প্রতি বৎসর ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর যেই ‘রেকর্ড’ সৃষ্টি হয়, উহা উদ্বেগজনক। ঈদুল ফিতরের ছুটির কয়েক দিনে অন্তত অর্ধশত প্রাণহানির খবর সংবাদমাধ্যমে আসিয়াছে। সর্বাপেক্ষা ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে; লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় পরপর তিন দিন দুর্ঘটনায় ১৫ প্রাণ ঝরিয়া গিয়াছে। স্থানটি ছয় কারণে মৃত্যুকূপ হইয়া উঠিয়াছে বলিয়া সমকালের প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে। আমরা বিস্মিত, উক্ত এলাকায় বারংবার দুর্ঘটনা ঘটার পরও সতর্কতা কিংবা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই!
দেশে স্বাভাবিক সময়েই সড়কে অনেক প্রাণ ঝরিয়া থাকে। ঈদের সময় যাতায়াত বৃদ্ধির কারণে দুর্ঘটনাও সমগতিতে বৃদ্ধি পায়। তবে প্রতি বৎসর রাজধানী কিংবা অন্যান্য শহর হইতে ঈদযাত্রায় যেই ভোগান্তি আমরা দেখিয়া আসিয়াছি, সেইদিক হইতে এইবার ঈদযাত্রা ছিল বহুলাংশে স্বস্তিদায়ক। তজ্জন্য সড়ক দুর্ঘটনাও নিয়ন্ত্রণে আসিবে বলিয়া আমাদের প্রত্যাশা থাকিলেও পূর্বের ন্যায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ভয়ানক চিত্রই দেখা গিয়াছে। সড়ক দুর্ঘটনায় যেই হারে মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়াছে, তাহাতে ইহা জাতীয় দুর্যোগে রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে।
বেসরকারি সংস্থা যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, ঈদের সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অধিক প্রাণহানি ঘটিয়া থাকে। যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত গতি, সড়কে অযান্ত্রিক যানের বেপরোয়া চলাচল, চালক-যাত্রীদের বেখেয়ালিপনার কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়া থাকে। অর্থাৎ ঘুরিয়া-ফিরিয়া স্বাভাবিক কারণগুলিই ঈদের সময় আরও অস্বাভাবিক ও বৃহদাকারে দৃষ্টিগোচর হয়। আমরা মনে করি, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া সনদপ্রাপ্ত চালক ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করা জরুরি। কিন্তু এই সকল ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ অপর্যাপ্ত। অনেক সময় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হয় না। আমরা জানি, সড়ক দুর্ঘটনায় মামলার সংখ্যা অত্যন্ত কম। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাহারা দুর্ঘটনার শিকার হন, তাহারা আদালতের দ্বারস্থ হন না। আবার আদালতের শরণাপন্ন হইলেও মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সংখ্যা অপ্রতুল। আদালতের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকেই এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট হইতে অনিচ্ছুক।
স্মরণে রাখিতে হইবে, সড়ক দুর্ঘটনার রাশ টানিবার বিকল্প নাই। ভুয়া চালক সনদ বন্ধ ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন। এইখানে প্রশাসন যদ্রূপ তদারকির প্রশ্নে সচেষ্ট থাকিবে, তদ্রূপ চালক নিয়োগদানেও মালিকদের সতর্কতা প্রয়োজন। যাত্রীদের সচেতনতাও কম গুরুত্বপূর্ণ নহে। তবে সর্বাধিক দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখিবেন গাড়িচালক। শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকই যেন সনদ পান, উহা নিশ্চিতকরণে বিআরটিএর যথাযথ ভূমিকা জরুরি।
একই সঙ্গে সড়কের প্রশস্ততাও কম গুরুত্বপূর্ণ নহে। এইবারের ঈদে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বারংবার যে দুর্ঘটনা ঘটিতেছে, তাহার অন্যতম কারণ সড়কটি দুই লেনের। ঐ সড়কে দ্রুতগতির ট্যুরিস্ট বাস ও অন্যান্য প্রাইভেট পরিবহন যদ্রূপ চলাচল করে, তদ্রূপ ইজিবাইক, অটোরিকশা এবং লবণবাহী ট্রাকও রহিয়াছে। সড়কটিকে চার লেন করিবার দাবি দীর্ঘ কালের। সেইখানে দুর্ঘটনা রোধে বিষয়টি বিবেচনায় লওয়া জরুরি। উক্ত সড়কের সরু অংশসহ দুর্ঘটনাপ্রবণ অংশে চালকদের অতি সতর্কতা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে প্রশাসনেরও তৎপরতা ও নজরদারি বৃদ্ধি করা আবশ্যক।
আমরা বিশ্বাস করি, প্রশাসনের তৎপরতার কারণেই ঈদের পূর্বে অপেক্ষাকৃত কম দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে। ঈদের পূর্বে কর্তৃপক্ষ যতটা দায়িত্ব পালন করিয়া থাকে, পরে ততটা না থাকায় দুর্ঘটনাও বৃদ্ধি পাইয়াছে। একটি দুর্ঘটনা অনন্ত কান্নার কারণ হইতে পারে। ইহার প্রতিকারে সতর্কতাই ব্যক্তির সুরক্ষাকবচ। ঈদের ন্যায় আনন্দদায়ক উপলক্ষ যেন দায়িত্বহীন আচরণের কারণে বেদনায় রূপান্তরিত না হয়, এই ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট হইতে হইবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
সহজ-সরল পাত্রী, বিয়ে করতে এসে পাত্র দেখলেন উল্টো চিত্র
ঈদ উৎসব পেরিয়ে এবার আসছে অন্য এক প্রেমের নাটক ‘মেঘের বৃষ্টি’। যে গল্পে ফারহান আহমেদ জোভানকে দেখা যাবে আমেরিকা প্রবাসী এক যুবকের চরিত্রে। অন্যদিকে নাজনীন নীহাকে দেখা যাবে ঢাকা মেডিকেলের শিক্ষার্থী হিসেবে।
গল্পের শুরুতে দেখা যাবে, আমেরিকা থেকে দেশে এসে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছে মেঘ। তার মা তাকে প্রতিবারই দেশ থেকে কিছু পাঠালে মেয়েদের ছবি এবং নিজ হাতে তাদের বৃত্তান্ত লিখে পাঠায়। অনিচ্ছাতেও সেখান থেকে মেঘ একটা খাম খোলে। যার নাম ঋতু। তার জীবনবৃত্তান্তে মা লিখেছেন, ‘মেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ে। খুবই নরম স্বভাবের মেয়ে। সাধারণত বোরকা-হিজাব ছাড়া বাসা থেকে বের হয় না। নামাজি, কম কথা বলে। আমার ধারণা এ মেয়ে তোরে জ্বালাবে না, তোর মুখের ওপর কথা বলবে না। তোর কথায় উঠবস করবে। শুধু একটাই সমস্যা, মেয়ের কোনও ভাই-বোন নাই। তার মানে তুই শালা-শালীর সাথে মজা করার সুযোগ পাবি না। অবশ্য সবকিছু একসাথে পাওয়া যায় না। মেয়ের রেটিং ১০-এর মধ্যে ১০।’
মায়ের বর্না নয়, বরং ঋতুর ছবি এক দেখাতেই পছন্দ হয় মেঘের। সে সিদ্ধান্ত নেয় দেশে গিয়ে এই মেয়েকেই বিয়ে করবে। তার কিছুদিনপরই সে দেশে আসে এবং ঋতুর সাথে দেখা করে। কিন্তু তার মা জীবনবৃত্তান্তে যা বলেছে, ঋতু তার উল্টো!
এখানে মেঘ চরিত্রে জোভান আর ঋতু চরিত্রে নীহা অভিনয় করেছেন। ইমদাদ বাবুর গল্প ও চিত্রনাট্যে সিএমভি’র ব্যানারে নাটকটি বানিয়েছেন মাসরিকুল আলম।
নির্মাতা জানান, এটা দুর্দান্ত একটি প্রেমের গল্প। তবে তাতে রয়েছে বিরহের স্বাদও।
প্রযোজক এসকে সাহেদ আলী পাপ্পু জানান, ঈদ উৎসবে টানা ১৪টি বিশেষ নাটক মুক্তি পেয়েছে সিএমভির ইউটিউব চ্যানেলে। সেসব থেকে দারুণ সাড়া মিলছে এখনও। তবে ঈদ উৎসবের আমেজ পেরিয়ে ফের প্রতিষ্ঠানটি শুরু করছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। তারেই শুরুটা হচ্ছে ‘মেঘের বৃষ্টি’ দিয়ে। এটি দ্রুতই মুক্তি পাবে প্রতিষ্ঠানটির ইউটিউব চ্যানেলে।