আজ তেলিয়াপাড়া দিবস। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক একটি দিন। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় দেশকে স্বাধীন করার ঐতিহাসিক এক শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এদিন তেলিয়াপাড়া শপথে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উধ্বর্তন কর্মকর্তাসহ ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।  

৪ এপ্রিল মাগরিবের নামাজের পর এমএজি ওসমানী চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোর দোতলায় কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকেই সমগ্র রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করেন জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী।

বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেজর সি আর দত্ত, মেজর কেএম শফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশারফ, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর সাফায়েত জামিল, লে.

কর্নেল আব্দুর রব, এমএনএ লে. কর্নেল সালেহউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, ব্রিগেডিয়ার ভিসি পান্ডে, ক্যাপ্টেন নাসিম, ক্যাপ্টেন আব্দুল মতিন, ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভুইয়া, লেঃ সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, লেঃ হেলাল মোর্শেদ খান, লে. নাসিরউদ্দিন, লে. মাহবুব, লে. আনিস, লে. সেলিম, মোস্তফা আলী এমএনএ, মানিক চৌধুরী এমএনএ, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এমপিএ, মৌলানা আসাদ আলী এমপি।

তেলিয়াপাড়া ম্যানেজার বাংলোকে ৩নং সেক্টরের কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বৈঠক শেষে ওসমানী ও রবের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের নকশা প্রণয়ন এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ করানো হয়।

শপথ বাক্য পাঠ করান এমএজি ওসমানী। ১নং সেক্টরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান, পরে মেজর রফিকুল ইসলাম। ২নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশারফ পরে মেজর হায়দার। ৩নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর কেএম শফিউল্লাহ পরে মেজর নুরুজামান। ৪নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর সি আর  দত্ত। ৫নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী। ৬নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন উইং কমান্ডার আবুল বাশার। ৭নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর কাজী নুরুজামান। ৮নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর ওসমান চৌধুরী পরে মেজর এমএ মনছুর। ৯নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর আব্দুল জলিল এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন এমএ মঞ্জুর। ১০নং সেক্টর নৌবাহিনীর সৈনিকদের দিয়ে গঠন করা হয়। ১১নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু তাহের পরে ফ্লাইট লে. হামিদুল্লাহ।

মুক্তিবাহিনীকে ৩টি ব্রিগেডে ভাগ করে ৩ জনকে পরিচালনা করার দায়িত্ব দেন জেনারেল এমএজি ওসমানী। মেজর জিয়াউর রহমানের নাম অনুসারে জেড ফোর্স জিয়াউর রহমানের দায়িত্বে, মেজর শফিউল্লাহ নাম অনুসারে এস ফোর্স শফিউল্লাহ’র দায়িত্বে এবং মেজর খালেদ মোশারফের নাম অনুসারে কে ফোর্স খালেদ মোশারফের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মাধবপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম জানান- আমাদের গৌরবের স্থানটি সুরক্ষা ও আকর্ষণীয় করে তুলে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানাতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। স্মৃতিস্তম্ভের সংস্কার করাসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (পুরাতন) থেকে চা-বাগানের ভেতর দিয়ে রাস্তা পাকাকরণের কাজ করা হয়েছে।

তেলিয়াপাড়া চা-বাগান কর্তৃপক্ষ জানান, ঐতিহাসিক এ দিনটিকে স্মরণ করতে প্রতি বছরের ৪ এপ্রিল স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় নানা এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এখানে এসে স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শন করে মুগ্ধ হচ্ছেন। চা-বাগানের ভেতরে স্মৃতিস্তম্ভটি অবস্থিত। এর পাশে রয়েছে একটি বিশাল লেক।

ঢাকা/মামুন/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ওসম ন

এছাড়াও পড়ুন:

হিজরতের ৫টি শিক্ষা

সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:

১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালন

হিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)

২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ

হিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।

আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বে

ওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।

৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসা

হিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতা

এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)

এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।

হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।

আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ