঁর কবিতার মতোই বেদনাদায়ক ও গভীর।

প্রেম তাই আকাশ ভিশনের মতো–কখনও তা জীবনকে আলোকিত করেছে, আবার কখনও অন্ধকারেও ফেলেছে। তাঁর প্রেমসত্তার অনুভব : ‘Amar, amar intensamente, hasta que duela.

’ (‘ভালোবাসো, গভীরভাবে ভালোবাসো, যতক্ষণ না তা ব্যথা দেয়।’)

সেজার ভ্যালেজো জীবনে একাধিক প্রেমে পড়েছেন। গবেষকদের মতে তাঁর চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেম চিহ্নিত হয়েছে, যা তাঁর ব্যক্তিত্ব, কবিতা এবং দার্শনিক চেতনায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই চারজন প্রেমময় নারী–মারিয়া রোজা, জিয়াভেলিটা (ওতিলিয়া ভিলানুয়েভা), হেনরিয়েট মাইস এবং জর্জেট ফিলিপার্ট–তাঁর হৃদয় ও সাহিত্যকে নির্মাণ ও বিনির্মাণ করেছে।

ভ্যালেজোর প্রথম ভালোবাসা মারিয়া রোজা সান্দোভাল সানচেজ (Maria Rosa Sandoval Sanchez)। তাদের প্রেম যেমন গভীর ও আবেগপূর্ণ ছিল, তেমনি দুঃখময় ও নিয়তির নির্মম খেলায় ক্ষতবিক্ষতও হয়েছিল। তাঁর সাথে পরিচয় অন্যভাবে।

ভ্যালেজোর জন্ম পেরুর সান্তিয়াগো দে চুকোতে, আর মারিয়া রোজা ছিলেন পেরুর ত্রুজিলো শহরের এক সাধারণ পরিবার থেকে আসা অত্যন্ত রূপবতী, সংস্কৃতিমনা এক তরুণী। তাদের প্রেম শুরু হয় যখন তারা ত্রুজিলোর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছিলেন। এই প্রেম চিঠির মাধ্যমে আরও বেশি গভীর হয়ে ওঠে এবং তাঁর কবিতায়ও মারিয়া রোজা প্রথম ও প্রধান অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেন। কিন্তু তাদের এই ভালোবাসা বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেনি।

ভালোবাসার শিল্পে যখন অর্থ এবং অবস্থানের প্রশ্ন ওঠে আসে তখন বেদনাই শিল্পিত হয়। ভ্যালেজো ছিলেন দারিদ্র্যপীড়িত একজন মানুষ। রোজার পরিবার এ সম্পর্ক তাই মেনে নেয়নি, কারণ তারা চাননি তাদের কন্যা একজন দরিদ্র কবির সঙ্গে জীবন কাটাক। পরিবারের বাধার কারণে, তাদের সম্পর্ক গোপন ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। পারিবারিক চাপে রোজাকে একজন ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, যা ছিল ভ্যালেজোর জন্য এক হৃদয়বিদারক নির্মম মানসিক আঘাত।

এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর ভ্যালেজো ভীষণ একাকিত্ব ও হতাশায় ডুবে যান। প্রেমের এই পরিণতি তাঁকে অস্তিত্ববাদী সংকট ও অন্তর্জ্বালার দিকে ঠেলে দেয়। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘Los Heraldos Negros’ (দ্য ব্ল্যাক হেরাল্ডস, ১৯১৯)-এর অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল এই প্রেম ব্যর্থতার। এ বইয়ের প্রথম কবিতাতে পাওয়া যায় তাঁর গভীরতম যন্ত্রণার প্রকাশ–‘Hay golpes en la vida, tan fuertes... Yo no sé.’ (‘জীবনে এমন সব আঘাত আসে, যা সহ্য করা কঠিন... আমি জানি না কেন।’)

মারিয়া রোজার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর, ভ্যালেজোর জীবনে প্রেমের অনুভূতি বদলে যায়। তিনি আর কখনও বিশুদ্ধ প্রেমে বিশ্বাস করতে পারেননি। তাঁর পরবর্তী প্রেমগুলো (হেনরিয়েট মাইস, জিয়াভেলিটা, জর্জেট ফিলিপার্ট) ছিল জটিল ও বহুমাত্রিক, কিন্তু প্রথম প্রেমের মতো আবেগপূর্ণ ছিল না আর কখনও। তাঁর কবিতায় সে স্বরূপ আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। রোজার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক টিকে যদি যেত, তবে ভ্যালেজোর কবিতা হয়তো এতো গভীর হতো না। প্রেমের হারানোর মধ্যে তিনি পেয়েছিলেন এক অসীম সৃজনশীল শক্তি, যা তাঁকে বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতে পরিণত করে।

ভ্যালেজোর সবচেয়ে রহস্যময় প্রেম ছিল আরেক তরুণীর সাথে, যাঁকে তিনি কবিতায় ‘জিয়াভেলিটা’ নামে ডাকতেন। গবেষকদের মতে, তাঁর প্রকৃত নাম ছিল ওতিলিয়া ভিলানুয়েভা (Otilia Villanueva, aka Geavelita)। ভ্যালেজো যখন পেরুর এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষকতা করছিলেন, তখন জিয়াভেলিটার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জিয়াভেলিটা ছিলেন এক উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে, যার কারণে তাঁদের সম্পর্ক সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাছাড়া ভ্যালেজোর বিরুদ্ধে ছিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এবং তিনি তখন পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন। কিন্তু জিয়াভেলিটা খুবই আবেগপ্রবণ এক তরুণী। ভালোবাসার জন্য, তিনি সমাজের সব নিয়ম ভাঙতে প্রস্তুত ছিলেন।

কিন্তু ১৯২০ সালে, ভ্যালেজো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পেরুর ট্রুজিলোতে গ্রেপ্তার হন এবং দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন। এই সময়েই তাঁর প্রেমিকা জিয়াভেলিটা তাঁর জন্য একের পর এক চিঠি লিখতেন, যা ভ্যালেজোর মানসিক স্থিরতা রক্ষা করত। তবে, ভ্যালেজো যখন কারাগার থেকে মুক্তি পান, তখন তাঁর জীবন অন্য এক দিকে মোড় নেয়। তিনি ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং পরে ফ্রান্সে স্থায়ী হন, যেখানে তাঁর নতুন প্রেম ও বামপন্থি রাজনৈতিক মতাদর্শ গড়ে ওঠে। ফলে, জিয়াভেলিটা ও ভ্যালেজোর প্রেমের সমাপ্তি ঘটে, কিন্তু ভ্যালেজোর মনে ও কবিতায় তাঁর স্মৃতি অমলিন হয়ে রয়ে যায়। তাঁর কবিতায় জিয়াভেলিটার স্মৃতি আজও অমর হয়ে আছে। ‘Te amo con el alma y a veces, con el cuerpo.’ (‘আমি তোমাকে ভালোবাসি আত্মা দিয়ে, আর কখনও কখনও শরীর দিয়ে।’)

ভ্যালেজোর কবিতায় জিয়াভেলিটার উপস্থিতি স্পষ্ট, বিশেষ করে ‘Los Heraldos Negros’ (দ্য ব্ল্যাক হেরাল্ডস, ১৯১৯) এবং ‘Trilce’ (১৯২২)-এ। ‘Trilce’ ভ্যালেজোর অন্যতম বিখ্যাত এবং জটিল কাব্যগ্রন্থ, যেখানে ভাষার চমৎকার খেলায় প্রেম ও বিচ্ছেদের অনুভূতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখানে এক অনুচ্চারিত যন্ত্রণা রয়েছে, যা প্রেমিকাকে হারানোর বেদনা প্রকাশ করে। একটি বিখ্যাত কবিতায় তিনি লিখেছেন: ‘Dulce amiga, que parte de dolor toca en tu voz y en tu andar?’ (‘প্রিয়তমা বন্ধু, তোমার কণ্ঠ আর চলার মধ্যে কোন বেদনার সুর বাজে?’)

সেজার ভ্যালেজোর ফ্রান্সে আসার পর, তাঁর জীবনে ১৯২৬ সালে হেনরিয়েট মাইস প্রবেশ করেন। এই সম্পর্ক শুধু ব্যক্তিগত সুখের বিষয় ছিল না; বরং এটি সেজার ভ্যালেজোর জন্য ছিল এক নতুন কাব্যিক ও সাংস্কৃতিক জগতের দরজা, যেখানে তিনি ফরাসি বুদ্ধিজীবী চক্রের সঙ্গে অনায়াসেই

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক র কখনও র জন য পর ব র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বৈচিত্র্যময় প্রতিভার মরিস ল্যাংলো ওয়েস্ট

অস্ট্রেলিয়ান লেখকদের সর্বাধিক পরিচিত রচনাগুলোর অন্যতম ঔপন্যাসিক মরিস ল্যাংলো ওয়েস্টের ‘দ্য ডেভিলস অ্যাডভোকেট’ এবং ‘দ্য শুজ অব দ্য ফিশারম্যান’। বঞ্চিত বস্তির শিশুদের নিয়ে নন-ফিকশন গল্পের ‘চিলড্রেন অব দ্য শ্যাডোস’ তাঁর অনন্য সৃষ্টি। ওয়েস্টের বইগুলোকে ‘ধর্মীয় থ্রিলার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ধর্ম এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করেন তিনি। আজ এই প্রতিভাধর লেখকের জন্মদিন। ১৯১৬ সালের ২৬ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের সেন্ট কিল্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর সিডনিতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 
মরিস ওয়েস্ট তাঁর দীর্ঘ লেখালেখির জীবনে অনেক পুরস্কার, প্রশংসা ও মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। ৩০টি বই এবং অনেক নাটক লিখেছেন। তাঁর বেশ কয়েকটি উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তাঁর বইগুলো ২৮টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল এবং বিশ্বব্যাপী ৬০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক হওয়ার পর পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। তাঁর প্রতিটি নতুন বই দশ লাখেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। 
লেখক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরুর আগে তিনি বৈচিত্র্যময় পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। চৌদ্দ বছর বয়সে শৈশব জীবন অতিবাহিত করতে আশ্রয়স্থল হিসেবে ক্রিশ্চিয়ান ব্রাদার্স সেমিনারিতে প্রবেশ করতে হয়েছিল তাঁকে। বেশ কয়েক বছর ছিলেন সেখানে। চূড়ান্ত শপথ নেওয়ার আগেই ক্রিশ্চিয়ান ব্রাদার্স ত্যাগ করে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং পরে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি একজন কোড-ব্রেকার হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি অস্ট্রেলিয়ার সপ্তম প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন। পরে সেনাবাহিনীতে যুক্ততার মধ্য দিয়ে তিনি নতুন অধ্যায়ের পরিকল্পনা করেন। সেনাবাহিনী থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি মেলবোর্নে দ্য হেরাল্ডের রেডিও নেটওয়ার্কে কাজ শুরু করেন। পরে অস্ট্রেলাসিয়ান রেডিও প্রোডাকশনে যুক্ত হন। স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করেন কিন্তু বছর দশেকের মধ্যে তিনি ভেঙে পড়েন এবং ব্যবসার তাঁর অংশ বিক্রি করে দিয়ে লেখক হিসেবে সিডনিতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে একজন লেখক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করে ইতালির সোরেন্টোতে গমন করেন। পরিবারের সঙ্গে তিনি অস্ট্রিয়া, ইতালি, ইংল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বসবাস করেন। এ যাত্রা পথে তিনি ব্রিটিশ সংবাদপত্র ডেইলি মেইলের ভ্যাটিকান সংবাদদাতা হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন।
এ সময়ের মধ্য তিনি চিলড্রেন অব দ্য সান, দ্য ডেভিলস অ্যাডভোকেট, ডটার অব সাইলেন্স, দ্য জুস অব দ্য ফিশারম্যান, দ্য অ্যামবাসাডর, দ্য টাওয়ার অব ব্যাবেল, সামার অব দ্য রেড উলফ, দ্য নেভিগেটর, প্রোটিয়াস এবং দ্য ক্লাউনস অব গড-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস রচনা করেন।
১৯৯৬ সালে ‘আ ভিউ ফ্রম দ্য রিজ: দ্য টেস্টিমনি অব আ টোয়েন্টিথ-সেঞ্চুরি ক্রিশ্চিয়ান’ আত্মজীবনীর প্রকাশের মাধ্যমে ওয়েস্ট জীবনের নানা বাঁকের অনেক অজানা বিষয়ের অবতারণা করেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নৈঃশব্দ্যের টংকার
  • মোহ কাঠের নৌকা: বাস্তবতার এক প্রতিচ্ছবি
  • বৈচিত্র্যময় প্রতিভার মরিস ল্যাংলো ওয়েস্ট
  • বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে: টুকু
  • ভারতে মুসলিম নিধনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একের পর এক আইন বাস্তবায়ন করছে মোদি সরকার: মামুনুল হক
  • ফেরি বন্ধের ষড়যন্ত্র চলার অভিযোগ সন্দ্বীপবাসীর, বন্ধ করা হবে না বলে আশ্বাস উপদেষ্টার
  • ফেরি বন্ধের ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ সন্দ্বীপবাসীর, বন্ধ করা হবে না আশ্বাস উপদেষ্টার
  • নিজের যত্ন নিন
  • জনসমর্থন নেই-এমন কাজ করলে ব্যবস্থা: নেতাকর্মীকে তারেক রহমান
  • নির্বাচন হলে বিএনপি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাবে, তাই ষড়যন্ত্র চলছে: সালাউদ্দিন