থাইল্যান্ড ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে’র সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। 

বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) ব্যাংককে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) সম্মেলন উপলক্ষে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টা। 

সফরের প্রথমদিন বৃহস্পতিবার সম্মেলনের ইয়ুথ কনফারেন্সে যোগ দেন তিনি। সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার তিনি সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। এছাড়া, সাইডলাইনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তার। ওই সময়ই থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে’র সঙ্গে বৈঠক হতে পারে।

এদিকে, সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শুক্রবার ব্যাংকক সময় বিকেল পৌন ৪টায় বৈঠক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

তৃতীয় দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী ২ বছরের জন্য বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেবে বাংলাদেশ।

ব্যাংককে ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “বিমসটেক বে অব বেঙ্গলকে ঘিরে একটা রিজনাল গ্রুপ। এই গ্রুপের যথেষ্ট পটেনশিয়ালিটি আছে। সেই পটেনশিয়ালিটিটা আমরা আসলে অর্জন করতে পারিনি। প্রফেসর ইউনূস এটার ওপর আরো জোর দেবেন।”

“তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার পর থেকেই বলেছেন যে, আমাদের আশপাশে যে সার্ক আছে, বিমসটেক আছে, সেগুলোকে যে কোনোভাবেই হোক আরো সক্রিয় করতে হবে। যাতে করে বাংলাদেশ তার রিজনাল কোঅপারেশন ফ্রেমে তার কথাগুলো বলতে পারে। তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পিপল টু পিপল কো-অপারেশনগুলো আরো দৃঢ় হয়। এই জায়গা প্রফেসর ইউনূসের একটা স্পষ্ট পলিসি আছে।” 

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামনে সুসম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “ইউএসের পক্ষ থেকে বিগিনিং অব কনভেন্সেশনে আমরা এটা যাচাই-বাছাই করছি, যার কারণে আমরা এমনভাবে মুভ নিচ্ছি। আমরা মনে করি, ইউএসের সঙ্গে সামনে সুসম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। আমরা এ বিষয় নিয়ে এমন একটা সলিউশনে যাব, যাতে দু’পক্ষের জন্য উইন উইন হয়। আমরা আশাবাদী, যা হবে তা দু’পক্ষের জন্য মঙ্গলজনক হবে।”

ঢাকা/হাসান/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব মসট ক

এছাড়াও পড়ুন:

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলবেন কি এটা কোন ‘জাস্টিস’

২২ এপ্রিল যশোরে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ‘মব জাস্টিস আর অ্যালাউ (অনুমোদন) করা যাবে না’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম, দেরিতে হলেও সরকারের হুঁশ ফিরে এসেছে এবং মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে তারা   কঠোর অবস্থান নেবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যাকে ‘মব জাস্টিস’ বলছেন, সেটা আসলে মব ভায়োলেন্স। রাস্তাঘাটে ঘরে বাইরে কোনো অজুহাত পেলেই একধরনের মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী, দুর্বলের ওপর সবলের সহিংসতা। কবি যেমন বলেছেন, বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে কিন্তু মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত মানুষগুলো এতটাই অসহায় যে থানা পুলিশ কিংবা আদালতেও যেতে ভয় পান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই ঘোষণার পরও মব ভায়োলেন্স বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন স্থানে নারী ও সংখ্যালঘুরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সেদিন দেখলাম, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একদল লোক বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে হেনস্তা করছেন এবং তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারতেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেই সভায় যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলেছেন, সেটি হলো ১৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল ছেড়ে দিয়ে ৫০০ বোতল ‘রিকভার’ (উদ্ধার) দেখানো। কারা দেখাচ্ছেন? কারা মাদকদ্রব্য উদ্ধার করছেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কেউ পুলিশের লোক, কেউবা র‍্যাবের।

আওয়ামী লীগ সরকার মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখিয়েছিল, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বহু মানুষ হত্যা করেছিল। কিন্তু তারপরও দেশ মাদক ও সন্ত্রাসের নিরাপদ ভূমি হওয়ার কারণ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই বক্তব্য। তাঁরা ১৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল ছেড়ে দিয়ে ৫০০ বোতল ধরেছেন। অর্থাৎ ৩০ ভাগের একভাগ ধরেছেন, ২৯ ভাগই বাজারজাত হয়েছে।

গত সোমবার বরিশালের আগৈলঝাড়ায় র‍্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় সিয়াম মোল্লা নামে কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। তার আহত রাকিব মোল্লা এখন বরিশালে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। র‍্যাবের দাবি অনুযায়ী তাঁরা নাকি দুর্ধর্ষ মাদকব্যবসায়ী। র‍্যাব সদস্যরা যেই মাদকবিরোধী অভিযানে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, অমনি তাদের ওপর হামলা করেছেন ওই দুই শিশু কিশোর। তারা শিশু কিশোরই।

জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী নিহত সিয়ামের জন্ম ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন ২১ এপ্রিল তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর ১ মাস ২৮ দিন। আর রাকিবের জন্ম ২০০৭ সালের ১ আগস্ট। সেই হিসাবে তার বয়স ১৭ বছর ৮ মাস ২০ দিন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দুজনই শিশু-কিশোর।

অবশ্য র‍্যাব অভিযানের ‘ন্যায্যতা’ প্রমাণ করতে নিহত সিয়াম মোল্লার বয়স ২২ ও আহত রাকিব মোল্লার বয়স ২১ বছর বলে উল্লেখ করেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, ওই দুই শিক্ষার্থী মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকাসক্ত ছিল না।

হত্যার প্রতিবাদে উজিরপুরের সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা। নিহত সিয়াম এই বিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পাস করে একই এলাকার আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর রাকিব মোল্লা এ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

সিয়াম মাদক ব্যবসা করত কি করত না, সেটি প্রমাণের পথ র‍্যাবই বন্ধ করে দিয়েছে। মৃত মানুষ তো আর সাক্ষ্য দিতে পারবে না। র‍্যাবের দাবি যদি সত্যও ধরে নেওয়া হয়, তাহলেও কি কলেজ পড়ুয়াকে এক কিশোরকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা যায়? সিয়ামের মৃত্যুর পর তার বাবা  রিপন মোল্লা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা কী করবেন? আমার পোলারে ফিরাইয়্যা দেতে পারবেন? লেইখ্যা কী অইবে, আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম।’

র‍্যাবের দাবি, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার জন্য র‍্যাব সদস্যরা অভিযানে গেলে সেখানে মাদক ব্যবসায়ী ১০-১১ জন মিলে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এরপর আত্মরক্ষার্থে র‍্যাব সদস্যরা গুলি করতে বাধ্য হন। তাদের এ সাফাই বক্তব্য আওয়ামী লীগ আমলে বন্দুকযুদ্ধে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার কথাই মনে করিয়ে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে র‍্যাব ও পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করার কথা বলে বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারাকে জায়েজ করতে চায়।

গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলেও কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সেই একই আত্মরক্ষার্থে গুলি কিংবা বন্দুকযুদ্ধের বয়ান দেওয়া হয়।  

পুলিশের ভাষ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়ায় সাদাপোশাকে র‍্যাব-৮-এর মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে সিয়াম মোল্লা নিহত হয়। তাঁর খালাতো ভাই আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই মারা গেছে। এতে যতটা না কষ্ট পাচ্ছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি, তাদের দুজনকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দেওয়ায়। দয়া করে এটি আপনারা গণমাধ্যমে তুলে ধরুন। তারা শিশু-কিশোর, মাদকাসক্ত ছিল না।’

র‍্যাবের অভিযানে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত ও এক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে উজিরপুর উপজেলার সাহেবেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে

সম্পর্কিত নিবন্ধ