কামিন্দু মেন্ডিসকে মেগা নিলামে ৭৫ লাখ রুপিতে কেনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আইপিএলের নতুন মৌসুম শুরুর আগে দীর্ঘদিনের প্রেমিকা নিশনিকে বিয়ে করেন শ্রীলঙ্কান এই স্পিন অলরাউন্ডার। পরিকল্পনা ছিল মধুচন্দ্রিমায় (হানিমুন) দেশের বাইরে যাবেন। কিন্তু আইপিএলের ডাক সেটি আর হতে দেয়নি।

শ্রীলঙ্কার পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর হাপুতালেতে সংক্ষিপ্ত আকারেই মধুচন্দ্রিমা সেরে নেন কামিন্দু। তাঁদের বিয়ের পরিকল্পনাকারী পাতুম গুনাবর্ধনার ভাষায়, ‘হাপুতালেতে দুজন সংক্ষিপ্ত মধুচন্দ্রিমা সেরে নিয়েছে। আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে যোগ দেওয়ায় দেশের বাইরে যেতে পারেনি এবং আইপিএলের জন্য সে আগেভাগে অনুশীলন শুরু করবে।’

আরও পড়ুনআইপিএল: ৫ ওভারেই ৪০ ওভারের ম্যাচ জিতে নিল কলকাতা১১ ঘণ্টা আগে

আইপিএল এখন মাঠে। গতকালই অভিষেক হলো কামিন্দুর। দল জিততে পারেনি। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ৮০ রানে হেরেছে হায়দরাবাদ। কিন্তু আইপিএলে ইতিহাস গড়েছেন ২৬ বছর বয়সী কামিন্দু। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আইপিএলে একই ওভারে বোলিংয়ের হাত পাল্টেছেন। শুধু কি তা–ই! নিয়েছেন উইকেটও। অর্থাৎ আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম দুই হাতেই বোলিং করতে পারা বোলার হিসেবে উইকেট নিয়েছেন কামিন্দু।

একটি ওভারই বোলিং করেছেন। সেটা কলকাতার ইনিংসে ১৩তম ওভারে। ওই ওভারের প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ ডেলিভারিটি করেন বাঁ হাতে এবং বাকি তিনটি ডেলিভারি ডান হাতে। চতুর্থ বলে তাঁকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন কলকাতার অংকৃষ রঘুবংশী।

আইপিএলে এর আগে লিয়াম লিভিংস্টোনকে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে অফ স্পিন ও ডানহাতির বিপক্ষে লেগ স্পিন করতে দেখা গেছে। কিন্তু সেটা এক হাতে বোলিং করে। কামিন্দুর মতো দুই হাতে বোলিং করে নয়।

শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব–১৯ দল থেকে উঠে আসা এ বোলার অল্প বয়সেই দুই হাতে বোলিং করে আলোচনায় উঠে আসেন। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৬ অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপেও দুই হাতে বোলিং করেছেন। আন্তর্জাতিক ম্যাচেও তাঁকে দুই হাতে বোলিং করতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুনসিরাজের প্রশংসা করতে গিয়ে কোহলিকে একহাত নিলেন শেবাগ১৩ ঘণ্টা আগে

পাল্লেকেলেতে গত বছর জুলাইয়ে ভারতের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি ম্যাচে সূর্যকুমার যাদব ও ঋষভ পন্তের বিপক্ষে দুই হাতে বোলিং করেন কামিন্দু। জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত ১২টি টেস্ট, ১৯ ওয়ানডে ও ২৩ টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন কামিন্দু। হায়দরাবাদের জয়ে পাঁচে নেমে ২৭ রানের ইনিংস খেলা এই অলরাউন্ডার টেস্টে ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম (১৩ ইনিংস) হিসেবে এক হাজার রান করেছেন।

কামিন্দুর বাঁহাতি স্পিন ডানহাতি স্পিনের চেয়ে ভালো। সম্ভবত এ কারণেই মাত্র এক ওভার বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। কারণ, রঘুবংশী আউট হওয়ার পর ক্রিজে দুজন বাঁহাতি ভেঙ্কটেশ আইয়ার এবং রিংকু সিং ছিলেন।

ওভারের মধ্যে বোলিংয়ের হাত পাল্টানো বৈধ। তবে আম্পায়ার একটু খুঁতখুঁতে হলে প্রতিবার হাত বদলের সময় বোলারকে তা জানানোর জন্য বাধ্য করতে পারেন। কাল কামিন্দুর ক্ষেত্রে অবশ্য তা দেখা যায়নি। কারণটা সম্ভবত আম্পায়ার জানতেন কামিন্দু কার বিপক্ষে কোন হাতে বোলিং করবেন এবং এই বোলার সাধারণত এটাই করেন—ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বাঁহাতি স্পিন ও বাঁহাতির বিপক্ষে ডান হাতের স্পিন।

মজার ব্যাপার হলো, কামিন্দু কাল এমন এক দলের বিপক্ষে দুই হাতে বোলিং করলেন, যারা নিজেরাই একসময় দুই হাতে বোলিং করতে পারা বোলার খুঁজেছে। ২০০৯ সালে কলকাতার তখনকার কোচ জন বুকানন এমন দুজন বোলারকে ৪৫ জনের সম্ভাব্য দলে রেখেছিলেন। একজন স্পিনার, অন্যজন ছিলেন পেসার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কামিন্দুর আগে দুই হাতে বল করা বোলারও শ্রীলঙ্কান—হাশান তিলকরত্নে, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে। বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের সাবেক প্রধান কোচ তিলকরত্নের আগে পাকিস্তান কিংবদন্তি হানিফ মোহাম্মদ দুই হাতে বোলিং করেছেন। এই ডানহাতি ‘পার্ট টাইম’ অফ স্পিনার ১৯৫৮ সালে কিংস্টন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাঁ হাতেও স্পিন বোলিং করেন। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি গ্যারি সোবার্স সে টেস্টে ৩৬৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। সোবার্সের ৩৬৫তম রান নেওয়ার ডেলিভারিটি বাঁ হাতে করেছিলেন হানিফ মোহাম্মদ। ১৯৯৪ সালে ব্রায়ান লারা ৩৭৫ করার আগে সোবার্সের ইনিংসটিই ছিল টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ য়দর ব দ কর ছ ন কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলবেন কি এটা কোন ‘জাস্টিস’

২২ এপ্রিল যশোরে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ‘মব জাস্টিস আর অ্যালাউ (অনুমোদন) করা যাবে না’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম, দেরিতে হলেও সরকারের হুঁশ ফিরে এসেছে এবং মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে তারা   কঠোর অবস্থান নেবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যাকে ‘মব জাস্টিস’ বলছেন, সেটা আসলে মব ভায়োলেন্স। রাস্তাঘাটে ঘরে বাইরে কোনো অজুহাত পেলেই একধরনের মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী, দুর্বলের ওপর সবলের সহিংসতা। কবি যেমন বলেছেন, বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে কিন্তু মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত মানুষগুলো এতটাই অসহায় যে থানা পুলিশ কিংবা আদালতেও যেতে ভয় পান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই ঘোষণার পরও মব ভায়োলেন্স বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন স্থানে নারী ও সংখ্যালঘুরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সেদিন দেখলাম, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একদল লোক বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে হেনস্তা করছেন এবং তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারতেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেই সভায় যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলেছেন, সেটি হলো ১৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল ছেড়ে দিয়ে ৫০০ বোতল ‘রিকভার’ (উদ্ধার) দেখানো। কারা দেখাচ্ছেন? কারা মাদকদ্রব্য উদ্ধার করছেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কেউ পুলিশের লোক, কেউবা র‍্যাবের।

আওয়ামী লীগ সরকার মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখিয়েছিল, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বহু মানুষ হত্যা করেছিল। কিন্তু তারপরও দেশ মাদক ও সন্ত্রাসের নিরাপদ ভূমি হওয়ার কারণ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই বক্তব্য। তাঁরা ১৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল ছেড়ে দিয়ে ৫০০ বোতল ধরেছেন। অর্থাৎ ৩০ ভাগের একভাগ ধরেছেন, ২৯ ভাগই বাজারজাত হয়েছে।

গত সোমবার বরিশালের আগৈলঝাড়ায় র‍্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় সিয়াম মোল্লা নামে কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। তার আহত রাকিব মোল্লা এখন বরিশালে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। র‍্যাবের দাবি অনুযায়ী তাঁরা নাকি দুর্ধর্ষ মাদকব্যবসায়ী। র‍্যাব সদস্যরা যেই মাদকবিরোধী অভিযানে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, অমনি তাদের ওপর হামলা করেছেন ওই দুই শিশু কিশোর। তারা শিশু কিশোরই।

জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী নিহত সিয়ামের জন্ম ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন ২১ এপ্রিল তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর ১ মাস ২৮ দিন। আর রাকিবের জন্ম ২০০৭ সালের ১ আগস্ট। সেই হিসাবে তার বয়স ১৭ বছর ৮ মাস ২০ দিন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দুজনই শিশু-কিশোর।

অবশ্য র‍্যাব অভিযানের ‘ন্যায্যতা’ প্রমাণ করতে নিহত সিয়াম মোল্লার বয়স ২২ ও আহত রাকিব মোল্লার বয়স ২১ বছর বলে উল্লেখ করেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, ওই দুই শিক্ষার্থী মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকাসক্ত ছিল না।

হত্যার প্রতিবাদে উজিরপুরের সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা। নিহত সিয়াম এই বিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পাস করে একই এলাকার আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর রাকিব মোল্লা এ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

সিয়াম মাদক ব্যবসা করত কি করত না, সেটি প্রমাণের পথ র‍্যাবই বন্ধ করে দিয়েছে। মৃত মানুষ তো আর সাক্ষ্য দিতে পারবে না। র‍্যাবের দাবি যদি সত্যও ধরে নেওয়া হয়, তাহলেও কি কলেজ পড়ুয়াকে এক কিশোরকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা যায়? সিয়ামের মৃত্যুর পর তার বাবা  রিপন মোল্লা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা কী করবেন? আমার পোলারে ফিরাইয়্যা দেতে পারবেন? লেইখ্যা কী অইবে, আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম।’

র‍্যাবের দাবি, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার জন্য র‍্যাব সদস্যরা অভিযানে গেলে সেখানে মাদক ব্যবসায়ী ১০-১১ জন মিলে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এরপর আত্মরক্ষার্থে র‍্যাব সদস্যরা গুলি করতে বাধ্য হন। তাদের এ সাফাই বক্তব্য আওয়ামী লীগ আমলে বন্দুকযুদ্ধে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার কথাই মনে করিয়ে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে র‍্যাব ও পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করার কথা বলে বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারাকে জায়েজ করতে চায়।

গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলেও কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সেই একই আত্মরক্ষার্থে গুলি কিংবা বন্দুকযুদ্ধের বয়ান দেওয়া হয়।  

পুলিশের ভাষ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়ায় সাদাপোশাকে র‍্যাব-৮-এর মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে সিয়াম মোল্লা নিহত হয়। তাঁর খালাতো ভাই আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই মারা গেছে। এতে যতটা না কষ্ট পাচ্ছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি, তাদের দুজনকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দেওয়ায়। দয়া করে এটি আপনারা গণমাধ্যমে তুলে ধরুন। তারা শিশু-কিশোর, মাদকাসক্ত ছিল না।’

র‍্যাবের অভিযানে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত ও এক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে উজিরপুর উপজেলার সাহেবেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে

সম্পর্কিত নিবন্ধ