Samakal:
2025-04-24@18:21:20 GMT

ধ্বংসস্তূপে বাঁচার আকুতি 

Published: 4th, April 2025 GMT

ধ্বংসস্তূপে বাঁচার আকুতি 

ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছিলেন ৪১ বছর বয়সী নারী নান সিন হেইন। ২১ বছর বয়সী ছেলেকে বাঁচাতে পাঁচ দিন ধরে ধসে পড়া ভবনের সামনে সাহায্যের আশায় বসে আছেন তিনি। যদিও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভবনটিতে শুরু হয়নি উদ্ধারকাজ। হেইনের ভাষ্য, আমি বিশ্বাস করি আমার সন্তান বেঁচে আছে। যদিও এটা সত্য যে, ওর বেঁচে থাকার আশা খুবই কম। কিন্তু আজকের মধ্যে যদি উদ্ধার করা যায়, আমি হয়তো ওকে জীবিত ফিরে পাব। 

শুধু হেইন নয়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে পুরো মান্দালয় শহরে ধ্বংসস্তূপ থেকে এমনভাবে উদ্ধারের আকুতি জানানো হচ্ছে। ভূমিকম্পবিধ্বস্ত মিয়ানমারে পর্যাপ্ত উদ্ধার তৎপরতার অভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েও মৃত্যু এড়াতে পারছেন না আটকে পড়া মানুষ। অপ্রতুল সাহায্যে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে আহতদের। বাসস্থান, চিকিৎসা সামগ্রীর সঙ্গে অনেক এলাকায় যুক্ত হয়েছে খাদ্য ও নিরাপদ পানির অভাব। 

বিবিসি জানিয়েছে, ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে মান্দালয় শহরের উত্তর ও মধ্যাংশের প্রতিটি রাস্তায় কমপক্ষে একটি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি ভবনের দেয়ালে গভীর ফাটল দেখা গেছে। শহরের প্রধান হাসপাতালের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় গুরুতর আহত রোগীদেরও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। 

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৫ জনে। ভূমিকম্পের আগেও রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল মিয়ানমারে। ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানালেও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে থাকায় সাহায্য আসতে সময় লেগেছে। বাংলাদেশ, ভারত, চীন এবং রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ সহায়তা করলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল। 

আধুনিক প্রযুক্তি ও লোকবল সীমিত হওয়ায় চলমান উদ্ধারকাজে বিপুলসংখ্যক লোক আটকা পড়া জায়গাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যেমন মান্দালয়ের স্কাই ভিলা কনডোমিনিয়াম কমপ্লেক্স এবং উ হ্লা থেইন বৌদ্ধ বিহার। সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে ভারতীয় উদ্ধারকারী দলের নেতা নীরাজ সিং জানিয়েছেন, বৌদ্ধ একাডেমি ‘প্যানকেকের মতো’ এক স্তরের ওপর আরেক স্তর পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাঁর মতে, এখানে জীবিতদের পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। 

মিয়ানমারের সামরিক সরকার বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৫ জনে পৌঁছেছে, আহত ৪ হাজার ৭১৫ জন এবং এখনও নিখোঁজ ৩৪১ জন। তবে উদ্ধারকারীরা এখনও অনেক স্থানে পৌঁছাতে না পারায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।

মিয়ানমারে এই ধ্বংসযজ্ঞের ওপর নতুন বিপর্যয় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে ভূমিকম্পের আফটার শক। ভূমিকম্প-পরবর্তী গত পাঁচ দিনে প্রায় ৭০ বার আফটার শকের তথ্য দিয়েছে দেশটির মেটিওরোলজি এবং হাইড্রোলজি বিভাগ। এখন পর্যন্ত হওয়া এসব আফটার শকের রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ২.

৮ থেকে ৭.৫। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কাজ করছে উদ্ধারকারী ও মেডিকেল দল
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বাংলাদেশের উদ্ধারকারী ও মেডিকেল দলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল দেশটির রাজধানী নেপিদোতে জুবু থিরি টাউনশিপ এবং নেপিদো এলাকার কয়েকটি ভবনে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

আইএসপিআর জানায়, অভিযানে মিয়ানমারের স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস বিভাগ সর্বাত্মক সহায়তা করছে। এ ছাড়া, উদ্ধারকারী দলের জন্য খাদ্য ও পানি সরবরাহ করে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন মিয়ানমারের স্থানীয় লোকজন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ভ ম কম প র

এছাড়াও পড়ুন:

‘সবচেয়ে বড় প্রেরণা বাবা’

শৈশবের প্রিয় মুহূর্ত 
শৈশবের সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত কেটেছে আমার বাবার সঙ্গে। তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন। আমার বাবাকে এখনও মনে করি তিনি পৃথিবীর সেরা শ্রেষ্ঠ মানুষ। হাত ধরে বাজারে যাওয়া, কোথাও বের হওয়া, তাঁর সঙ্গে সময় কাটানো সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত। বাবা আমার একজন আইডল ছিলেন। বাবার মতো হওয়ার জন্য ভাই-বোনদের মধ্যে তাঁর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেছি। তিনি আমাকে সবখানে নিয়ে যেতেন। তাঁর সঙ্গে সময় কাটানোটাই ছিল জীবনের সেরা সময়।
যখন আপনি নবীন লেখক
বাবা মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন। বিভিন্ন রিহার্সাল বা নাটক দেখানোর জন্য আমাকে নিয়ে যেতেন। তবে পরিবারের কেউ লেখালেখি করতেন না। বাবা প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারের পত্রিকা কিনতেন। সাহিত্য পাতার বিভিন্ন গল্প-কবিতা পড়তেন। বিশিষ্ট লেখকদের গল্প আমাকে শোনাতেন। আমার কাছে মনে হলো, আমি বাবাকে শ্রদ্ধা করি। বাবা তাদের শ্রদ্ধা করেন। লেখালেখি করতে হবে, আমাকে লেখক হতে হবে। সে সময় আমাদের সৈয়দপুরে ‘বার ওয়েল’ নামে রেলওয়ের একটা সংগঠন ছিল। তখন আমি কলেজে পড়ি। সেখানে নোটিশ বোর্ডে দেখলাম, নবারুণের জন্য নতুনদের কাছ থেকে লেখা আহ্বান। গল্পের কোনো কিছু বুঝি না। সত্য বলতে গল্পের প্যারা, দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন এসব কিছুই বুঝতাম না। তবুও একটি গল্প সেখানে পাঠিয়ে দিই। তখন  তো টেলিফোন বা যোগাযোগ তেমন ছিল না। আলম ভাই নামে একজন আমার বাসায় আসেন। তিনি আবার বাবার ছাত্র ছিলেন। তাঁকে দেখেই বাবা চিনতে পারেন। কী অবস্থা জানতে চান। তখন আলম ভাই জানান, রেজানুর গল্প দিয়েছে, ওর সঙ্গে কথা আছে। তারপর আমাকে পরের দিন যেতে বলেন তাঁর কাছে। পরে তিনি গল্প ধরে ধরে পুরো বোঝালেন। গল্প সম্পর্কে একটা প্রশিক্ষণ দিলেন আর কি; যা পরবর্তী জীবনে বেশ কাজে আসে। কীভাবে গল্পের প্যারা, দাঁড়ি বা অন্যান্য সেসব বুঝিয়ে বললেন। গল্পটির নাম ছিল ‘ক্ষুদার জ্বালা’। পরবর্তী সময়ে সেই গল্পটি যখন ছাপা হলো, তখন অন্যরকম  অনুভূতি কম্পিত হয়। যে পছন্দ করে তাকেও দেখাই, যে অপছন্দ করে তাকেও দেখাই। 
প্রথম নাটক যেভাবে লেখা হয়
ঢাবিতে পড়ার সময় আমার ইচ্ছে হলো নাটক লিখব। একদিন বিটিভিতে আতিকুল হক চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে চলে যাই। পরে সেখানে আমার নাটক লেখার অনুভূতির কথা জানাই। তাঁকে নাটকের স্ক্রিপ্ট দিই। তিনি পরে জানাবেন বলে রেখে দেন। দুই মাস যায় কোনো খোঁজ পাই না। তখন আবার তাঁর কাছে চলে যাই। তিনি জানান, লেখা আরও ঠিকঠাক করতে হবে। এক পর্যায়ে সব ঠিক হয়ে যায়, তিনি পছন্দ করেন। নাটকের রিহার্সাল শুরু হয়। এক পর্যায়ে শুটিং শেষ হয়। পরে আতিকুল হক চৌধুরী জানান, নাটক অমুক দিন প্রচার হবে। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে বলেছি।  দুঃখের কাহিনি হলো, যেদিন প্রচার হওয়ার কথা, সেদিন আর নাটক প্রচারিত হলো না। সবাই তো আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাবা শুরু করল। এক পর্যায়ে আতিকুল হক চৌধুরী চিঠির মাধ্যমে আমাকে খোঁজ করেন। আমি দেখা করি। পরে তিনি সান্ত্বনা দেন। শিডিউল জটিলতার জন্য প্রচার হয়নি। নেক্সটে প্রচার করা হবে। পরে সত্যি সত্যি প্রচার হলো। যখন নাম ঘোষণা হলো রেজানুর রহমানের গল্প অবলম্বনে আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় নাটক। শোনার পর শরীর দিয়ে ঘাম বেরিয়ে গেল। 
প্রিয় লেখক যারা 
আমার প্রিয় লেখক হলেন শওকত আলী। ‘উত্তরের খেপ’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছেন। ঢাকা থেকে ট্রাক নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে যাচ্ছে একজন ড্রাইভার। পথের মধ্যে যত কথাবার্তা, চোখের সামনে এখনও সেসব ভাসে। তাঁর লেখা আমাকে বেশ অনুপ্রেরিত করেছে। তরুণ বয়সে আরেকজনের লেখা আমার বেশ ভালো লেগেছিল। তরুণ বয়সে ভীষণ উন্মাদনা ছিল। ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস আমার বেশ ভালো লেগেছে। সবচেয়ে যে বিষয়টি ভালো লাগত, তিনি তরুণদের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটি বুঝতেন। লেখালেখির জায়গায় বেশি উৎসাহিত করেছেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদের লেখাও আমাকে বেশ উৎসাহিত করেছে। তাঁর সঙ্গে অনেক স্মৃতি রয়েছে। 
এখন যা লিখছি, পড়ছি
ছোটবেলা থেকে শুরু করে, বেড়ে ওঠা পর্যন্ত এই সময়ে। একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে বড় উপন্যাস লেখার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এই লেখাটি শুরু করেছি। যখনই সময় পাই বই নিয়ে বসে যাই। পড়া শুরু করি। পড়ার কোনো বিকল্প নেই। তবে এখন পড়াশোনা কমে গেছে। আশা করি সেসব কেটে যাবে খুব শিগগিরই। 
প্রিয় উদ্ধৃতি
আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা আমার বাবা। তাঁর প্রতিটি কথাই যেন আমার প্রিয় উদ্ধৃতি। তিনি বলতেন, ‘সৎ হও, সততাই শক্তি। তুমি সৎ থাক, কেউ কোনোদিন তোমার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারবে না। তুমি বিপদে পড়বে না।’ v

lগ্রন্থনা :: ফরিদুল ইসলাম নির্জন

সম্পর্কিত নিবন্ধ