সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ইউনূসের মন্তব্য এবং বিমসটেকে ভারতের অগ্রাধিকার
Published: 4th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে দাবি করেছেন যে, তাঁর দেশই এ অঞ্চলের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের ‘একমাত্র’ অভিভাবক। ভারতের তরফ থেকে তাঁর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এমন কি ভারত ‘মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট কোঅপারেশন প্যাক্ট’-এ জোর দিচ্ছে এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে এ চুক্তিতে স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। বস্তুত ইউনূসের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এটি নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে।
গত সপ্তাহে চীনে মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফরের সময় বলেন যে, চীনের সীমান্তবর্তী ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশ ‘স্থলবেষ্টিত’ তথা ল্যান্ডলকড। তিনি বেইজিংকে আহ্বান জানান, বাংলাদেশকে চীনের অর্থনীতির একটি ‘এক্সটেনশন’ হিসেবে গড়ে তুলতে–যেখানে বাংলাদেশ চীন ও বৈশ্বিক বাজারের জন্য পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে এক ধরনের টানাপড়েন চলছে। ঢাকা ক্রমেই চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যাহোক, সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ইউনূসের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এবারের বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশ সংস্থাটির সভাপতির দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে।
গত এক দশকে বিমসটেক নয়াদিল্লির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, এ সংস্থায় শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটানও অন্তর্ভুক্ত। ফলে আঞ্চলিক সহযোগিতার কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিমসটেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যেখানে অন্য আঞ্চলিক সংস্থা তথা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) অচল হয়ে থাকায় বিমসটেকের গুরুত্ব বেড়েছে। উল্লেখ্য, পাকিস্তানও সার্কের সদস্য।
বাংলাদেশ যখন বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে তখন ভারত কী ভূমিকা পালন করবে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জয়দীপ মজুমদার বলেছিলেন, ‘বিমসটেকের চেয়ারম্যানশিপের বিষয়ে বলতে গেলে, আমি মনে করি বিমসটেকের সাতটি দেশই সমানভাবে আঞ্চলিক সংহতি ও সহযোগিতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ একই দিনে একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনে বিমসটেকের মহাসচিব ইন্দ্রমণি পাণ্ডে বলেন, আঞ্চলিক সংস্থাটির নেতারা আসন্ন সম্মেলনে প্রথম ভিশন নথি–ব্যাংকক ভিশন ২০৩০ গ্রহণ করবেন। এই ভিশন হলো সামুদ্রিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি এবং একাধিক সমঝোতা স্মারক। বিমসেটেকে এ সম্মেলন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভিশন নথির মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, সেখানে সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা সংস্থা বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবে।
ভারতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সংযুক্তি জরুরি এ কারণে যে, এ অঞ্চল ভারতের নিরাপত্তার কৌশলগত দিক থেকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ভারত এই অঞ্চলে কৌশলগত নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্প, যা মণিপুরের মোরেহকে থাইল্যান্ডের মাই সটের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। ভারত মিয়ানমারের সিত্তে বন্দর কাঠামোও নির্মাণ করেছে, যা উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য বিকল্প এবং তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত সমুদ্রপথ তৈরি করবে। এটি কলকাতার সঙ্গেও সংযোগ স্থাপন করবে। তবে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের চলমান কারণে উভয় প্রকল্পই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ স্থাপনের একমাত্র স্থলপথ হলো সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর।
বিমসটেক সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন। নেপালে গত সপ্তাহে রাজতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়, যেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন। ২০০৮ সালে এক দশকের মাওবাদী বিদ্রোহের অবসান ঘটানোর চুক্তির পর নেপালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয়। গত ১৭ বছরে ১৩ জন প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান চতুর্থ বছরে প্রবেশ করেছে এবং থাইল্যান্ডে যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গত বছর আদালত বরখাস্ত করেছিল, সেখানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রভাব এখনও বিদ্যমান। ৭.
থাইল্যান্ডে পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা গত বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে শ্রেথা থাভিসিন দেশটির সাংবিধানিক আদালত কর্তৃক বরখাস্ত হন। ১৬ বছরের মধ্যে চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রেথা বরখাস্ত হন। শ্রীলঙ্কায় আনুরা কুমারা দেসানায়েকে গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন, যেখানে তার রাজনৈতিক জোট–ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার তথা এনপিপি সংসদীয় নির্বাচনে ২২৫টির মধ্যে ১৫৯টি আসন লাভ করে। তবে তিনি ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে অংশ নেবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী হারিনি আমারাসুরিয়া শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দেবেন।
শেষবার বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলন ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার উদ্যোগে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সরাসরি হিসেবে ২০১৮ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সম্মেলন ছিল সর্বশেষ বিমসটেক সম্মেলন। গত বছর বিমসটেকের জন্য একটি সনদ কার্যকর হয়, যা বিমসটেককে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়। এই সনদ সংগঠনের মূলনীতি, উদ্দেশ্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্ধারণ করে। বিমসটেক বর্তমানে নিরাপত্তা (সমুদ্র ও সাইবার নিরাপত্তাসহ), খাদ্য ও মানব নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পাশাপাশি যোগাযোগ ও জ্বালানি সহযোগিতা বাড়ানোর মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান গঠনে মনোযোগ দিচ্ছে।
[দ্য প্রিন্ট অবলম্বনে]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব মসট ক র অন ষ ঠ ত সহয গ ত গত বছর ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
ঠান্ডা একটা গান গাওয়ার ইচ্ছা ছিল জেফারের
‘ঝুমকা’ গান দিয়ে কোটি কোটি গান প্রেমী মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন জেফার রহমান। তিনি একাধারে গায়ক, গীতিকার এবং সুরকার। জেফার এবার একেবারে ভিন্ন রকমের গান নিয়ে হাজির হয়েছেন। ‘দাগি’ সিনেমায় তার গাওয়া ও সুর করা গান ‘নিয়ে যাবে কি’ শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে।
দাগি সিনেমাতে গাওয়া গানটি নিয়ে জেফার বলেন, ‘‘মানুষের ধারণা ছিল, আমি শুধু ধুমধাড়াক্কা গান করি। নিজের সুরে ঠান্ডা ধরনের একটা গান করার খুব ইচ্ছা ছিল। শিহাব (শাহীন) ভাই গানটা নিয়েছেন, তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’’
‘নিয়ে যাবে কি’ গানটি দাগি মুক্তির পর এসেছে। চরকির ইউটিউবে গানটি প্রকাশের পর ৮ লাখের বেশি মানুষ গানটি গুনেছেন। প্রিতম নামের একজন লিখেছেন, ‘‘এই গানটা মুভির এত সুন্দর সময়ে আসে শুনতে খুবই শ্রুতিমধুর লাগে। জেফারের ভয়েসের সাথেই এই গানটা যায়।’’
আরো পড়ুন:
বর্তমান নাকি ভবিষ্যৎকে বেশি গুরুত্ব দেবেন?
সফলতার ‘সিক্রেট’ একটাই: জ্যাক মা
আরেকজন লিখেছেন, ‘‘অসাধারন গায়কী। বাংলা সিনেমার গানকে অনন্য উচ্চতায় নেয়ার জন্য এইরকম গান দরকার। জেফারের কন্ঠে গানটি এই সিনেমায় একটি দারুন আবহ সৃষ্টি করেছে।’’
জেফার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ইংরেজি গান দিয়ে। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, শুরুতে বাণিজ্যিক গান করার কথা ভাবেননি তিনি। কোভিড চলাকালে ঘরবন্দী সময়ে বাংলা গান নিয়ে কাজ শুরু করেন। গান সুরকরার পাশাপাশি লেখেনও তিনি। ভালোবাসেন এক্সপেরিমেন্ট করতে।
ঢাকা/লিপি