Prothomalo:
2025-04-09@03:08:01 GMT

পচবে না কোনো কৃষিপণ্য

Published: 4th, April 2025 GMT

ফলমূল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সীমাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। দ্রুত পচনশীল খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ করতে না পারায় কৃষকেরা কম দামে বিক্রি করে দেন কিংবা ফেলে দিতে বাধ্য হন। এতে তাঁদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়। তবে স্মার্ট ড্রায়ার নামের কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ফল, শাকসবজি, ভেষজ উদ্ভিদ শুকিয়ে সংরক্ষণ করে খাদ্যপণ্যের অপচয় ঠেকানো সম্ভব। সম্প্রতি সে রকম প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেকের দৃষ্টি কেড়েছেন নওগাঁর কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা (৪২)।

শুরুটা সোহেল রানা করেছিলেন কাঁচা ও পাকা আম শুকিয়ে সংরক্ষণের জন্য। পরে এই কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে টমেটো, ফুলকপি, মরিচ, বিটরুট, পরিপক্ব কলা, বরই, অর্জুন বৃক্ষের ছাল, আদা, অ্যালোভেরা, লেবু, নিমপাতা, শজনেপাতা ও পেয়ারাপাতা শুকিয়ে সংরক্ষণ করছেন। এমনকি ফেলনা কলার খোসা পর্যন্ত শুকিয়ে গুঁড়া করে সার হিসেবে বিক্রি করছেন।

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাড়ি নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সদরে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। কৃষিতে বিশেষ অবদান রাখায় ২০২৩ সালে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন সোহেল রানা। এই তরুণের আছে দুটি মিশ্র ফলবাগান ও তিনটি আমের বাগান।

সোহেল রানার স্মার্ট ড্রায়ারের কার্যকারিতা দেখে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত আমের প্রায় ৩০ শতাংশ গাছ থেকে সংগ্রহ করার আগে ও পরে নষ্ট হয়ে যায়। এই ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সীমাবদ্ধতার কারণে এই বিপুল অপচয় হয়। স্মার্ট ড্রায়ার ব্যবহার করে এই অপচয় অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। শুধু আম নয়, স্মার্ট ড্রায়ার ব্যবহার করে অন্যান্য ফল, শাকসবজিসহ মৌসুমের সময় বিভিন্ন কৃষিপণ্য শুকিয়ে সংরক্ষণ করে অপচয় রোধ করা সম্ভব। দীর্ঘ সময় ধরে কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করলে আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া সম্ভব।’

কী এই স্মার্ট ড্রায়ার

খাদ্যপণ্য শুকানোর কাজে বিশেষ ধরনের বদ্ধ ঘরকে বলা হয় স্মার্ট ড্রায়ার হাউস। ঘরটি স্বয়ংক্রিয়, নিজ থেকেই খাদ্যপণ্য শুকানোর কাজ করতে পারে। ঘরের ছাদে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে রাতেও সক্রিয় থাকে ঘরটি।

এই ঘরে দুটি এগজস্ট ফ্যান ব্যবহার করা হয়েছে, যা খাদ্যপণ্য থেকে বের হওয়া পানি দ্রুত বাইরে বের করে দেয় এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ঘরটি ১৪ ফুট দীর্ঘ, প্রস্থে ১১ ফুট, আর উচ্চতা ১০ ফুট। ঘরের ভেতরে তাপ সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে আটটি পাখা ব্যবহার করা হয়েছে। রয়েছে দুটি কুলিং ফ্যান। মোবাইল ফোনে বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। একসঙ্গে প্রায় ৫০০ কেজি খাদ্যপণ্য শুকানো যায় এই ঘরে।

সোহেল রানা জানান, স্মার্ট ড্রায়ারে ভেষজ উদ্ভিদ ও খাদ্যপণ্য শুকাতে ৩০ থেকে ৫০ ঘণ্টা সময় লাগে। প্রাকৃতিকভাবে সূর্যের তাপে খাদ্যপণ্য শুকাতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। আবার প্রাকৃতিকভাবে খোলা আকাশের নিচে খাদ্যপণ্য শুকালে তাতে ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। খাদ্যপণ্যের রংও নষ্ট হয়ে যায়। এতে বাজারজাত করতে সমস্যা হয়। স্মার্ট ড্রায়ারে এই সমস্যাগুলো নেই।

অনলাইনে একটি লেখা পড়ে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারেন সোহেল রানা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশিং অ্যান্ড পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর কাছে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি সোহেল রানার বাগানে ঘর স্থাপনে সহায়তা করেন।

জানতে চাইলে মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, সব কৃষি উদ্যোক্তারই এই আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা উচিত। ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা হলেই ছোট পরিসরে একটি স্মার্ট ড্রায়ার স্থাপন করা সম্ভব। শুকানো খাদ্যপণ্যের মধ্যে পানির পরিমাণ ৩ থেকে ৫ শতাংশ রাখা হয়। পরিপূর্ণভাবে শুকানোর পর খাদ্যপণ্যকে মেকানিক্যাল মিলিং মেশিনে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গুড়ো করা হয়, যাতে পণ্যের পুষ্টিমানের কোন পরিবর্তন না হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিলিং করে উন্নত প্যাকেজিং করে বাজারজাত করা হয়। ফলে খাদ্যপণ্যটি দীর্ঘদিন ভালো থাকে।

সোহেল রানার বাগানে স্থাপিত স্মার্ট ড্রায়ার হাউস। বিশেষ ধরনের বদ্ধ এই ঘরে খাদ্যপণ্য শুকানো হয়। সম্প্রতি নওগাঁর সাপাহারে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ দ যপণ য শ ক ন ব যবহ র কর

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা কে দেবে

সমবায় সমিতির নামে প্রতারণায় কিছু মানুষ বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার বিপরীতে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে সমবায় সমিতি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সাড়া দেওয়ার নজির বিরল। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সমবায় সমিতি করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের অশেষ দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে। মানুষও আস্থা হারাচ্ছে সমবায়ের ওপর।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত রোববার জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে জমা রাখা আমানতের টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকেরা। তাঁরা লাঠি ও ঝাড়ুমিছিল করে থানা চত্বরে অবস্থান নেন এবং কয়েক ঘণ্টার জন্য জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। এর আগে আরও তিন দফা কর্মসূচি পালন করেন। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, রোববারের কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাওয়ার পথে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে একজন নারী মারা গেছেন। দুটি সমিতিতে তিনি প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা রেখেছিলেন। পরিবারটির জন্য এই ক্ষতি অপূরণীয়।

দেখা যাচ্ছে যে এই উপজেলার ২৩টি সমবায় সমিতি ৩৫ হাজার সেবাগ্রহীতার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা নিয়ে দুই বছর ধরে লাপাত্তা হয়েছে। এসব সমিতিতে শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি গৃহকর্মী, ভ্যানচালক, কৃষকেরাও লাভের আশায় টাকা জমা রেখেছিলেন। এখন লাভ তো দূরে থাক, আসল টাকা পাবেন কি না, তার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সমবায় সমিতি আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, সদস্য করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রলোভন দেখানো যাবে না। অথচ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা সংগ্রহ করে সমিতিগুলো।

শুধু জামালপুর নয়, সমবায় সমিতির নামে এ ধরনের প্রতারণা দেশের অন্যত্রও ঘটেছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় ঋণসুবিধা না পাওয়ায় তাঁরা সমবায় সমিতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সংসার খরচের টাকা বাঁচিয়ে একটু একটু করে সঞ্চয় করেন। একবারে টাকাটা পেলে সেটা অনেক কাজেই ব্যবহার করতে পারেন।

আমরা মনে করি, সমবায় সমিতি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সমবায় অধিদপ্তরকে সতর্ক হতে হবে। দেশের প্রায় সব জায়গাতেই ব্যাঙের ছাতার মতো সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে। এসব সমবায় সমিতি যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁদের অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। ফলে তাঁরা খুব সহজেই মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেও পার পেয়ে যান। নিবন্ধন দেওয়ার পরও কোনো সমিতি যাতে আইনের ব্যত্যয় না ঘটাতে পারে, সেটা তদারক করতে হবে। গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব কার?

সম্পর্কিত নিবন্ধ